আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা
দৃষ্টি নিউজ:
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন টাঙ্গাইলের সাবেক এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির সহ পাঁচ আওয়ামীলীগ নেতা। রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ খানের দক্ষিণ মোল্লার টেকের কাজী মনিরের মেয়ে তাছলিমা কাজী গত ২২ সেপ্টেম্বর ওই অভিযোগটি দাখিল করেন।
মামলায় অভিযুক্ত ২৩৮ জনের মধ্যে টাঙ্গাইলের সাবেক এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির, পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর সাইফুজ্জামান সোহেল ও আমিনুর রহমান আমিন ওরফে ক্যাডার আমিন আত্মগোপণে রয়েছেন। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামীলীগের অর্থ যোগানদাতা ভূঞাপুরের ছাব্বিশা এলাকার ব্যবসায়ী নেতা ফজলু মল্লিক ও ক্যাডার বাবলু শেখ প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
মামলার অভিযোগে প্রকাশ, ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমন করার জন্য গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চ মহল থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সরকারি দল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগসহ তাদের অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসীদেরকে সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর লেলিয়ে দেয়। তাদের হামলায় রাজধানী ঢাকার উত্তরা মডেল টাউনের জসিম উদ্দিন ফ্লাইওভারের আশপাশে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সূত্রমতে, এদিন উত্তাল ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে উত্তরার জসিম উদ্দিন ফ্লাইওভারের উপরে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে আরও অজ্ঞাত ৪০-৫০ জন লোক সমবেত হতে থাকে। তখন উত্তর দিক থেকে আসা কালো মাইক্রোবাস থেকে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান সোহেল, সাবেক কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম আমিন ওরফে ক্যাডার আমিন, জেলার ভূঞাপুরের ব্যবসায়ী ফজলু মল্লিক ও অস্ত্রধারী ক্যাডার বাবলু শেখ স্বশস্ত্র অবস্থায় নামেন। এরপর দক্ষিণ দিক থেকে একটি সাদা প্রইভেটকার নিয়ে সাবেক ডিবি প্রধান মো. হারুন অর রশিদ ফ্লাইওভারের ওপরে নামেন। সেথানে নেমেই তিনি পুলিশ সদস্যদের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মিছিলে গুলি করতে হুকুম দেন। তখন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে থাকা সবাই মিছিলের ওপর গুলি চালায়।
মো. হারুন অর রশিদের পর পর ছোঁড়া দুইটি গুলি মিছিলে অংশ নেওয়া জসিমের পায়ে হাঁটুর একটু উপরে বিদ্ধ হয়। আহত জসিম উদ্দিনকে সতীর্থরা উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসার পরও পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় পরদিন অর্থাৎ ৬ আগস্ট(মঙ্গলবার) দুপুর ৩টার দিকে জসিম উদ্দিনের মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনায় নিহত জসিম উদ্দিনের চাচাত বোন তাছলিমা কাজী বাদী হয়ে উল্লেখিত ব্যক্তিরা সহ ২৩৮ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও অন্যান্য ব্যক্তিদের আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৭৩ এর ৩(২)/৪(১)/৪ (২) ধারায় অপরাধ ও গণহত্যার অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মামলা দায়ের করেছেন।
আত্মগোপণে থাকায় টাঙ্গাইল-২(গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সাবেক এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান সোহেল, পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামীলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন ওরফে ক্যাডার আমিনের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ভূঞাপুরের আকবর শেখের ছেলে ভাড়াটে খুনি বাবলু শেখ জানান, স্থানীয় সাবেক এমপি তানভীর হাসান ছোট মনিরের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু মামলার বিষয়ে তিনি এখনই কিছু বলতে পারবেন না।
আওয়ামীলীগের অর্থ জোগানদাতা ভূঞাপুরের ছাব্বিশা এলাকার ফয়েজ মল্লিকের ছেলে ব্যবসায়ী ফজলু মল্লিক জানান, তাঁর নামে ঢাকায় মামলা হয়েছে কি না তা তিনি জানেন না। তবে এমপি থাকাকালে ছোট মনিরের সঙ্গে তিনি চলাফেরা করেছেন।
মামলার বাদী তাছলিমা কাজী জানান, দায়েরকৃত মামলায় আওয়ামীলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা সহ ২৩৮ জনের নাম উল্লেখ করেছেন এবং অজ্ঞাত ব্যক্তিরাও আসামি রয়েছে। মামলা দায়ের করার পর পত্র-পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় আসামিরা তাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে তাঁকে গুম করে ফেলা হবে বলেও মোবাইল ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় বক্ত করেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, এ ধরনের অনেকগুলো মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ক্রমান্বয়ে সেগুলোর কার্যক্রম শুরু হবে এবং যথাসময়ে ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করবেন।
তিনি আরও জানান, গণহত্যার অপরাধ করে যাতে কেউ পাড় পেয়ে না যায় সে বিষয়টি তাঁরা আন্তরিকভাবে দেখছেন। অপরাধী যেই হোক শাস্তি তাকে পেতে হবে।
প্রকাশ, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় আওয়ামীলীগ সরকারের পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। ওই সময় ছাত্র-জনতার আন্দোলন সরকার পতনের এক দফায় পরিণত হয়।
আন্দোলন দমানোর জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ প্রত্যেক জেলায় জেলায় দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়। আন্দোলন দমানোর পরামর্শদাতা ছিলেন পাঁচজন। আওয়ামীপন্থী ৫০ জন ব্যবসায়ী আন্দোলন দমাতে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেন।
ওই সময় টাঙ্গাইল জেলায় অর্থ সংগ্রহের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন, ভূঞাপুর উপজেলার ছাবিবশা গ্রামের ফয়েজ মল্লিকের ছেলে ব্যবসায়ী ফজলু মল্লিক।