প্রথম পাতা / টাঙ্গাইল / কালিহাতী /
বিএনপির সম্মেলনের দাবিতে ফুঁসছে ত্যাগীরা
By দৃষ্টি টিভি on ৯ মে, ২০২২ ১২:৪২ অপরাহ্ন / no comments
বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইল জেলা জাতীয়তাবাদী দলের(বিএনপি) মেয়াদোত্তীর্ণ বিতর্কিত আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আহ্বায়ক কমিটি গঠনে তৃণমূলের প্রতিফলন না ঘটায় দলের মধ্যে ব্যাপক কোন্দল, রেষারেষী, দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের কারণে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি চলছে ঢিমেতালে।
দলের ত্যাগী ও অবদান রাখা নেতারা আহ্বায়ক কমিটি থেকে বাদ পড়ায় তারা এখন সম্মেলনের জন্য মুখিয়ে রয়েছে। দলের অধিকাংশ নেতাই সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে(প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ) কমিটি গঠনের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে।
২০২১ সালের ৪ নভেম্বর ঘটা করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ট আহমেদ আযম খানকে আহ্বায়ক ও মওলানা ভাসানীর দৌহিত্র মাহমুদুল হক সানুকে সদস্য সচিব করে ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে দলের দু:সময়ের কান্ডারীরা স্থান না পাওয়ায় বিএনপি একেবারে অগোছালো হয়ে পড়ে। নিজেদের মধ্যে হানাহানি ও মারামারি বৃদ্ধি পায়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভিডিও বার্তার মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করায় তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিএনপির সাংগঠনিক কমিটি বিলুপ্তির তিন মাস পর নানা কার্যক্রম বিবেচনা করে গত ১০ মার্চ(বৃহস্পতিবার) টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলা ও ১১টি পৌরসভার মধ্যে ৮টি উপজেলা ও ৭টি পৌরসভায় নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। অভিযোগ রয়েছে, দলীয় গঠনতন্ত্র লংঘন করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দোহাই দিয়ে ঢাকায় হোটেলে বসে বিরিয়ানী খেয়ে পছন্দের নেতাদের দিয়ে আহমেদ আযম খান ওই আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছেন।
ওই কমিটির আহ্বায়ক, যুগ্ম-আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরা রাজনীতির মাঠে একেবারেই অপরিচিত। তাদের চেয়ে সিনিয়র ও দলের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে নগদ অর্থের বিনিময়ে ওই ১৫টি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই ১৫টি আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদনে জেলার আহ্বায়ক আহমেদ আযম খান সাক্ষর করেন। জেলা আহ্বায়ক কমিটির অন্য কেউ প্রথমে সাক্ষর করেন নি। জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু ওই কমিটিতে সাক্ষর করতে সরাসরি অপারগতা প্রকাশ করেন।
পরে কেন্দ্রীয় বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জেলার সদস্য সচিবকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে কমিটির কাগজে সাক্ষর করতে বাধ্য করেন।
যাদেরকে দিয়ে ওই ১৫টি আহ্বায়ক কমিডটি গঠন করা হয়েছে তাদেরকে দিয়ে কখনোই রাজনীতির মাঠে কোন আন্দোলন-সংগ্রামেই হাওয়া দিতে পারবেনা, আন্দোলন-সংগ্রাম বিফলে পরিগণিত হবে- এটা প্রায় নিশ্চিত। আন্দোলন-সংগ্রাম বেগবান করতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের কোন বিকল্প নেই।
ফলে ঘোষিত ওই ১৫টি আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দলের অভ্যন্তরে অসন্তোষ দেখা দেয়। ৫-টি এলাকায় নিজেদের মধ্যে পুরোদস্তর মারামারী হয়। এরমধ্যে ঘাটাইল উপজেলা ও পৌর শাখা, কালিহাতী উপজেলা ও পৌর শাখা, মধুপুর উপজেলা ও পৌর শাখায় নিজেদের মধ্যে মারামারী উল্লেখযোগ্য।
