দৃষ্টি নিউজ:

কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে কর্মরত সাময়িক বরখাস্ত ও পদাবনতিকৃত এএসআই সুলতান আহম্মেদের নামে মামলা দায়ের করায় তার হুমকিতে স্ত্রী রাবেয়া আক্তার সাথী দিশেহারা হয়ে পড়েছে। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানায় পর পর দুটি সাধারণ ডায়েরি করলেও কোন সুফল না পেয়ে প্রতিকারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার বক্তারপুর গ্রামের মৃত আবদুর রশীদের পুত্র সুলতান আহম্মেদ বিবাহিত এবং চাকুরীর সুবাদে ২০১৩ সালে র্যাব-১২ টাঙ্গাইলে উপ-পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। টাঙ্গাইল র্যাব-এ কর্মরত থাকা অবস্থায় শহরের সন্তোষ খালপাড়স্থ নুরুল ইসলামের মেয়ে রাবেয়া আক্তার সাথীর সাথে পরকীয় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে সুলতান বিয়ের প্রস্তাব দিলে সাথী তার স্বামী ও সন্তান থাকায় বিয়ে করতে অনীহা প্রকাশ করে। কিন্তু সুলতানের বিভিন্ন প্রলোভনে পরে সাথী তার স্বামীকে তালাক দেয়। ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর ৪ লাখ টাকা দেনমোহর ও রেজিস্ট্রি কাবিন মূলে ঢাকার গুলশান ১৮নং ওয়ার্ড নন্দী বাসস্ট্যান্ড এলাকার কাজী মো. খাইরুল আমিনের কার্যালয়ে দু’জনে বিয়ে করেন।
বিয়ের পর সুলতান আহম্মেদ খুলনা জেলায় বদলী হলে সেখানে সাথীকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। এছাড়া ময়মনসিংহের বাড়িতেও থাকতেন। সেখানে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হলে সুলতান তার স্ত্রী সাথীকে তালাক দেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর নিজেকে সংশোধনের প্রতিশ্রুতিতে একই কাজী অফিসে ২ লাখ টাকা দেনমোহরে পুনরায় সাথীকে বিয়ে করেন। সুলতান তার পরবর্তী কর্মস্থল কুষ্টিয়ায় সাথীকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ওই সময় সুলতান আহম্মেদ তার নামে ইস্যুকৃত সরকারি পিস্তল হারিয়ে ফেললে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে উপ-পরিদর্শক(এসআই) থেকে সহকারি উপ-পরিদর্শক(এএসআই) হিসেবে পদাবনতি করা হয়।
পুনরায় বিয়ের পর কুষ্টিয়া থাকাবস্থায় সাথীকে বাসা থেকে বের করে দেন সুলতান আহম্মেদ। ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি সুলতান আহম্মেদের বিরুদ্ধে দেনমোহর, ভরনপোষণ পাওয়ার জন্য সিনিয়র সহকারি জজ, টাঙ্গাইল সদর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন রাবেয়া আক্তার সাথী। এরপর সালিশী বৈঠকের মাধ্যমে মামলা মীমাংসার জন্য সুলতান আহম্মেদ টাঙ্গাইল আসেন। সাথীর সাথে পুনরায় সংসার করার প্রস্তাব দেন। সুলতান কৌশলে মামলা প্রত্যাহার এবং সাথীর বাড়ি বিক্রি করে টাকা দেওয়ার দাবি করেন। সাথী রাজি না হওয়ায় সুলতান তাকে মারপিট ও নানাভাবে নির্যাতন করেন।
এ ঘটনার পর রাবেয়া আক্তার সাথী বাদি হয়ে সুলতান আহম্মেদ, তার প্রথম স্ত্রী আরিফা বেগম, সুলতানের ভাই ও ভাইপোদের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৩ মার্চ টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা করেন। সুলতান আহম্মেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে টাঙ্গাইল মডেল থানা পুলিশ ২০১৬ সালের ১৭মে তাকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়। বর্তমানে সুলতান জামিনে মুক্ত আছে এবং কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে সংযুক্ত হয়ে সাময়িক বরখাস্ত হিসেবে আছেন। এদিকে ওই বছর ১৯ জুন জামিনে মুক্ত হয়ে সুলতান সেল ফোনের মাধ্যমে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দেন এবং তা নাহলে সাথীসহ তার মা-বাবার নামে মামলা করার হুমকি দেন। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে রাবেয়া আক্তার সাথী গত ২০ জুন টাঙ্গাইল মডেল থানায় দ্বিতীয় দফা সাধারণ ডায়রি করেন। সুলতান আহম্মেদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করায় প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে ২০১৬ সালের ৬ জুন রাবেয়া আক্তার সাথী ও তার পরিবারের ১০জন সদস্যের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-১ এ মামলা করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয় কুষ্টিয়া পিবিআইকে। পিবিআই-এর পরিদর্শক শেখ মোনায়েম হোসেন ২০১৬ সালের ৫ নভেম্বর মামলার অভিযোগ সত্য নয় বলে আদালতে প্রতিবেদন দেন। এরই প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৯ মার্চ আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে সংযুক্ত সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের এএসআই সুলতান আহম্মেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং রাবেয়া আক্তার সাথী একজন নষ্ট মহিলা বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, পুলিশ লাইনে নিয়মিত হাজিরার কারণে আমি অন্য কোন কাজই করতে পারছিনা।
রাবেয়া আক্তার সাথী জানান, বিয়ের পর সুলতান আহম্মেদ কৌশলে তার জমানো ১৭ লাখ টাকা নিয়ে নেন। সে টাকা দিয়ে সুলতানের গ্রামের বাড়িতে পাকা ভবন নির্মাণ করেন। পর পর দুইটি সাধারণ ডায়েরি করার পরও পুলিশ জিডির কোন তদন্তই করেনি। বরং বরখাস্ত এএসআই সুলতানের পক্ষ নিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করার পরামর্শ দিচ্ছে। এ বিষয়ে প্রতিকারের দাবি নিয়ে অসহায় গৃহবধূ রাবেয়া আক্তার সাথী প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
