আজ- শুক্রবার | ৭ নভেম্বর, ২০২৫
২২ কার্তিক, ১৪৩২ | রাত ৩:৩৮
৭ নভেম্বর, ২০২৫
২২ কার্তিক, ১৪৩২
৭ নভেম্বর, ২০২৫, ২২ কার্তিক, ১৪৩২

রসুলপুরে ‘জামাই’দের ভিড় কমছে না

দৃষ্টি নিউজ:

dristy.tv pi-17টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘জামাই মেলা’ বৃহস্পতিবার(২৭ এপ্রিল) কার্যত শেষ হলেও শুক্রবার(২৮ এপ্রিল) মেলায় উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। বৃহস্পতিবার মেলা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় মেলা উপলক্ষে বেড়া আসা এলাকার ‘জামাই’রা চলে যাচ্ছেন না। ফলে ‘জামাই’দের ভিড় কমছে না, মেলা আরো কয়েকদিন চলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের রসুলপুরে শত বছর ধরে চলে আসা বাঙালি সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে এই ‘জামাই মেলা’। প্রতিবছর ১১, ১২ ও ১৩  বৈশাখ (সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে) টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজন করা হয় এই মেলার। তিন দিনে রসলপুরসহ আশেপাশের  অন্তত:  ৩০টি গ্রামের লাখো মানুষের সমাগম ঘটে এই মেলায়। রসুলপুর এলাকার বয়োবৃদ্ধ-যুবারা বলেন, এই মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার সব বিবাহিত মেয়েরা বরকে সাথে নিয়ে বাবার বাড়ি বেড়াতে আসেন। বর শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসে মেলায় যান। জামাইকে মেলা উপলক্ষে বরণ করে নেবার জন্য শাশুড়িরা বেশ আগে থেকেই নানা প্রস্তুতি নেন। মেলায় যাওয়ার আগে শাশুরি ‘জামাই’র হাতে কিছু টাকা তুলে দেন কেনাকাটার জন্য। আর সেই টাকার সাথে আরও টাকা যোগ করে জামাইরা মেলা থেকে চিড়া, মুড়ি, আকড়ি, মিষ্টি, জিলাপিসহ বিভিন্ন জিনিস কিনেন। তারাই মেলার মূল আকর্ষণ- এ কারণেই  মেলাটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে।
সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন দোকানীরা তাদের জিনিসপত্র নিয়ে বসে আছে, ক্রেতারা নানা পণ্য কিনছেন। বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলে-মেয়ারা এই মেলা বেশি উপভোগ করছেন। এ মেলায় ঘরের আসবাবপত্রের দোকানপাট দেখে ‘ফার্ণিচার মেলা’ বলে ভুল হতে পারে। বাহারি ডিজাইনের হরেক রকমের ঘর সাজানো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা মেলাটি। মেলাকে সামনে রেখে ছোট ছেলে-মেয়েদের জন্য আয়োজন করা হয় নানা বিনোদন ব্যবস্থার। মেলায় থাকে ছোট-বড়  প্রচুর স্টল, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, কসমেটিকস, খাবারের দোকান। ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় ব্যবসা করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া, শিশুদের জন্য রয়েছে  মোটর সাইকেল খেলা, নাগরদোলা সহ নানা আয়োজন।dristy.tv pi-16
রসুলপুরের বাসিন্দা কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাশেদ রহমান বলেন, এই মেলার উৎপত্তি কবে সেটা কেউ জানে না। যুগ যুগ ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ এলাকার মানুষের কাছে ঈদ আর পূজাপার্বণের থেকেও এই মেলা বেশি উৎসবের। মেলাটি বৈশাখী মেলা হিসেবে ব্রিটিশ আমলে শুরু হলেও এখন এটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে অধিক পরিচিত।
রসুলপুরের পাশের গ্রাম শালিনার বাসিন্দা সাখওয়াত পারভেজ বলেন, এক মাস থেকে এই মেলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। লোকজন ছুটি নিয়ে মেলা দেখার জন্য আসেন। আগে বয়স্ক লোকজন এই মেলা উপভোগ করতো। এখন মধ্যবয়স্ক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা এই মেলা বেশি উপভোগ করেন। মেলায় মিষ্টি জাতীয় জিনিস ও ফার্ণিচার বেশি বিক্রি হয়।
জামাল হোসেন নামে রসুলপুরের এক জামাই বলেন, আমি স্বাধীনতার আগে বিয়ে করেছি। প্রতি বছরই আসি মেলায়। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বেঁচে থাকতে তারা আগে থেকেই দাওয়াত দিতেন। এখন তারা বেঁচে নেই। শ্যালক-শ্যালকের বউ এখন দাওয়াত দেয়।
রসুলপুরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নবপ্রজন্ম সাহিত্য গোষ্ঠীর সভাপতি মারুফ আহমেদ বলেন, আমাদের এই মেলা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এই মেলাকে কেন্দ্র্র করে এলাকায় দারুণ একটা প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তবে এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎসবের আমেজ কিছুটা কম। তারপরও আশা করছি,  আবহাওয়া ভালো হলে মেলা জমে উঠেবে।  তিনি আরো বলেন, আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি। এ কাজ করে আমরা প্রচুর আনন্দ পাই।
সিরাজগঞ্জ থেকে এক আসা রঞ্জুু নামে এক মিষ্টি দোকানদার বলেন, আমি এই মেলায় ৮ বছর ধরে আসছি। এখানে বিক্রি করে আমি লাভবান হই। আমি বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিক্রি করে থাকি। আরেক ব্যবসায়ী কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, মেলায় আমি ৬০ হাজার টাকা মালামাল নিয়ে এসেছি। আশা করছি এর বেশি বিক্রি করতে পারবো। তিনি বলেন, মেলায় আসতে আমাদের কোন সমস্যা হয়নি। মেলার কমিটির লোকজন বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করেছন।
মেলার আহ্বায়ক আতোয়ার রহমান বলেন, আমাদের  এ মেলায় শতাধিক দোকান বসেছে। প্রায় ১৫০ জন স্বেচ্ছায় মেলায় দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, আমাদের এই মেলা টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী মেলা। এই মেলায় শুরু হওয়ার আগেই গ্রামের জামাই এবং বউয়েরা আসেন। তারা বিভিন্নভাবে মেলা উপভোগ করে থাকেন। আমি ছোট বেলা থেকে এই মেলা দেখে আসছি। এই মেলার লাভের টাকা বিভিন্ন উন্নয়ন মূলককাজে জন্য ব্যয় করা হয়।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়