গ্রেপ্তার হচ্ছেন ভাড়াটে খুনি সহ ৫০ মাস্টারমাইন্ড ও ৯২ পুলিশ কর্মকর্তা
দৃষ্টি ডেস্ক:
জুলাই-আগস্টে গুলি চালানোর ঘটনায় সরাসরি অংশ নেওয়া ভাড়াটে খুনি ও নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অন্তত ৩১৪ টি মামলা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে- রাজধানীর উত্তরায় আন্দোলন চলাকালে গুলি চালিয়ে লাশ ফেলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করা শতাধিক পুলিশ সদস্য ও ভাড়াটে খুনি মো. বাবলু শেখের নেতৃত্বে ৫০ জন হত্যাকারী কিলিং মিশনে অংশ নেয়।
ঢাকা বিভিন্ন পয়ন্টে ভাড়াটে খুনি মো. বাবলু শেখ ও তার সহযোগী খুনিরা পুলিশের সাথে মিশে জুলাই-আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। এরইমধ্যে পুলিশের সাবেক দুই আইজিপি একেএম শহিদুল হক এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ-আল-মামুন গ্রেপ্তার হয়েছেন। আদালতের নির্দেশে পুলিশের সাবেক আরও অন্তত ৯২ কর্মকর্তা ও ভাড়াটে খুনি সহ ৫০ জন মাস্টারমাইন্ড গ্রেপ্তার হতে পারেন। এদের মধ্যে ভাড়াটে খুনি মো. বাবলু শেখ টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার কাগমারী পাড়া গ্রামের মৃত আকাব্বর শেখ ওরফে আকবরের ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাড়াটে খুনি মো. বাবলু শেখ কাগমারী পাড়া বাজারে নামমাত্র একটি চায়ের দোকান নিয়ে বসে থাকতেন। জুলাই-আগস্টে তার চায়ের দোকান প্রায়ই বন্ধ থাকতো। এলাকাবাসী বাবলু শেখকে একজন চরিত্রহীন ও যৌন ব্যবসায়ী হিসেবে জানে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিনিয়ত বাবলু শেখের কাছে অপরিচিত লোকজন আসা-যাওয়া করায় সন্দেহের কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফলে এলাকাবাসী টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিকার চেয়ে একটি লিখিত আবেদন করে। এরআগে গ্রামবাসীর স্বাক্ষর যুক্ত একটি আবেদন ভূঞাপুর থানার ওসির কাছে দেওয়া হয়। কিন্তু কোন ফলাফল এলাকাবাসী পায়নি।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ নেতা জাহিদ হাসান ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হলে মো. বাবলু শেখ তার নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম বাবু ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হলে তাকে বিজয়ী করতে স্ত্রী মোছা. আঁখি বেগম সহ দলবল নিয়ে শ্রম দিয়ে নির্বাচিত করেন। ওই নির্বাচনে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বাবলু শেখ তার স্ত্রী মোছা. আঁখি বেগমকে নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে কাজে লাগায়। এছাড়া ওই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ নেতা মো. ফিরোজ চৌধুরীর পক্ষে বাবলু শেখ তার ভাড়াটে গুন্ডাদের নিয়ে কাজ করেন।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে জানায়, মো. বাবলু শেখ স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহিদ হাসানের সঙ্গে বাইকযোগে তৎকালীন এমপি তানভীর হাসান ছোটমনিরের মহড়ায় অংশ নিয়েছেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় একাধিক মামলার আসামি মো. বাবলু শেখ এলাকায় নিরাপদে বসবাস করতে আওয়ামী ভোলপাল্টে বিএনপিতে যোগ দিতে স্থানীয় বিএনপির কতিপয় নেতাকে তিন লাখ টাকা নজরানা দিয়েছেন। রাজধানী ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও ভূঞাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গণহত্যার ভাড়াটে খুনি হিসেবে পোস্টার সাটানো দেখে ভূঞাপুর থানা পুলিশ এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সম্প্রতি মো. বাবলু শেখকে আটক করে। পরে স্থানীয় বিএনপির ২-৩ নেতা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিএনপির সদস্য পরিচয় দিয়ে তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন।
খুনের মামলায় অভিযুক্ত মো. বাবলু শেখের চাচাত ভাই মো. এখলাছ শেখ জানান, তার ভাই মো. বাবলু শেখের নানাবিধ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। তারবিরুদ্ধে গ্রামবাসীর সাক্ষরযুক্ত প্রকিারের আবেদনে কোন সুফল না হওয়ার কারণে গ্রামবাসী অতিষ্ঠ হয়ে কাগমারীপাড়ার সব সমাজ থেকে তাকে সামাজিকভাবে বয়কট করে ‘একঘরে’ করে রেখেছে।
জানা যায়, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪০টি মামলা হয়েছে ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে, ৩৭টি মামলার খর্গ নিয়ে এর পরের অবস্থানে রয়েছেন পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আলমামুন। সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৩৩টি, ২৭টি মামলা হয়েছে ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের বিরুদ্ধে, স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা হয়েছে।
এছাড়া ডিএমপি ওয়ারী বিভাগের ভিসি ইকবাল হোসাইনের নামে ৮টি, যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার এসএম মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে ৮, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদের নামে ৫ এবং ভাড়াটে খুনির নেতৃতে¦ থাকা মো. বাবলু শেখের বিরুদ্ধে ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দায়েরকৃত মামলাগুলোর মধ্যে অধিকাংশ হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রকাশ, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোকালে পুলিশের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ভাড়াটে খুনিরাও জড়িত ছিল। এতে অন্তত এক হাজার পাঁচশ’ মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার আহত হন।