আজ- শুক্রবার | ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫
১০ মাঘ, ১৪৩১ | রাত ১২:৪৭
২৪ জানুয়ারি, ২০২৫
১০ মাঘ, ১৪৩১
২৪ জানুয়ারি, ২০২৫, ১০ মাঘ, ১৪৩১

মির্জাপুরে মা ও তিন মেয়ে পুড়িয়ে হত্যা মামলার বিচার তিন বছরেও শুরু হয়নি

দৃষ্টি নিউজ:


টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ঘরের ভেতর পেট্রোল ঢেলে মা ও তিন মেয়েকে পুড়িয়ে মারার চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার কাজ থেমে গেছে। জামিনে বেড়িয়ে কতিপয় আসামী উচ্চ আদালতে আপিল করলে আদালতের স্থগিতাদেশে মামলাটির বিচার কাজ গত তিন বছরেও শুরু হয়নি। মর্মান্তিক ও লোমহর্ষক এই ঘটনার তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও বিচার শুরু না হওয়ায় মামলার বাদী ও নিহতদের পরিবারে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানাগেছে, বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মির্জাপুর উপজেলার সোহাগপাড়া গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী মজিবর রহমানের স্ত্রী হাসনা বেগম ও তিন মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী মনিরা আক্তার (১৪), বাক প্রতিবন্ধী মীম (১১) ও নার্সারীর ছাত্রী মলিকে (৭) বিগত ২০১৪ সালের ৭ অক্টোবর ইদুল আযহার রাতে ঘরে পেট্রোল ঢেলে ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা করে একই গ্রামের বাহার উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর ও তার সহযোগীরা। ঘাতক জাহাঙ্গীর ঘটনার দিন সন্ধ্যায় এক রিকশাওয়ালাকে দিয়ে স্থানীয় মাছরাঙা ফিলিং স্টেশন থেকে প্রায় ৩০ লিটার পেট্রোর কিনে আনেন।
নিহত হাসনা বেগমের ছোট ভাই মোফাজ্জল হোসেন ঘটনার পরদিন জাহাঙ্গীরকে প্রধান করে ১০ জনের নামে মির্জাপুর থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মির্জাপুর থানার তৎকালীন এসআই শ্যামল দত্ত তদন্ত শেষে বিগত ২০১৫ সালের (২৫ ফেব্রুয়ারি) জাহাঙ্গীর ও তার চাচাত ভাই নূর মোহাম্মদ নিপু এবং ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজারসহ চার কর্মচারীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে বাদী নারাজি দিলে আদালত মামলাটি সিআইডিতে প্রেরণ করেন। সিআইডি তদন্ত শেষে গত ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। এই প্রতিবেদনে ৬ আসামীর সঙ্গে আরও দুই আসামীর নাম যুক্ত করা হয়। এদিকে মামলার আসামী নূর মোহাম্মদ নিপু কোর্টে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়। এতে হারুন অর রশিদ নামে একজন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে সে জবানবন্দিতে উল্লেখ করে। সিআইডির প্রতিবেদনে হারুন অর রশিদের নাম ছিল না। পরবর্তীতে কোর্ট গত ২০১৬ সালের ১৬ জুন চার্জ গঠনের মাধ্যমে হারুন অর রশিদকে মামলায় অভিযুক্ত করে বিচার কাজের জন্য সাক্ষী গ্রহনের আদেশ দেন। মামলাটি টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে বিচারাধীন। কিন্তু এই আদেশের বিরুদ্ধে হারুনসহ কতিপয় আসামী হাইকোর্টে (উচ্চ আদালতে) আপিল করলে আদালত মামলাটির উপর ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেন। এতে দেশের এই আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলাটির বিচার কাজ থেমে যায়। প্রধান আসামী জাহাঙ্গীর জেলহাজতে থাকলেও অন্য সব আসামী জামিনে বেড়িয়ে এসেছে।
মা ও তিন মেয়ে পুড়িয়ে হত্যার মামলার বাদীর নাম মোফাজ্জল হোসেন। তিনি হাসনা বেগমের ছোট ভাই। এক প্রতিক্রিয়ায় বাদী মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমি কিছু বুঝতে পারছিনা। দেশে অনেক ছোট ঘটনার বিচার হচ্ছে। কিন্তু এত বড় মর্মান্তিক ঘটনার বিচার কাজ স্থগিত হয় কিভাবে? তিন বছর হয়ে গেল সাক্ষীই হলো না। আমরা বারবার সাক্ষী নিয়ে যাই কিন্তু সাক্ষী হয় না। তিনি আরও বলেন, এক আসামী বাদে সব আসামী জামিনে বেড়িয়ে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে। এত বড় একটি মামলা কতিপয় আসামীর আপিলে বিচার কাজ স্থগিত হয়ে যাবে ভাবতে অবাক লাগছে। আমরা কি তাহলে বিচার পাব না? এই হৃদয় বিদারক মামলাটির বিচার কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
মামলার সরকারি কৌঁশুলী সহকারী পিপি মনিরুল ইসলাম খান বলেন, মা ও তিন মেয়ে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় দেশবাসী স্তম্ভিত হয়েছিল। মামলাটিতে বারবার সাক্ষীর তারিখ পড়েছে। কিন্তু হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকায় সাক্ষী হচ্ছে না। এত বড় একটি মামলার বিচার কাজ যদি থেমে থাকে তাহলে আইনের প্রতি বিচার প্রার্থী বিশ্বাস হারাতে পারেন।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়