সম্পাদকীয়:
দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদার সাড়ে ৮৭ শতাংশই আমদানিনির্ভর। দুই ধরনের ভোজ্যতেল-অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম অয়েল-আমদানি করা হয়। আর গুটিকয় কোম্পানিই তা আমদানি করে। আমদানির প্রায় ৪৮ শতাংশই এ তিন কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করে। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে বাজারে তেলের কৃত্রিম সরবরাহ সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করার অভিযোগ রয়েছে। এখন সরকারের উচিত ভোজ্যতেল আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়া।
বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠান ভোজ্যতেল আমদানির সুযোগ পেলে বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি হবে। এতে কোনো কোম্পানি বিশেষ সংকটে কারসাজি করে দাম বাড়ানোর সুযোগ পাবে না। এছাড়া সরকার যখন কোনো পণ্যের দাম বেঁধে দেয়, তখন তা যথাযথ কার্যকরও করতে হবে। অন্যথায় অস্থিরতা আরো বাড়বে।
সরকারের নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি নিশ্চিত করতে বাজার তদারকি বাড়াতে হবে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা গেলে অধিক সুফল পাওয়া যায়। একই সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) কাজে লাগানো উচিত।
যেহেতু ভোজ্যতেলের সিংহভাগই আমদানিনির্ভর সেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম সামান্য বাড়লেই দেশের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এছাড়া আমদানি গুটিকয় কোম্পানির হাতে নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় পণ্যটির কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ভোক্তাদের একপ্রকার জিম্মি করা হয়। সম্প্রতি বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকায় ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দাম বাড়ানোর অনুমোদনের প্রস্তাব দিয়েছে কয়েক দফায়। কিন্তু দেশে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে ভোগ্যপণ্যের বাজারে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সামাল দিতে দাম বাড়ানোয় অনীহা দেখিয়েছে সরকার।
ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধিতে সার্বিক পণ্যবাজারে অস্থিতিশীলতা আরো বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দাম না বাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দিতে প্রথম দফায় ১৭ অক্টোবর ও দ্বিতীয় দফায় ১৯ নভেম্বর শুল্ককর কমিয়ে তা ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল। দুই দফায় শুল্ক কমানোয় লিটারপ্রতি দাম ১০ টাকা করে কমলেও বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। যেহেতু সরকার দাম বাড়াতে অনাগ্রহী তাই ব্যবসায়ীরা কৌশলে দাম বাড়ানোর চাপ তৈরি করেন। বাজারে তৈরি করা হয় কৃত্রিম সংকট।
সয়াবিন তেল একেবারে উধাও হয়ে যায় বাজারে। বিশেষ করে বোতলজাত সয়াবিন। খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছিল এ কারণে যে সেটা বেশি দিন গুদামজাত করলে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তখন বলা হলো আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানি কম। তাই বাজারেও সরবরাহ কম। তেলের সরবরাহ ঠিক রাখতে সরকার লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করে। নতুন দাম নির্ধারণে সরবরাহ সংকটও কেটে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, দাম নির্ধারণের দুইদিনের মধ্যে কীভাবে সরবরাহ স্বাভাবিক হলো?
নতুন দাম নির্ধারণের পর আন্তর্জাতিক বাজারেও ভোজ্যতেলের দাম কমতে শুরু করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো পণ্যের দাম একবার বাড়লে এর দাম আর কমতে দেখা যায়নি। বরং যেকোনো অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়তে দেখা গেছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে ভোগান্তিতে পড়েন ভোক্তারা।
ভোজ্যতেলের বাজারের এ ধরনের কারসাজি বন্ধ করতে আমদানিকারকের সংখ্যা বাড়িয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা দরকার। এতে সরবরাহ বাড়বে। যেসব প্রতিষ্ঠান কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের লাইসেন্স বাতিলসহ শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।