আজ- মঙ্গলবার | ১১ নভেম্বর, ২০২৫
২৬ কার্তিক, ১৪৩২ | রাত ১০:৩৭
১১ নভেম্বর, ২০২৫
২৬ কার্তিক, ১৪৩২
১১ নভেম্বর, ২০২৫, ২৬ কার্তিক, ১৪৩২

বাংলার আকাশে বিজয়ের লাল সূর্য উঁকি দেয়

দৃষ্টি নিউজ:

বাঙালির বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের দ্বিতীয় দিন আজ বুধবার। স্বাধীন বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে বাঙলার দামাল ছেলেরা অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে বিজয়ের স্বর্ণ শিখরের দিকে।

পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে চরম নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতায় মেতে ওঠে হিংগ্র পাক হানাদার বাহিনী। দেশের চারদিকে ছড়িয়ে চালাতে থাকে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ। তবে অপ্রতিরোধ্য বাঙালির বিজয়রথে পাকবাহিনীর নিষ্ঠুর সব পরিকল্পনা একে একে ভেস্তে যেতে থাকে। বাংলার আকাশে ধীরে ধীরে উঁকি দিতে থাকে বিজয়ের লাল সূর্য।

মহান মুক্তিযুদ্বের এই দিনে ঢাকা শহরের দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের দামাল ছেলেরা।গেরিলা আক্রমন থেকে সম্মুখ যুদ্ধের গতি বাড়তে থাকে।নভেম্বর এর শেষ দিকে ত্রিমুখের আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠে।সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তানীরা সমরসয্যা বৃদ্ধি করলে ভারত ও যুদ্ধের সর্বাত্বক প্রস্তুতি নিতে থাকে। এছাড়া আখাউড়া, পঞ্চগড়,কামালপুর সমসের নগর ও পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিবাহিনীর সাথে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর প্রচন্ড সংঘর্ষ হয়।

অপরদিকে, মুক্তিবাহিনীর সাথে একের পর এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মনোবল হারিয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহায্যের জন্য মার্কিন প্রসিডেন্ট নিক্সনকে চিঠি পাঠায়।পরে মুক্তিবাহিনীর সৈনিকরা স্বাধীনতার স্বাধ নিতে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যায়।

এদিন বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে থাকে আর অবরুদ্ধ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনেক মুক্তাঞ্চলের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানি বাহিনী পঞ্চগড়ে রিংয়ের আকারে প্রথম ও দ্বিতীয় ডিফেন্স লাইন তৈরি করেছিল। মুজিব ব্যাটারির যোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সহায়তায় গভীর রাতে পঞ্চগড় আক্রমণ করায় তারা পঞ্চগড় ছেড়ে চলে যান। চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনী উত্তরে ফটিকছড়ি ও রাউজান থানা এবং দক্ষিণে আনোয়ারার অধিকাংশ স্থান তাদের দখলে আনতে সক্ষম হয়।

মুক্তিবাহিনী ঘোড়াশালে পাকবাহিনীর অবস্থানের ওপর চারদিক থেকে আক্রমণ করে ২৭ হানাদারকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। এখান থেকে বেশকিছু গোলাবারুদও উদ্ধার করে মুক্তিবাহিনী। এদিকে আখাউড়া, পঞ্চগড়, ভুরুঙ্গামারী, কমলাপুর, বনতারা, শমসেরনগর ও পার্বত্য চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে প্রচন্ড সংঘর্ষে হনাদার বাহিনী পিছু হটে। এতে মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব দেন লে. মাসুদ, সুবেদার খালেক, লে. মতিন, মেজর সদরুদ্দিন ও ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার।

বোমা বিস্ফোরণে ঢাকার রামপুরা বিদু্যৎ সরবরাহ কেন্দ্র, চট্টগ্রামের পাঁচটি বিদু্যৎ সাব-স্টেশন ও দুটি পেট্রোল পাম্প বিধ্বস্ত হয়। আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এলেও হানাদার বাহিনী তাদের বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠে মুক্তিবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ করে। এ আক্রমণে মুক্তিবাহিনী আবার তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে তিন দিক থেকে শত্রুকে আক্রমণ করলে হানাদার বাহিনী আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে যায়।

ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই ত্রিমুখী যুদ্ধের আশঙ্কা ক্রমেই প্রবল হয়ে উঠতে থাকে। এসব দেখেশুনে ভারত সরকার বুঝেছিল, পাকিস্তান যুদ্ধ করবেই। ভারত তখন যে রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা বা আশা একেবারে ছেড়ে দিয়েছে তা নয়; কিন্তু রাজনৈতিক সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে ভারত সামরিক প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছিল।

পশ্চিমের প্রস্তুতি দেখে এবং নাশকতামূলক কাজে লোক ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারত মোটামুটি পরিষ্কার বুঝে ফেলে, পাকিস্তান রাজনৈতিক সমাধানের দিকে যাবে না, বরং লড়াই-ই করবে। তাই তখন থেকে ভারতের প্রস্তুতিও জোরদার হয়েছিল।

২ ডিসেম্বর সীমান্ত-সংঘাত আরও তীব্র হয়ে ওঠে। পাকিস্তান অভিযোগ করেছিল যে, সাতটি স্থানে ভারত যুদ্ধের ফ্রন্ট খুলেছে এবং তাদের প্রতিরক্ষা বু্যহে আঘাত হেনেছে। এমনি এক গুরুতর আঘাতের ঘটনা ঘটেছিল দিনাজপুরে, যদিও সেই পরাভবের স্বীকারোক্তি দিতে পাকিস্তান তখনো প্রস্তুত ছিল না। সেখানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে মিলে ভারতীয় সেনাদল পঞ্চগড় মুক্ত করে এগিয়ে চলছিল ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে। তবে এমনি নির্বাচিত রণক্ষেত্রে ভারতীয় অংশগ্রহণ ছিল সীমিত আকারে।

সীমান্ত পেরিয়ে হট পারসুইট বা হানাদারদের তাড়িয়ে দেওয়ার মতো করে পরিচালিত হচ্ছিল অভিযান; ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় যুদ্ধাবস্থা হলেও প্রকৃত যুদ্ধ এ নয়। সাংবাদিক ক্লেয়ার হোলিংওয়ার্থ লিখেছিলেন, ৬০০ থেকে ৮০০ সেনা নিয়ে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পরিচালিত হচ্ছে ভারতীয় হামলা, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্রমণ ঘটছিল কোম্পানি পর্যায়ে (১২০ সদস্যবিশিষ্ট)।

সীমান্তবর্তী বিশেষ কিছু অঞ্চলে ঘটছিল পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর ভারতীয় ভারী কামানের গোলাবর্ষণ। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় পাকিস্তানি অবস্থান সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে ভুল হচ্ছিল না গোলন্দাজদের।

কামানের গোলায় সীমান্তবর্তী পাকিস্তানি অবস্থান কেঁপে উঠছিল মুহুর্মুহু আর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণাভিযানে গোটা দেশব্যাপী পাকিস্তানি অবস্থান হয়ে উঠছিল থরহরি কম্পমান।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়