দুই আসামির স্বীকারোক্তি
দৃষ্টি নিউজ:
যমুনা সেতু-ঢাকা মহাসড়কের রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত আন্ত:জেলা ডাকাত দলের তিনজনের মধ্যে দুইজন শরীফ ও সবুজ টাঙ্গাইলের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অপরজন মুহিত স্বীকারোক্তি দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে পাঁচদিনের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের(রিমান্ড) আদেশ দেয় আদালত। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দুইটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত দুইজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ(রেকর্ড) করেন টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নওরিন করিম। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই আহসানুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এসআই আহসানুজ্জামান জানান, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শরীফ ও সবুজ ঘটনার পূর্বাপর বর্ণনা দিয়েছেন। তারা দুজন জীবনে প্রথম ওই ঘটনায় জড়িত হন। চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় তারা দুজন, গ্রেপ্তারকৃত মুহিত এবং শ্যালক-দুলাভাই সহ মোট সাত জন অংশ নেয়। বাসে ডাকাতির সময় দুইজন নারী যাত্রীর কাছ থেকে বিভিন্ন অলংকার জোর করে নেওয়ার সময় তাদের উপর যৌন নিপীড়ন চালায় তারা।
এরআগে শুক্রবার(২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকার সাভার থেকে টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি) তাদের গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে লুটকরা তিনটি মোবাইল ফোন, একটি ছুরি ও নগদ ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে শরিয়তপুরের জাজিরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. ইসমাইল মোল্লার ছেলে মো. সবুজ (৩০) এবং ঢাকার সাভার উপজেলার টানগেন্ডা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মো. শরীফুজ্জামান ওরফে শরীফ (২৮) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
গ্রেপ্তারকৃত অপর আসামি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর সদর উপজেলার লাউতারা গ্রামের মো. বদর উদ্দিন শেখের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল ওরফে মুহিতকে (৩০) পাঁচদিনের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের(রিমান্ড) আবেদন করে আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালত পাঁচদিনের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের(রিমান্ড) আবেদন মঞ্জুর করেন। তার বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানায় একটি ও ঢাকার সাভার মডেল থানায় একটি বাস ডাকাতির মামলাসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে।
প্রকাশ, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি(সোমবার) দিনগত মধ্যরাতে আমরি ট্রাভেলস নামক বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের উপর যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। বাসের যাত্রীদের ভাষ্যমতে, সোমবার রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাসটি ছাড়ে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাসটিতে ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কয়েকজনকে রক্তাক্ত করে ডাকাতি শুরু করে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে বাসটিকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ডাকাতি ও নারীর শ্লীলতাহানি করার পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের নির্জন স্থানে বাস থামিয়ে ডাকাতদল নেমে যায়। ডাকাতরা বাস থেকে নেমে যাওয়ার পর চালক বাসটি নিয়ে গন্তব্যে যেতে অস্বীকৃতি জানান। পরে যাত্রীদের চাপের মুখে চালক বাস নিয়ে পুনরায় যাত্রা শুরু করেন।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার পর যাত্রীরা বাসটি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় নিয়ে যান। এসময় ডাকাতিতে জড়িত সন্দেহে বাসের চালক বাবলু আলী (৩০), সুপারভাইজার সুমন ইসলাম (৩৩) ও হেলপার মাহবুব আলমকে (২৮) আটক করে ৫৪ ধারায় মামলা দিয়ে নাটোর আদালতে পাঠায় বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ। পরে তারা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। বুধবার(১৯ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। অবশেষে ঘটনার তিনদিন পর বৃহস্পতিবার(২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে মির্জাপুর থানায় ওমর আলী নামে এক যাত্রী মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর হওয়ায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে নামে এবং মামলা হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল ওরফে মুহিত, মো. সবুজ এবং মো. শরীফুজ্জামান ওরফে শরীফকে ঢাকা জেলার সাভার থানার গেন্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে। এ নিয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান তার কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনও করেন।