আজ- বৃহস্পতিবার | ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫
৯ মাঘ, ১৪৩১ | রাত ৮:২৬
২৩ জানুয়ারি, ২০২৫
৯ মাঘ, ১৪৩১
২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ৯ মাঘ, ১৪৩১

দু’যুবককে মালয়েশিয়ায় আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার হযরত আলী(৩২) ও সখীপুর উপজেলার শাপলু মিয়াকে(৩৫) মালয়েশিয়ায় আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করেছে দালালচক্র। অন্যথায় মেরে ফেলার হুমকিতে ওই দু’পরিবারে চলছে আহাজারি।
জানাগেছে, অভাব-অনটনকে জয় করতে প্রায় তিন মাস আগে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান বাসাইলের হযরত আলী ও সখীপুরের শাপলু মিয়া। হযরত আলী বাসাইল উপজেলার সুন্না গ্রামের আব্দুল কাদের মিয়ার ছেলে ও শাপলু সখীপুর উপজেলার কাঙ্গালীরছেও গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।
সখীপুর উপজেলার বেরবাড়ি গ্রামের মিজান মিয়া ও বাসাইল উপজেলার সুন্না গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে আলম মিয়া মালয়েশিয়া নেয়ার জন্য হযরত আলীর কাছে থেকে নগদ সাড়ে ৩ লাখ ও শাপলুর কাছে থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার শর্তে নগদ দেড় লাখ টাকা নেয়।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তাদের দু’জনকে মালয়েশিয়া নেয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের করে নেয়া হয়। বিমানবন্দরে গিয়ে হযরত আলী পরিবারের কাছে ফোন করে বলে কিছুক্ষণের মধ্যে বিমান ছাড়বে, তোমরা ভাল থেকো। প্রায় ১৫দিন পর অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন করে জানায় হযরত আলী জেলে রয়েছে। একই কায়দায় শাপলুর পরিবারের কাছে জেলহাজতে থাকার কথা বলে টাকা দাবি করে। এরপর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দালালকে অবহিত করলে দালালরা হযরতকে বের করতে ৮০হাজার টাকা দাবি করে। দালালরা বাকি থাকা টাকা দাবি করে শাপলুর কাছে। শাপলুর পরিবার ঋণ করে বাকি টাকা পরিশোধ করেন। টাকা পাওয়ার পরেও দালালচক্রের সদস্য মিজান ও আলম তাদেরকে ছেড়ে দেয়নি। দালালরা শাপলু ও হযরতকে ছেড়ে দেয়ার কয়েকটি তারিখও দেয়। কিন্তু তারপরও ছেড়ে দেয়না তাদের। দালালরা শাপলুকে ছেড়ে দেয়ার বিভিন্ন তারিখ দেয়ার কারণে তার পরিবার এখনো পুলিশের দ্বারস্থ হয়নি। কিন্তু হযরতের পরিবার বাসাইল থানায় সাধারণ ডায়েরি ও টাঙ্গাইল র‌্যাব অফিসে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দালালরা তাদেরকে মালয়েশিয়া নেয়ার কথা। কিন্তু মালয়েশিয়ায় না অন্য কোন দেশে নেয়া হয়েছে বিষয়টি জানে না তাদের পরিবার। এদিকে, অজ্ঞাত প্রতারকচক্র ফোনে ইন্দোনেশিয়ায় আটকের বিষয়টি জানান পরিবারকে। পরিবারের অভিযোগ- জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট দালালদের যোগসাজস রয়েছে। এদিকে, প্রতারকচক্র টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। শরীরে ফুটন্ত পানির সেঁক, গরম বেলড দিয়ে শরীর কর্তন ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে তাদের পরিবারকে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করছে দালালরা। টাকা না দিলে লাশ ফিরবে বাংলাদেশে এ রকমও হুমকি দেয়া হচ্ছে ফোনে। বিভিন্ন সময় টাকা চেয়ে ইমু ম্যাসেজ দেয়াও হচ্ছে- ‘বুঝলাম তোমরা টাকা দিবা, তা কবে? মারা যাওয়ার পড়ে?’ দুইজনকে দুই জায়গায় আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করছেন বলে পরিবারটির অভিযোগ। র‌্যাব অভিযোগ পাওয়ার পর আলম নামের একজন আদম ব্যবসায়ীকে গত ৭ মে গ্রেপ্তারও করেছে।
হযরত আলীর স্ত্রী রাবেয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী দালালের মাধ্যমে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়া যান। যাওয়ার পর আর কোন খোঁজ পাচ্ছিলাম না। পরে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে আটকের বিষয়টি জানিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে ৮০ হাজার টাকা দাবি করে। আমার স্বামীর উপর অমানুষিক নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও কলের মাধ্যমে দেখিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। পরে একটি একাউণ্ট নাম্বার দেয় মাসুদ রানা (+৬২৭৬৫৯১০৯৪)। তারা বলে- মাসুদ রানার বাড়ি যশোরে। তার স্ত্রীর মোবাইল নাম্বার-০১৮৮৪৫২৩৩৭৯। টাকা পাঠিয়ে এই নাম্বারে যোগাযোগ করবেন। এখনো আমরা টাকা দিতে পারিনি। আমরা গরিব মানুষ এতো টাকা পাবো কোথায়। আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আমার স্বামী সেও এখন একটি চক্রের কাছে জিম্মি। কি করে তাকে উদ্ধার করবো?
শাপলুর স্ত্রী নুরজাহান বেগম বলেন, আদম ব্যবসায়ী মিজান আমার স্বামীকে মালয়েশিয়া নেয়ার কথা বলে সাড়ে ৩ লাখ টাকার শর্তে নগদ দেড় লাখ ও মালয়েশিয়া যাওয়ার পরে বাকি টাকা পরিশোধ করার শর্তে মালয়েশিয়া পাঠায়। কিন্তু সেখানে নিয়ে জিম্মি করে নানা রকম অত্যাচার শুরু করে। এই খবর জানার পর আদম ব্যবসায়ীদের কাছে এই বিষয়টি বললে তারা বলে বাকি টাকা দাও আমরা শাপলুকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবো। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করে বাকি ২ লাখ টাকার সাথে আরো অতিরিক্ত ২০ হাজার টাকা দেই তারপরেও তারা আমার স্বামীকে ছেড়ে দিচ্ছে না।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আদম ব্যবসায়ী মিজানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মাহবুব আলম পিপিএম বলেন, মানব পাচার আইনে মামলার পর একজন আসামীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাকিদেরও আটক করা হবে।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়