আজ- ১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার  রাত ১:৩৯

‘আমাগো এই দ্যাশে থাকবার দিবোনা!’ :: সংখ্যালঘুদের আকুতি

 

দৃষ্টি নিউজ:

‘আমরা হিন্দু, তাই মাটি খেকোরা আমাগো এই দ্যাশে থাকবার দিবোনা! যদি থাকবার দিতো তাইলে এইভাবে আমাগো জমির মাটি জোর কইরা নিয়া যাইতোনা। আমরা কি তাইলে দেশ থেকে চইলা যামুগা? আমাগো ভারতে পাঠাই দিক।’ কান্না জড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বাসাইল উপজেলার নাকাছিম গ্রামের গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী। শুধু ঝর্ণা রাণী নয় তার মতো একাধিক সংখ্যালঘুর জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে বিএনপিপন্থী একটি মহল।


স্থানীয়রা জানায়, দু’ফসলি জমি নষ্ট করে অবাধে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। ওই মাটি বিক্রি করতে গাড়ি চলাচলের জন্য অন্যের জমিতে মাটি ফেলে তৈরি করা হয়েছে ৫০-৬০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা। সংখ্যালঘু কৃষকদের জিম্মি করে নামমাত্র মূল্য দিয়ে প্রভাবশালীরা ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে। বালুব্যবসায়ীদের ভয় ও দাপটে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।


জানাগেছে, টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার টাঙ্গাইল-নলুয়া সড়কের নাকাছিম সেতুর পাশ দিয়ে ট্রাক আসা-যাওয়ার জন্য অন্যের জমির ফসলের ওপর মাটি ফেলে ৫০-৬০ ফুট প্রশস্ত ও প্রায় এক কিমি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। সেই রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ে মাটিখেকোদের বিশাল কর্মযজ্ঞ।

দিনরাত শ’ শ’ একর ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে ওই প্রভাবশালী চক্রটি। কৃষকদের নামমাত্র টাকা দিলেও প্রভাবশালীদের দাপটে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। কেউ মুখ খুলতে চেষ্টা করলেই তাকে শারীরিক নির্যাতনসহ মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ একাধিক ভুক্তভোগীর।


নামপ্রকাশ না করে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, এখান থেকে এক মাস ধরে মাটি কেটে বিক্রি করছেন বাদল ও তার সহযোগীরা। বালু ব্যবসায়ীদের ভয়ে ভুক্তভোগীরা প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। বালু ব্যবসায়ী বাদলের ভাই নেতা বাসাইল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা। এছাড়া টাঙ্গাইল-৮(সখীপুর-বাসাইল) আসনের সংসদ সদস্যের সাথে রয়েছে তার সখ্যতা।

এ কারণে মো. বাদল মিয়া বেপরোয়া হয়ে প্রথমে নাকাছিম এলাকার একজনের কয়েক বিঘা জমি ভয় দেখিয়ে কিনে নেন। এরপর সেখান থেকে মাটি বিক্রি করেন তিনি। গভীর করে মাটি কাটার ফলে পাশের জমির মাটি এমনিতেই ভেঙ্গে পড়ে। সেই সুযোগে অর্ধেক দামে কিনে নেন পাশের জমি। অসহায় কৃষকরা নিরুপায় হয়ে তার কাছে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। আবার কেউ কেউ জমি বিক্রি না করলেও জোর করেই মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।


স্থানীয় বাসিন্দা খুশি মোহন জানান, তার ৭৫ শতাংশ আবাদি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করে ফেলেছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। উল্টো তাকেই বিপদে পড়তে হয়েছে। প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।

নেদুরাম নামে এক বৃদ্ধ জানান, তার ৮৮ শতাংশ জমি ছিল। জমির চারপাশ থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় তিনি বাজারমূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে জমিটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এখন আবাদ করার মতো তার কোন জমি নেই।


মাটি ব্যবসায়ী মো. বাদল মিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করে তাকে না পেলেও বাসাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া আক্তার জানান, এ বিষয়ে তিনি লিখিত কোন অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno