আজ- শুক্রবার | ২৩ মে, ২০২৫
৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ | বিকাল ৫:৩৫
২৩ মে, ২০২৫
৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
২৩ মে, ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

পিয়নের বিরুদ্ধে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দুদকে

বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের অফিস সহায়ক(পিয়ন) মো. কামরুলের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের সাক্ষর জাল করে বিভিন্ন প্রকল্প এবং উন্নয়নমূলক কাজের তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের(দুদক) প্রধান কার্যালয়ে আবেদন করেছেন উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজ।


গণসাক্ষর সম্বলিত অভিযোগে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোছা. নার্গিস বেগমের অফিস সহায়ক(পিয়ন) মো. কামরুল দুই বছরে(২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত) বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাত করেছেন। এসব অপকর্ম করতে তিনি প্রায় সময়ই উপজেলা চেয়ারম্যানের সাক্ষর জ¦াল বা নকল করে নিজেই দিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে প্রায় তিন কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাত করার হদিস পাওয়া গেছে।

এরমধ্যে রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে ২১০০ স্কয়ার ফুটের একটি ফ্ল্যাট(মূল্য এক কোটি ২০ লাখ টাকা) এবং গাাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাধখোলা শিল্প এলাকায় ৬ শতাংশ জমি(মূল্য ৭০ লাখ টাকা) রয়েছে। এছাড়া অফিস সহায়ক মো. কামরুলের ভূঞাপুর ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় একাধিক একাউণ্টে ১০ লাখের বেশি টাকা জমা রয়েছে। তিনি ভাই লুৎফর রহমান কালু ও উজ্জল মিয়া এবং তার মায়ের নামেও একাউণ্ট খুলে দুর্নীতির টাকা জমা রেখেছেন।


সরেজমিনে জানা যায়, ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের অফিস সহায়ক মো. কামরুল চাকুরির পাশাপাশি অবৈধ সুদের ব্যবসা পরিচালনা করেন। তিনি ভূঞাপুর উপজেলার কাগমারী পাড়া গ্রামের মৃত মোজাফফর আলীর ছেলে।

তার গ্রামের বাড়ি এলাকার দিলরুবা ইয়াসমিন, সালমা আক্তার, গুঠু মিয়া ও আজিজ শেখের জমি বন্ধক রেখে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। তার শ^শুরবাড়ি কালিহাতী উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের হাসেম, আকরাম, সুজন, আলম ও বিলকিস সুলতানাকে মাসিক ১০ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি সুদে ৩৫ লাখ টাকা দাদন দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তিনি কয়েক কোটি টাকা মাসিক ১০ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি সুদে দাদন হিসেবে দিয়েছেন।


স্থানীয়রা জানায়, মো. কামরুল পারিবারিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের সন্তান। তার এক ভাই চায়ের দোকানদার, অপর ভাই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। উপজেলা পরিষদের পিয়ন হয়ে মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এলাকায় প্রচুর জমি কিনেছেন। এখন তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের দাপট দেখিয়ে এলাকায় চলাফেরা করেন।


অভিযোগে সাক্ষরকারী মোছা. তানিয়া আক্তার জানান, তিনি অভিযোগপত্রে নাম-সাক্ষর করেছেন বলে মো. কামরুল ও তার বাহামভুক্ত লোকজন তাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। অভিযোগ তুলে না নিলে তাকে প্রাণে মেরে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।


এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে মো. কামরুলের মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি এবং ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও কোন জবাব পাওয়া যায়নি।


ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মামুনুর রশিদ জানান, অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনে দেওয়া হয়েছে- তাকে শুধু অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) নিজেরা ব্যবস্থা নিতে পারে বা তাকে দায়িত্ব দিতে পারে। তাকে দায়িত্ব দিলে তিনি যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।


ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোছা. নার্গিস বেগম জানান, অফিস সহায়ক মো. কামরুলের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগের বিষয়ে তিনি জেনেছেন। এ বিষয়ে দুদক তদন্ত করছে- তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তিনি শাস্তি পাবেন।


তার সাক্ষর জ্বাল বা নকল করার বিষয়ে তিনি জানান, তিনি এখনও জানেন না কোন কোন জায়গায় সাক্ষর দেওয়া হয়েছে- সাক্ষর দেখে তিনি বলতে পারবেন সাক্ষরগুলো তার কি-না।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়