আজ- শুক্রবার | ১৪ নভেম্বর, ২০২৫
২৯ কার্তিক, ১৪৩২ | রাত ১১:৫৯
১৪ নভেম্বর, ২০২৫
২৯ কার্তিক, ১৪৩২
১৪ নভেম্বর, ২০২৫, ২৯ কার্তিক, ১৪৩২

পুঁজির অভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছেনা টাঙ্গাইলের তাঁতশিল্প

বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প করোনা ও বন্যার ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারছেনা। দুর্যোগকালীন সময়ে সরকারি প্রণোদনা না পাওয়ার ফলে লক্ষাধিক তাঁত শ্রমিক ও চার হাজারের বেশি তাঁত মালিক কার্যত বেকার হয়ে পড়েছে।

বাতাঁবো’র ঋণ সহায়তা না পাওয়ায় পুঁজির অভাবে ক্ষুদ্র ও প্রন্তিক তাঁত মালিকরা শাড়ি উৎপাদনে যেতে পারছে না। অনেকে পৈত্রিক পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

জানাগেছে, টাঙ্গাইল জেলায় তাঁত শিল্প ও তাঁতিদের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের(বতাঁবো) দুটি বেসিক সেন্টার রয়েছে।

এরমধ্যে কালিহাতী, ভূঞাপুর, ঘাটাইল, গোপালপুর, মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলার জন্য কালিহাতীর বল্লায় একটি এবং টাঙ্গাইল সদর, দেলদুয়ার, নাগরপুর, বাসাইল, সখীপুর, মির্জাপুর উপজেলার জন্য টাঙ্গাইল শহরের বাজিতপুরে একটি বেসিক সেন্টার রয়েছে।

টাঙ্গাইল শাড়ি জেলার গর্বের বস্তু। টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শাড়ির পরিচিতি বিশ্ব জুড়ে। এক সময় বাংলাদেশের খ্যাতি ও গৌরব ছিল মসলিন এবং জামদানির জন্য।

এরমধ্যে জামদানি টিকে থাকলেও মসলিন ইতিহাসের পাতায় বন্দি। তবে মসলিন ও জামদানির পর দেশীয় বস্ত্র খাতে টাঙ্গাইল শাড়ি নতুনমাত্রা যোগ করতে সক্ষম হয়েছে।

টাঙ্গাইল শাড়ির নকশা, বুনন ও রঙের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈচিত্র্য রয়েছে। সাধ্যের মধ্যে দাম আর বাহারি কারুকার্য খচিত হওয়ায় টাঙ্গাইল শাড়ি সব সময় রমণীদের পছন্দের শীর্ষে।

ফলে টাঙ্গাইল শাড়ি দেশের সীমানা পেরিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এমনকি ইউরোপ, আমেরিকা এবং জাপানেও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে তাঁতশিল্প একটি সম্ভাবনাময় শিল্প।

স্থানীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখা এ শিল্পের মূল সমস্যা মূলধন ও বাজারজাত। এছাড়া পৃথক তাঁতশিল্প এলাকা ও তাঁতিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা জরুরি।

তাঁত বোর্ডের কালিহাতী বেসিক সেন্টারে ১৭টি প্রাথমিক তাঁতি সমিতির এক হাজার ৮৮৪জন ক্ষুদ্র তাঁত মালিকের ২১ হাজার ৯৭৩টি তাঁত রয়েছে।

টাঙ্গাইল সদর (বাজিতপুর) বেসিক সেন্টারে ৩২টি প্রাথমিক তাঁতি সমিতির দুই হাজার ২৬৭ জন ক্ষুদ্র তাঁত মালিকের ১২ হাজার ৪২৯টি তাঁত রয়েছে।

এসব তাঁতের চার হাজার ১৫১জন ক্ষুদ্র তাঁত মালিকের অধীনে এক লাখ তিন হাজার ২০৬জন তাঁত শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এরমধ্যে ৩৪ হাজার ৪০২জন নারী এবং ৬৮ হাজার ৮০৪জন পুরুষ।

বাতাঁবো নিয়ন্ত্রিত জেলার দুটি বেসিক সেন্টার সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করলেও টাঙ্গাইল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ আর্টিজেন্স ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানান, জেলায় তাঁতের সংখ্যা দেড় লক্ষাধিক।

বাতাঁবো’র বেসিক সেন্টার শুধুমাত্র তাদের সমিতির সদস্য ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক তাঁতি ও তাঁত সংখ্যার পরিসংখ্যান দিয়ে থাকে তাদের সমিতির বাইরেও তাঁত ও তাঁতি রয়েছে।

কালিহাতী উপজেলার বল্লা, রামপুর, মমিননগর, কোকডহড়া, দত্তগ্রাম, বেহেলাবাড়ী, ভরবাড়ী, টেঙ্গুরিয়া, ঘোণাবাড়ী, ছাতিহাটি, দড়িখশিল্লা, তেজপুর, কাজীবাড়ী, দত্তগ্রাম,

