সম্পাদকীয়:
জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন (এনআইডি) কার্যক্রমে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে দুটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একটি কমিটি কাজ করবে উপজেলা পর্যায়ে, অন্যটি মেট্রোপলিটন এলাকায়। সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী।
কারণ কৌশলে বাংলাদেশের পাসপোর্ট করে বিদেশে পাড়ি দেয়ার মতো অপরাধে যুক্ত হয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা। ডাকাতি, ইয়াবা ও অস্ত্রের কারবারে জড়িয়ে পড়েছে তাদের অনেকে। নিজেদের মধ্যে হানাহানি-খুনাখুনিও প্রায় নৈমিত্তিক ঘটনা। দ্রুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে নতুন সরকারকে উদ্যোগ নেয়া দরকার। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের পাশাপাশি গোটা বাংলাদেশে রোহিঙ্গাবিরোধী একটা সেন্টিমেন্ট গড়ে উঠেছে।
সাধারণ মানুষ নিয়মিতভাবে নিত্যদিনের আলাপমালায় বলে থাকেন, প্রায় ৭ বছর হয়ে যাচ্ছে আর কত? এবার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হোক। জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন (এনআইডি) কার্যক্রমে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে ইসির এনআইডি অনুবিভাগ জানিয়েছে, কেউ ভোটার হতে এলে প্রয়োজনীয় শর্তপূরণে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্টদের আবেদন পাঠানো হবে বিশেষ কমিটিতে। সেখানে প্রমাণ হলেই কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন এবং এনআইডি পাবেন। সম্প্রতি এ দুটি কমিটি গঠনের চিঠি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে পাঠিয়েছে ইসি।
চিঠিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কেউ তাদের সহযোগিতা অথবা মিথ্যা তথ্য দেন অথবা জাল কাগজপত্র সরবরাহ করেন অথবা সংশ্লিষ্ট কারো গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা আইন-২০০৯, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০ এবং প্রচলিত অন্যান্য আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে। উদ্যোগটির কার্যকারিতা আমরা দেখতে চাই।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্বের পেছনে স্থানীয় একটি শক্তিশালী চক্র জড়িত বলে গণমাধ্যমে বারবার খবর আসছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাইয়ে দেয়ার পেছনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ সদস্য, নির্বাচন কমিশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মাঠপর্যায়ের দালাল চক্র জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এর জন্য ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়।
তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে জালিয়াতি করে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের এনআইডি পেয়েছে। অর্থাৎ ৪০ ভাগের মতো রোহিঙ্গার হাতেই এখন এনআইডি রয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার। রোহিঙ্গাদের ভোটার করা নিয়ে চট্টগ্রামে ১৮টি মামলা চলমান। মামলাগুলো অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন।
সারাদেশে কতজন রোহিঙ্গাকে ভোটার করা হয়েছে, এবার সে তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। ৮ আগস্টের মধ্যে হাইকোর্টে এই তালিকা দাখিল করার কথা। দাখিল হয়েছে কিনা আমাদের জানা নেই।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ঘুরেফিরে সামনে আসছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। দুই দফা সময় দিয়েও তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়নি। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত, চীন, রাশিয়ারও উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ নিয়মিত কূটনীতির অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করলেও সবাই চুপচাপ শুনছে, কোনো প্রতিক্রিয়া বা পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
এ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, স্থিতি এবং নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুর রাজনৈতিক সমাধান অপরিহার্য। প্রত্যাবাসন না হওয়ায় মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। বাড়ছে আঞ্চলিক সংকটও। বৈশ্বিক অস্থিরতা কিংবা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে পুঁজি করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করার কোনো সুযোগ নেই।