আজ- সোমবার | ২৪ মার্চ, ২০২৫
১০ চৈত্র, ১৪৩১ | সন্ধ্যা ৬:৫৬
২৪ মার্চ, ২০২৫
১০ চৈত্র, ১৪৩১
২৪ মার্চ, ২০২৫, ১০ চৈত্র, ১৪৩১

শিল্প খাতে অসন্তোষ- শ্রমিকদের স্বার্থ বিবেচনায় আনা উচিত

তৈরি পোশাক খাতে আবারো অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন। পোশাকশিল্প অধ্যুষিত এলাকায় বিক্ষোভ-ভাঙচুর হলে অন্তত ১৬৭ প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই যৌথবাহিনীর নিরাপত্তায় কাজে ফেরেন শ্রমিকরা।

সাভারের আশুলিয়া, গাজীপুর, টঙ্গী বিসিক, ভোগরা বাইপাস, বাঘের বাজার ও মাওনা এলাকায় কারখানায় শ্রমিকরা নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। তবে শিল্প খাতে শ্রমিক অসন্তোষ মাথাচাড়া দেয়ায় শিল্পমালিক ও সরকারের উদ্বেগ বাড়ছে।


জানা গেছে, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ‘ঝুট ব্যবসার’ কারণে অস্থির হয়ে ওঠে তৈরি পোশাক কারখানার পরিবেশ। তারা কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিক অসন্তোষকে কাজে লাগিয়েছে। এমন অভিযোগ করেছেন পোশাক শ্রমিক নেতারা। তবে মালিকরা বলছেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে তৃতীয়পক্ষ এখানে সক্রিয়। এ খাতে এমন অস্থিরতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নৈরাজ্য-অস্থিরতা পোশাক খাতের জন্য শঙ্কার বিষয়।

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিএমএর তথ্য বলছে, দেশে গত জুলাই ও আগস্ট এই দুই মাসের ছাত্র-জনতার আন্দোলন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদল এবং চলমান অস্থিরতার কারণে কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সময়মতো শিপমেন্ট করা যায়নি। ফলে কার্যাদেশ ধরে রাখতে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে হয়েছে। এতে বাড়তি খরচ পড়েছে। তা সত্ত্বেও ৪৫ শতাংশ কারখানার রপ্তানি আদেশ এ সময় বাতিল হয়েছে। এতে সামগ্রিকভাবে পোশাক ও বস্ত্র খাতে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে।


এ প্রেক্ষাপটে অনেক কারখানায় বেতন দিতে দেরি হচ্ছে। শ্রমিকদের মধ্যে বেতন-বোনাস নিয়ে অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। শ্রমিকরা বলছেন, বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মজুরি নির্ধারণ হোক। কারখানা শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছেন।

তৈরি পোশাক খাতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ রপ্তানিকারক বাংলাদেশ। অথচ শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম মজুরি পান এ দেশের শ্রমিকরা। এটা এক ধরনের নৈরাজ্য। বেতন-ভাতার দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের বারবার রাস্তায় নামতে দেখা যায়। অনেক চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে গত কয়েক দশকের পথপরিক্রমায় দেশের তৈরি পোশাকশিল্প আজকের এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। অনেক প্রতিকূলতা এবং দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প এগিয়ে যাচ্ছে অগ্রগতির পথে।


দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে পোশাকশিল্পের কোনো বিকল্প নেই। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশ থেকে যে রেমিট্যান্স আসছে তার অন্যতম খাত হলো গার্মেন্টস শিল্প। প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক অর্থ আয় করছে। যে কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে সে দেশের শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।

সময়ের প্রয়োজনে অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তনশীল ভোক্তা চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের বহুমুখীকরণ বা বৈচিত্র্যসাধন, কারখানায় আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও দক্ষ জনবল তৈরির মাধ্যমে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হলে পোশাকশিল্প দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। তবে শ্রমিকদের হক বঞ্চিত করে নয়। আমরা মনে করি, শ্রমিকদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সুরাহা করা উচিত।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়