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি গত ১২ মার্চ ঘাটাইল বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি দেয়। দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহন না করে দল এড়িয়ে চলা কর্মীরা পুরস্কার পেয়েছেন ঘাটাইল উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতারা। ঘাটাইল উপজেলায় সিরাজুল হক সানাকে আহ্বায়ক ও আবুবক্কর সিদ্দিকীকে যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং আলহাজ মো. বেল্লাল হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
অপরদিকে, ঘাটাইল পৌর সভায় মো. আব্দুল বাছেদ করীমকে আহ্বায়ক ও মো. আনোয়ার হোসেন হেলালকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। ঘোষিত দুটি কমিটিতে নিষ্ক্রয় ও দুঃসময়ে দল এড়িয়ে চলা নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বঞ্চিতরা।
গত এক যুগে দুই দফা সরকার বিরোধী আন্দোলন সহ দলের কর্মসুচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এ দুই কমিটির অনেক নেতা মামলা-হামলা এবং জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। অথচ আহ্বায়ক কমিটিতে তাদের ঠাঁই হয়নি।
ঘাটাইল পৌর বিএনপির সাবেক কমিটির সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র মঞ্জুরুল হক মঞ্জু জানান, দু:সময়ে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন তাদের অবজ্ঞা করে ওই সময়ে যারা নিষ্ক্রয় ছিলেন এবং দল এড়িয়ে চলেছেন তাদের হাতে নতুন নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহন না করেও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার রেওয়াজ চালু হলো- এটা বিএনপির জন্য শুভকর নয়।
জেলা আহ্বায়ক কমিটি কর্তৃক ঘোষিত ১৫টি আহ্বায়ক কমিটিতে নিস্ক্রিয়দের পদায়ন হওয়ায় তারা উল্লাস করেছে। কিন্তু ত্যাগী, কর্মঠ ও দু:সময়ে অবদান রাখা নেতাকর্মীরা রাগে, ক্ষোভে, কষ্টে ও অপমানে ফুঁসছে।
স্থানীয় পর্যায়ে অপরিচিত এবং নেতাকর্মীদের কাছে অগ্রহনযোগ্য আহমেদ আযম খানকে নামকাওয়াস্তে জেলা আহ্বায়ক মনোনীত করায় এক সময়ের রাজপথ কাঁপানো নেতা লুৎফর রহমান খান আজাদ, মাইনুল ইসলাম, আলী ইমাম তপন, অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল, মির্জা শহীদুল ইসলাম লিটন, মো. ছাইদুল হক ছাদু, হাসানুজ্জামিল শাহীন, আশরাফ পাহেলী, সরকার শহীদ, ফকির মাহবুব আনাম স্বপন, শুকুর মাহমুদ, আলী আকবর জব্বার, শাফী খান, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হালিম প্রমুখ দলীয় কর্মকান্ড থেকে এক প্রকার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
নেতাকর্মীদের দাবি, আহ্বায়ক কমিটি যেমনই হয়েছে- সম্মেলনের মাধ্যমে ত্যাগী ও দু;সময়ে অবদান রাখা নেতাদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হোক। তবেই অভ্যন্তরীন কোন্দল নিরসনের পাশাপাশি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সরকার পতন আন্দোলন-সংগ্রাম বেগবান হবে।
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু জানান, জেলার ৮টি উপজেলা ও ৭টি পৌরসভায় নতুন আহ্বায়ক, যুগ্ম-আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও সদস্য পাঁচ শতাধিক নেতার পদায়ন হয়েছে।
কিছু দিনের মধ্যে বাকি উপজেলা ও পৌরসভাগুলোতে নতুন আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে সাংগঠনিক তৎপরতা চলছে। তারপরই জেলা সম্মেলনের আয়োজন করা হবে।
মন্তব্য করুন
সর্বশেষ আপডেট
-
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব পানি দিবস উদযাপিত
-
টাঙ্গাইলের তিনটি উপজেলা গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা
-
সৌদিতে বৃহস্পতিবার- বাংলাদেশে শুক্রবার থেকে রোজা
-
ঘাটাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে জরিমানা
-
কালিহাতীতে পাট চাষীদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ
-
শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে টাঙ্গাইলে শিক্ষকদের মানববন্ধন
-
টাঙ্গাইলে আন্তর্জাতিক বন দিবস উদযাপিত
-
টাঙ্গাইলে ডিবি পরিচয়ধারী চার ব্যক্তি আটক
আপডেট পেতে লাইক করুন
