দৃষ্টি নিউজ:
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে এক কুমারী কিশোরী ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনায় সোমবার(১৫ মে) দুপুরে দেলদুয়ার থানা পুলিশ পাথরাইল বাজার সংলগ্ন শাহীন সপিংমল চৌরাস্তার সামনে থেকে হাকিম(৫০)কে আটক করেছে। দেলদুয়ার থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোশাররফ হোসেন ধর্ষক হাকিমকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটির অভিযোগ, পাশের বাড়ির ৫০ বছরের এক লম্পটের যৌন লালসায় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়–য়া ওই কিশোরী। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের মঙ্গলহোড় গ্রামে। ওই কিশোরী আটিয়া হযরত শাহান শাহ্ আদম কাশ্মেরী রহঃ দাখিল মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের পরিবার দরিদ্র হওয়ায় গ্রাম্য সালিশের ওপর নির্ভর করে থানায় মামলা করতে অনেক বিলম্ব হয়। বিভিন্ন সংস্থার কাছে সময় দিতে গিয়ে ঘটনা প্রকাশের পরও প্রায় দেড় মাস কেটে যায়। গত তিন দিন আগে মেয়েটি বাদি হয়ে দেলদুয়ার থানায় মামলা দায়ের করেন অভিযুক্ত আব্দুল হাকিমের বিরুদ্ধে।
যেভাবে অন্তঃসত্ত্বা হয় মেয়েটিঃ
মঙ্গলহোড় গ্রামের মোসলেম জোয়ারদাদের বাড়িতে থাকার ঘর নাই। মেয়েটির বাবা মোসলেমের সাথে তার স্ত্রীর অন্তঃকলহে দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রী সিলেটে থাকেন। বাবা টাঙ্গাইল শহরে রিক্সা চালায়, বড় ভাই মোফাজ্জল অটোরিক্সা চালক হওয়ায় প্রতিদিনই বাড়ি ফিরতে দেরি হয়। অপর ভাই তোফাজ্জল পাথরাইলে ব্রেড ফ্যাক্টরিতে দিন মুজুরের কাজ করে। সেখানেই রাত কাটায়। অভিভাবকদের অনুপস্থিতি আর থাকার ঘরের অভাবে মেয়েটি পাশের বাড়ির নাছির উদ্দিন (বারকু মিয়া) বাড়িতে থাকতেন। মেয়েটির ওপর কুনজর পড়ে বারকু মিয়ার ছেলে অটো রিক্সা চালক আব্দুল হাকিমের। মেয়েটিকে একা পেয়ে ফুসলিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ওই মেয়েটিকে জোরপূর্বক শারীরিক মেলামেশা করে আসছিল হাকিম। ফলে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। সম্প্রতি এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে সমালোচনার ঝড় উঠে। বর্তমানে বিষয়টি মীমাংসার নামে ধামাচাপা দিয়ে লম্পট আব্দুল হাকিমকে বাঁচাতে এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রহস্যজনক ভূমিকায় রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটির স্বজনরা যা বললেনঃ
ধর্ষিতার বড় ভাই মোফাজ্জল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আমাদের বাড়ি সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় ছিল। বসতবাড়িটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর আব্দুল হাকিমের বাড়িতে থাকার আশ্রয় নেই। এই সুযোগে জোরপূর্বক আমার বোনের সাথে শারীরিকভাবে মেলামেশা করতেন। সম্প্রতি আমার বোন অসুস্থবোধ করলে চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়। চিকিৎসক পরীক্ষার মাধ্যমে আমার বোনের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বর্তমানে বোনটি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এ ঘটনায় জড়িত আব্দুল হাকিমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। তিনি আরো বলেন, হাকিমের পরিবার প্রথমে চাপ দিয়েছিল বাচ্চাটি নষ্ট করতে। রাজি না হওয়ায় বড় অংকের টাকা নিয়ে এলাকা ছাড়তে চাপ দিচ্ছেন বলেও জানান মোফাজ্জল।
অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটি জানান, ছয়-সাত মাস যাবত ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক আমার সাথে শারীরিক মেলামেশা করতেন। এমনকি বিষয়টি কাউকে জানালে মেরে ফেলবে এবং আমার ভাই-বাবাকেও মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিতেন আব্দুল হাকিম। ডাক্তারী পরীক্ষায় অন্তঃসত্ত্বার বিষয় বেড়িয়ে আসলে স্বজনদের খুলে বলেন।
অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটির বড় চাচি মনোয়ারা বেগম, চাচা আব্দুল মজিদ ও বাবা মোসলেম জোয়ারদার বলেন, বিষয়টি মিমাংসার জন্য স্থানীয় মাতব্বরা একাধিকবার বসেছেন। কিন্তু এর পরেও কোন বিচার পাইনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আব্দুল হাকিমের ছেলে মেয়েরা বিবাহিত। আরেকজন বিয়ের বয়সের। যে মেয়ের সাথে এমন ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে সে তার মেয়ের বয়সী। এলাকায় এধরনের অনৈতিক চরিত্র তাদের হতবাক করেছে। তারা অভিযোগ করেন বিষয়টি মীমাংসার নামে ধর্ষক আব্দুল হাকিমকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। এর আগেই এধরনের অনৈতিক কাজে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ দিলেন স্থানীয়রা।
মাদ্রাসা শিক্ষক নুরুল হক মুসা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনার সত্যতা আছে বলেই বিষয়টি নিয়ে দুবার বসা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা না থাকলে হাকিম ও তার অভিভাবকরা সালিশিতে বসতে রাজি হত না। এর পর চলতি মাসের ১০ তারিখে মিমাংসায় বসার কথা ছিল। এখনো বসা হয়নি।
অভিযুক্তের পরিবার যা বললেনঃ
এ সম্পর্কে মন্তব্য নিতে গেলে ধর্ষণে অভিযুক্ত আব্দুল হাকিমের বাড়ির পুরুষ লোকজনকে চোখে পড়েনি। সকাল-বিকাল দুবার বাড়ি গিয়েও অভিযুক্ত পরিবারের কোন পুরুষের দেখা মেলেনি। অভিযুক্ত হাকিমের স্ত্রী রুবি বেগম বলেন, বাড়ির পুরুষেরা সবাই বাজারে গিয়েছেন। তবে আমার স্বামিকে মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে।
অভিযুক্ত হাকিমের মেয়ে হামিদা আক্তার বলেন, যে অভিযোগ আমার বাবার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তা মিথ্যে ও বানোয়াট। যদি ডিএনএ পরীক্ষার পর প্রমাণ হয় আমার বাবাকে দিয়ে এই সন্তান হয়েছে তাহলে যথাযথ সম্মান দিয়ে ওই মেয়েকে আমাদের বাড়ি আনবো।
একটি ভুলে চার ব্যক্তি বিষন্নতায়ঃ
হাকিম একটি ভুল করে নিজের চরিত্রের অবক্ষয় ঘটিয়েছে। ফলে ফেরারি হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে হাকিম। মুখ দেখাতে পারছেন না তার স্ত্রী রুবি বেগম। অন্যদিকে অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটি লজ্জায় ঘরের বাইরে যেতে পারছে না। সবচেয়ে বড় বিষয় অনাগত শিশুটি। কোন দোষে শিশুটি ধিক্কার নিয়ে জন্মাবে।
এ শিশুর দায় নেবে কেঃ
ছয় মাস ধরে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা। চার মাস পেরুলেই নিয়মানুসারে সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার কথা। কিন্তু শিশুটি জন্মের পর কার পরিচয়ে বড় হবে। কে নিবে এই শিশুর দায়। মামলা হয়নি। বয়স কম হওয়াতে বিয়েও দিতে পারছে স্থানীয় মাতব্বরা। মামলা হলেই বা কি ? শিশুটি নিয়মানুসারে বেড়েই চলছে। তাহলে কি বাবার পরিচয় ছাড়াই বড় হতে হবে শিশুটিকে। প্রশ্ন স্থানীয়দের?
এ বিষয়ে স্থানীয় মাতব্বর ও ইউপি সদস্য মীর আনিছুর রহমান জানান, আমারা বিষয়টি জেনে গ্রাম্য সালিশিতে বসেছিলাম। ঘটনার বিবরণ জেনে আমরা আইনি আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।