মির্জাপুর প্রতিনিধি:

টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মির্জাপুর উপজেলার প্রায় দেড় লাখ গ্রাহক ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং ও ভূতুড়ে বিলে দিশেহারা হওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ভূতুরে ও ভুয়া বিলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
আগের বিলের তুলনায় দেড় থেকে দুই গুন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রাহককে চার থেকে পাঁচগুণ পর্যন্ত বেশি বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সমস্যা সমাধানে অভিযোগ নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গেলে প্রতিকারের পরিবর্তে গ্রাহকদের হুমকি ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
জানাগেছে, টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতায় মির্জাপুর উপজেলা সদরের বাওয়ারকুমারজানী এলাকায় একটি এবং গোড়াই শিল্পাঞ্চলের গোড়াই এলাকায় টাঙ্গাইল কটন মিলস সংলগ্ন একটিসহ দুইটি জোনাল অফিস রয়েছে।
দুইটি জোনাল অফিসের অধীনে মির্জাপুর পৌরসভা, মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, বানাইল, আনাইতারা, ওয়ার্শি, ভাতগ্রাম, ভাওড়া, বহুরিয়া, গোড়াই, লতিফপুর, আজগানা, তরফপুর এবং বাঁশতৈল ইউনিয়নে আবাসিক, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারি শিল্পসহ মোট গ্রাহক সংখ্যা রয়েছে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মির্জাপুর উপজেলার দেওহাটা, গোড়াই, বহুরিয়া, তরফপুর, বানাইল ইউনিয়নের আশ্রয়ন কেন্দ্রে ভবঘুরে, দিনমজুরসহ অসহায় পরিবারগুলো ভূতুড়ে বিলের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। তাদের অভিযোগ, প্রতিটি গ্রাহককে জিম্মি করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কোনো অভিযোগ নিয়ে অফিসে গেলে তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হুহকিও দেওয়া হয়।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মিটার রিডার এবং অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই ভুয়া বিল তৈরির সঙ্গে জড়িত। জুন মাসে ক্লোজিংয়ের নামে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ও নিচ্ছে। এসব এলাকার আবাসিক, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারি শিল্পের গ্রাহকরা তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন।
মির্জাপুর পৌরসভার জনৈক গ্রাহক অভিযোগ করেন- চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে তার মিটারে প্রতিমাসে ৬৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা বিল এসেছিল। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে তাকে বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ২২০০ টাকা। গত কয়েক মাস ধরে পল্লী বিদ্যুতের তীব্র লোডশেডিং চলছে। দিনে গড়ে ৬-৭ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছেনা। তার ওপর দুই থেকে তিনগুন বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি এটা মেনে নিতে পারছেন না।
তার ধারণা- পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারসাজির কারণে অতিরিক্ত বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার মতো গোড়াইয়ের বাবুল সিকদার, জামুর্কির আবুল হাসেম, বাঁশতৈলের আব্দুল কাদের, আজগানার চাঁন মিয়াসহ অন্তত ৩০-৪০ জন গ্রাহক এমন অভিযোগ করেন। তাদের আরও অভিযোগ- তাদের নামে অতিরিক্ত বিল ধরিয়ে দেওয়া হলেও মিটারের রিডিংয়ের সঙ্গে দেওয়া বিল কপির মিল নেই।
গোড়াই শিল্পাঞ্চলের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারি শিল্পের অন্তত ১০ জন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন- একদিকে দিনে-রাতে লোডশেডিংয়ের কারণে তাদের কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে। অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অতিরিক্ত ভূতুড়ে বিলের কারণে বিল পরিশোধ করতে তারা চরম বিপাকে পরেছেন। তারা সরেজমিন তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।
টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সমিতির মির্জাপুর জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. জসিম উদ্দিন জানান, মির্জাপুর উপজেলায় দুইটি জোনাল অফিসের আওতায় প্রায় দেড় লাখ গ্রাহক রয়েছে।
গ্রাহকদের বিল বেশি হওয়ার মূল কারণ বিদ্যুতের অধিক ব্যবহার বলে তিনি দাবি করেন। ফলে প্রতিটি মিটারের বিপরীতে একটু বেশি বিল হয়েছে। কেউ যদি মনে করেন তার খুব বেশি বিল এসেছে- তাহলে অফিসে গেলে বিল সংশোধন করে দেওয়া হচ্ছে।