আজ- শুক্রবার | ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
২৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | সকাল ৬:১৩
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
২৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১

সহজ ও সুলভ মূল্যে কৃষকের আলুবীজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে

সম্পাদকীয়:

দেশে ভাতের পরে অন্যতম খাদ্য উপাদান আলু। উৎপাদনের দিক থেকে ঘাটতি না থাকার পরও বাজারে অস্থিরতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে এ নিত্যপণ্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী। অস্থিতিশীল বাজারে প্রভাব পড়েছে আলুবীজের দামেও। কৃষককে বীজ আলুর জন্য বাড়তি দাম গুনতে হচ্ছে।

 

 

 

 

 

পত্রিকার প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কৃষককে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে মণপ্রতি ৭০০-১ হাজার টাকা বেশি দিয়ে আলুবীজ কিনতে হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, প্রতি কেজি বীজ আলু ৬৮ টাকায় বিক্রির কথা। অথচ বগুড়ায় গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি দরে। কুড়িগ্রামে আলুবীজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার অধিক মূল্যে। রংপুরে গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ দামে বীজ সংগ্রহ করতে হচ্ছে কৃষককে। গত বছর যে বীজ ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন কৃষক, সেটি এবার ১০০-১১০ টাকায় কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। একদিকে আলুবীজের দাম বেশি, অন্যদিকে সার-কীটনাশকসহ অন্যান্য খরচও বাড়ায় অনেক অঞ্চলের কৃষক আলু উৎপাদনে এরই মধ্যে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এদিকে দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা ৭৫-৮০ লাখ টনের মতো। সেখানে দেশে গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টনের কাছাকাছি। এ হিসাবে চাহিদার চেয়ে আলু উৎপাদন হয়েছে ৩০-৩৫ লাখ টন বেশি। চাহিদার তুলনায় বেশি উৎপাদনের পরও চাষের জন্য আলুবীজের সংকট ও চড়া দামের অন্যতম কারণ কৃত্রিম সংকট ও অপ্রতুল সরকারি বরাদ্দ। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আলুবীজের বাজারকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে। আবার ভুক্তভোগী কৃষকের মতে, সরকারিভাবে বরাদ্দ কম থাকায় ইচ্ছামতো আলুবীজের দাম বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। একমাত্র সরকারি বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ বরাদ্দের পরিসংখ্যানের দিকে লক্ষ করলে কৃষকের অভিযোগের বিষয়টি সত্য প্রতীয়মান হয়।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বিএডিসির তথ্য অনুযায়ী, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলায় আলু চাষের জমি বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার ২০২ হেক্টর। উল্টো ছয় বছরে বীজের সরকারি বরাদ্দ কমেছে প্রায় ১ হাজার ৪২৮ দশমিক ৭৫৯ টন। দেশে সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয় রংপুর বিভাগে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলের পাঁচ জেলায় আলুবীজের সম্ভাব্য চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার টন। সেখানে সরকারি বরাদ্দ মাত্র ২ হাজার ৭৯৭ দশমিক ৩২ টন বিএডিসি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আবার বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, এ বছর আলুর উৎপাদন মৌসুমে কৃষক ও আলু মজুদকারীরা প্রতি কেজিতে তুলনামূলক বেশি টাকা লাভ করায় আগামী বছরের জন্য ব্যাপক হারে আলু চাষ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বেড়েছে কৃষকের আগ্রহ। চাষের চাহিদা বাড়ায় আলুবীজের সংকট তৈরি হয়েছে এবং দামও বেড়েছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সুতরাং একদিকে চাহিদা বেড়েছে, অন্যদিকে বরাদ্দ কমেছে। সরকারি বরাদ্দ কম থাকলে অসাধু ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিকভাবেই এর সুযোগ লুফে নিতে চান। দাম বাড়িয়ে তারা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করতে চান। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ আবশ্যক। নয় তো বাড়তি দাম ও সরবরাহ সংকটের কারণে কৃষক আলু চাষে নিরুৎসাহিত হতে পারেন। কেননা কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুবীজের উচ্চদরের সঙ্গে যুক্ত হবে সার, কীটনাশক ও সেচ খরচ। চাষ কম হলে এর প্রভাব পড়বে উৎপাদনেও। এতে খাদ্য অনিরাপত্তার মতো সংকটগুলো আরো ঘনীভূত হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এমনিতেই টানা দুই বছরেরও অধিক সময় উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের সাধারণ জনগণের খাদ্য গ্রহণের তালিকা ছোট হয়ে এসেছে। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে আলুবীজের সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য প্রতিহত করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। তাছাড়া বিএডিসির আলুবীজ বেশ মানসম্পন্ন। তাই অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত বীজের চেয়ে এর চাহিদাও বেশি। এদিক বিবেচনা করেও সরকারি বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। আশঙ্কা রয়েছে মানসম্পন্ন বীজ না পেলে উৎপাদন প্রত্যাশিত হবে না। ফলে সর্বস্বান্ত হতে পারেন অনেক কৃষক।

 

 

 

 

 

 

 

 

দেশের অন্যতম আলু উৎপাদনকারী জেলা জয়পুরহাটে এবার আলুবীজের চাহিদা ৬০ হাজার টন। বিপরীতে মজুদ রয়েছে ৬২ হাজার ৯৫০ টন। চাহিদার তুলনায় জোগান প্রায় তিন হাজার টন বেশি থাকার পরও বাজারে বীজের তীব্র সংকট। জয়পুরহাটের একাধিক ব্যবসায়ী বাজারে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বীজের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন। আবার কোম্পানিতে বীজের যে চাহিদা জানানো হয়েছিল সে পরিমাণ পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে তারা আরেকটি সমস্যাও উল্লেখ করেছেন যে জেলায় বিএডিসির বীজ বিক্রয় কেন্দ্র না থাকায় ডিলারদের কাছ থেকে তা সংগ্রহ করতে হয়। এতে আলুবীজ সংগ্রহেও ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাদের।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে নজরদারি জোরদার করতে হবে, যাতে কৃত্রিম সংকট দূর হয়। যথাযথভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা জরুরি। আলু উৎপাদনের বিশেষ অঞ্চলগুলো দায়িত্বপ্রাপ্তদের অজানা নয়। কোথায় সংকট তৈরি হয়েছে, সরকারি দামের চেয়ে বেশি দামে আলুবীজ বিক্রি হচ্ছে, সেটিও সবার জানা।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সুতরাং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। কৃষকের বীজপ্রাপ্তি সহজ ও সুলভ মূল্যে হতে হবে। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। যেসব অসাধু ব্যবসায়ী আলুবীজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। যে পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়েছে এতে বাজারে আলুবীজের সরবরাহ সংকট ও চড়া দাম খুবই অপ্রত্যাশিত। সরকার এদিকে নজর দেবে এবং কৃষকের বীজ সংগ্রহের ভোগান্তি দূর করবে- এটাই কাম্য।

 

 

 

 

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়