সহদেবপুর; দেলদুয়ার উপজেলার চন্ডি, পাথরাইল, পুটিয়াজানী, রূপসী; টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া, চরকাকুয়া, চরপৌলী, হুগড়া ইত্যাদি এলাকায় তাঁতিদের সংখ্যা বেশি।

বাতাঁবো’র স্থানীয় বেসিক সেন্টারের কর্মকর্তা, তাঁত মালিক, তাঁত শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, একটি তাঁতে ন্যূনতম তিনজন নারী-পুরুষ প্রত্যক্ষভাবে শ্রম দিয়ে থাকেন।

একজন তাঁতে কাপড় বুনে, একজন চড়কায় কাপড় বুননের সুতা(নলি বা ছিটা) কাটেন, একজন কাপড়ের নকশার সুতা কটেন(ড্রপ কাটা)। এছাড়া সুতা রঙ করা, শুকানো, পাটিকরা, তানার সুতা কাটা, ড্রাম থেকে ভিমে সুতা পেঁচানো, তানা সাজানো, মালা বা

তাঁত শ্রমিক আ. গফুর

নকশার ডিজাইন তোলা, কাপড় ভাঁজ করা, পেটি করা এবং বাজারজাত ও আনা-নেওয়ার জন্যও শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।

অধিকাংশ ক্ষুদ্র তাঁত মালিক নিজেরা প্রয়োজন অনুযায়ী শ্রম দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শ্রম দেন। তাঁত শিল্পের শ্রমিকদের প্রতি সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে মজুরি দেওয়া হয়।

তাদের সাথে কথা বলে আরও জানাগেছে, টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্পে শ্রম দেওয়া তাঁতিদের মধ্যে প্রায় ৫০শতাংশ সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুড়িগ্রাম ইত্যাদি জেলার বাসিন্দা।

করোনার কারণে চলতি বছরের ২৬ মার্চ থেকে সরকারি ঘোষণায় জেলার সকল তাঁত ফ্যাক্টরী বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে এক লাখ তিন হাজার ২০৬জন তাঁত শ্রমিক এবং চার হাজার ১৫১জন ক্ষুদ্র তাঁত মালিক বেকার হয়ে পড়েন।

এরই মাঝে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা তাঁতশিল্পকে ভাসিয়ে দিয়ে গেছে। সেই বেকারত্ব এখনও বিদ্যমান। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার প্রণোদনার ঘোষণা দিলেও তাঁতিরা তা পায়নি।

কোন কোন তাঁত মালিক চড়াসুদে টাকা নিয়ে সীমিত আকারে তাঁত ফ্যাক্টরী চালু করার চেষ্টা করলেও প্রকৃতার্থে ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না। একদিকে মহাজনের চড়া সুদ অন্যদিকে উৎপাদিত শাড়ি বিক্রি করতে না পারায় তারা মারাত্মক ক্রান্তিকাল পাড় করছে।

তারমধ্যে ‘মরার উপর খারার ঘা’ হিসেবে গত সেপ্টেম্বর থেকে বেসিক সেন্টারের ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প স্থানীয় অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এখানে পৃথক কোন তাঁতপল্লী বা তাঁতশিল্প এলাকা নেই। তাঁতিরা যার যার বাড়ি বা বাড়ির আশপাশে ছোট ছোট ফ্যাক্টরী করে শাড়ি উৎপাদন করছে।

টাঙ্গাইল শাড়ির বাজারজাতই তাঁতিদের মূল সমস্যা। জেলা শহরের বাজিতপুর, করটিয়া ও বঙ্গবন্ধুসেতুর পূর্বপাড়ে কালিহাতী উপজেলার জোকারচরে কাপড়ের হাট রয়েছে। এসব হাট করোনাকালে বন্ধ হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি খোলা হয়নি।

তাঁতশিল্পে উৎপাদন শুরু না হওয়ায় করোনা মহামারী শুরুর আগে উৎপাদিত শাড়ি নিয়ে বর্তমানে স্বল্প পরিসরে ওইসব হাট চলছে।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বাতাঁবো’র তাঁতিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ‘চলতি মূলধন সরবরাহ ও তাঁতের আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে কালিহাতী বেসিক সেন্টারের আওতায় মাত্র ২৫জন তাঁতির মাঝে ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই ঋণের দুই লাখ ১৯ হাজার টাকা তাঁতিরা পরিশোধ করেছে।

এছাড়া ‘ক্ষুদ্র ঋণ’ প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ৬৯৫জন তাঁতির মাঝে তিন কোটি ৮৯ লাখ তিন হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে এক হাজার ৬৬জন তাঁতি তিন কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা ক্ষুদ্রঋণ পরিশোধ করেছে।

টাঙ্গাইল সদর বেসিক সেন্টারের আওতায় ‘চলতি মূলধন সরবরাহ ও তাঁতের আধুনিকায়ন’ প্রকল্পে ১২৩জন তাঁতির মাঝে এক কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

এরমধ্যে চার লাখ ৭ হাজার টাকা আদায় হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পে দুই হাজার ১২৮জন তাঁতির মাঝে চার কোটি ৭৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে চার কোটি ৭ হাজার চাঁকা আদায় হয়েছে।

করোনার নিষেধাজ্ঞা ও বন্যার পর ‘চলতি মূলধন সরবরাহ ও তাঁতের আধুনিকায়ন’ প্রকল্পটি চালু রেখে ‘ক্ষুদ্রঋণ’ প্রকল্পটি বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়েছে। ‘চলতি মূলধন সরবরাহ ও তাঁতের আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের অর্থ ব্যাংকে জমা থাকলেও সমিতি ভিত্তিক ক্ষুদ্রঋণ

আদায়ে প্রত্যাশিত হার ৬০% পুরণ না হওয়ায়র তাঁতিদের মাঝে ঋণ বিতরণ এক প্রকার আটকে আছে। ফলে তাঁতিরা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে ব্যবসা চালু করার চেষ্টা করছে।

তাঁত শ্রমিকরা জানায়, তাঁত ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। জীবিকার প্রয়োজনে ছোটখাট ব্যবসা, ভ্যান-রিকশা ও কুলি-মজদুরী করছেন।

তাঁত মালিকরা জানায়, করোনার পর দীর্ঘস্থায়ী বন্যা তাঁতশিল্পকে পথে বসিয়েছে। পুঁজি হারিয়ে অনেকে পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

তাঁত বোর্ডের ঋণ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার মন্তব্য করে একাধিক তাঁত মালিক জানান, বেসিক সেন্টারের লোকজন আইনের নানা শর্ত দেখিয়ে তাঁতিদের ঋণ দিচ্ছেনা।

বাধ্য হয়ে কোন কোন তাঁত মালিক মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে ফ্যাক্টরী চালু করার চেষ্টা করছেন এবং তারা সুদের বোঝা টানতে টানতে এক সময় তাঁত বিক্রি করতেও বাধ্য হবেন।

কালিহাতীর নাগবাড়ী ইউনিয়নের ভরবাড়ি গ্রামের মরহুম আমজাদ হোসেনের ছেলে মো. সাখাওয়াত হোসেন করোনা শুরু হওয়ার আগে ৩৫টি তাঁতের মালিক ছিলেন। তিনি জানান, করোনাকালে জমাকৃত শাড়ি কমদামে বিক্রি করে শ্রমিকদের খরচ মিটিয়েছেন।

পরে তাঁত বিক্রি করে মহাজনের ঋণ পরিশোধ করেছেন। তাঁত বোর্ডের ঋণ সুবিধা না পাওয়ায় তিনি বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে বর্তমানে বল্লা বাজারে কাঁচামালের(শাকসবজি) ব্যবসা করছেন।

একই এলাকার মৃত আব্দুল হাইয়ের ছেলে তাঁত শ্রমিক আব্দুল গফুর জানান, করোনাকালে তাঁত ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা কর্মহীন হয়ে পড়েন। তাঁত মালিক কিছুদিন ধারদেনা দিয়েছেন এখন তারই অবস্থা শোচনীয়।

৩৫ তাঁতের মালিক সাখাওয়াত হোসেন এখন সবজি বিক্রেতা

বাধ্য হয়ে শাড়ি বুনন ছেড়ে তিনিও কাঁচামালের(শাকসবজি) ব্যবসা করে সংসার চালাচ্ছেন। একই অবস্থা বল্লা গ্রামের মৃত আব্দুর রশীদের ছেলে আলমগীর হোসেনের। তিনি ১৬টি তাঁতের মালিক ছিলেন এখন বেকার।

একই গ্রামের মৃত আব্দুল গনির ছেলে আব্দুল হামিদের ১১টি তাঁত ছিল। করোনা ও বন্যার কারণে ৫টি বিক্রি করে দিয়েছেন। মহাজনের কাছ থেকে চড়াসুদে টাকা নিয়ে সুতা ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় ৬টি তাঁত চালু করার চেষ্টা করছেন।

কালিহাতী উপজেলার বল্লা ১নং প্রাথমিক তাঁতী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দুলাল হোসেন জানান, তার সমিতির সদস্য তিন হাজার ১০জন। করোনাকালে ফ্যাক্টরী বন্ধ রাখায় তাঁতি প্রতি তাঁতে সপ্তাহে চার হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।

করোনাকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে এনে তিনি আড়াইশ’ শ্রমিকর মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। তাঁতবোর্ড তাঁতিদের জন্য করোনা ও বন্যায় কিছুই করেনি। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় তাঁত ফ্যাক্টরীতে পানি এসে সব নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে পুঁজির অভাবে তাঁত মালিকরা ফ্যাক্টরী চালু করতে পারছেন না।

বাতাঁবো’র ‘চলতি মূলধন সরবরাহ ও তাঁতের আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের টাকা বেসিক সেন্টারের লিয়াজোঁ অফিসারের অ্যাকাউন্টে ব্যাংকে থাকলেও নানা অজুহাতে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছেনা। সরকার করোনাকালে সকল ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ করে দেয়।

অথচ বেসিক সেন্টারের লিয়াজোঁ অফিসার ক্ষুদ্র ঋণের ৬০% আদায় না হলে তাঁতিদের ঋণ দেওয়া যাবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

বল্লা ইউপি চেয়ারম্যান হাজী চান মাহমুদ পাকির জানান, করোনা ও বন্যার কারণে সব তাঁত ফ্যাক্টরী বন্ধ থাকায় হাজার হাজার তাঁত শ্রমিক এবং ছোট ছোট তাঁত ফ্যাক্টরী মালিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

চলতি মূলধনের অভাবে ফ্যাক্টরী মালিকরা তাঁত চালু করতে পারছেনা। তাঁত বোর্ডের ‘চলতি মূলধন সরবরাহ ও তাঁতের আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের আওতায় তাঁতিদের মাঝে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

দেলদুয়ারের আটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম মল্লিক জানান, করোনা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নের ভাতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ব্যতিত কর্মহীন তাঁত শ্রমিক সহ সকল শ্রমিকদের মাঝে তিনি ত্রাণ সামগ্রী দিয়েছেন।

তিনিও ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সহজ শর্তে তাঁতিদেরকে ঋণ সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান।

টাঙ্গাইল শাড়ির রাজধানী পাথরাইল শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক জানান, করোনাকালে ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে তারা তাঁত শ্রমিকদের কিছু কিছু ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন।

তিনি জানান, ক্ষুদ্র ও মাঝারী তাঁত শিল্পের মালিকরা সাধারণত ব্যাংকঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন। তাঁত শিল্পে কোন প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পের সাম্প্রতিক সংকট কাটাতে চলতি মূলধন সরবরাহ করলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ফ্যাক্টরী মালিকরা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে।

টাঙ্গাইল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ আর্টিজেন্স ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেডের সভাপতি মোফাখখারুল ইসলাম জানান, বাতাঁবো’র বেসিক সেন্টারের কর্মকর্তারা তাঁতিদের নয় নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে কর্মরত।

তাঁতিদের সুখ-দুঃখের খবর তারা রাখেন না। তাঁতিদের সঠিক পরিসংখ্যানও তাদের কাছে নেই যা আছে তা হলো- সমিতির সদস্য সংখ্যা। জেলায় প্রায় দেড় লাখ তাঁত রয়েছে। তাদের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ায় সঠিক পরিসংখ্যান তারা দিতে পারছেন না।

বাতাঁবো’র কালিহাতী বেসিক সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত লিয়াজোঁ অফিসার ইমরানুল হক জানান, করোনা ও বন্যার প্রভাবে জেলার তাঁত শিল্পে ধস দেখা দিয়েছে। তাঁতিরা এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারছেনা।

বিপুল সংখ্যক তাঁত শ্রমিক এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি তাঁত ফ্যাক্টরীর মালকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাঁতবোর্ডের পক্ষ থেকে তাঁতিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ‘চলতি মূলধন সরবরাহ ও তাঁতের আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের ঋণ দেওয়া হচ্ছে।

তবে যেসব সমিতিতে দেয় ক্ষুদ্রঋণের টাকা ৬০শতাংশ আদায় হয়নি সেসব সমিতিতে ঋণ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে যারা ঋণ পরিশোধ করেছেন তাদেরকে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য তিনি বাতাঁবো কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

টাঙ্গাইল সদর (বাজিতপুর) বেসিক সেন্টারের লিয়াজোঁ অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, করোনা ও বন্যায় কর্মহীন হয়ে পড়া ৭ হাজার ৬০০ তাঁত শ্রমিকের পরিবারের মাঝে তিনি উপজেলা পরিষদের সহায়তায় খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন।

তাঁতিরা সরকারি প্রণোদনা না পাওয়ায় ঘুরে দাঁড়াতে পারছেনা। তাঁত শিল্পের সংকট মোকাবেলায় তিনি বাতাঁবো’র ‘চলতি মূলধন সরবরাহ ও তাঁতের আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের আওতায় তাঁতিদের ঋণ দিচ্ছেন।

ইতোমধ্যে ১২৩জন তাঁতির মাঝে এক কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়