আজ- ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  ভোর ৫:১৪

উচ্চ ফলনশীল গমে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন বুনছে কৃষকরা

 

বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইলের কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল জাতের গম চাষ করে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন বুনছেন। আর মাত্র ক’টা দিন তার পরই সোনালী ফসল ঘরে উঠবে। তাই বুকভরা আশা নিয়ে গম ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন চাষীরা।

স্থানীয় জাতের তুলনায় উচ্চ ফলনশীল জাতের গম চাষে প্রায় তিন গুণ বেশি ফলন হওয়ায় জেলার কৃষকরা গম চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এবার ফলন ভালো হওয়ায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গমের বাম্পার ফলনে লাভবান হওয়ার স্বপন দেখছেন তারা।

জানাগেছে, উৎপাদন ও খাদ্যের দিক দিয়ে দানা ফসল হিসেবে গমের অবস্থান দ্বিতীয়। অর্থাৎ ধানের পরেই গমের অবস্থান।

টাঙ্গাইল জেলায় এ বছর পাঁচ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে গম চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৬৭০হেক্টর, বাসাইলে ২১০, কালিহাতীতে ২১৫, ঘাটাইলে ২৩১,

নাগরপুরে এক হাজার ২১৪, মির্জাপুরে ২১০, মধুপুরে ২৪০, ভূঞাপুরে ৯০৫, গোপালপুরে ৪৭০, সখীপুরে ২৬০, দেলদুয়ারে ৪৭০ এবং ধনবাড়ী উপজেলায় ২১৫ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের গম চাষ করা হয়েছে। টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্রমতে উল্লেখিত হিসাবের বাইরেও মৌসুমী চাষীরা গম চাষ করেছেন।

কৃষকরা জানায়, উঁচু ও মাঝারি জমির দোঁআশ ও বেলে-দোঁআশ মাটি গম চাষের জন্য সর্বোত্তম। দো-আঁশ মাটি গম চাষের জন্য অতিউত্তম হিসেবে বিবেচিত। লোনা মাটিতে গমের ফলন কম হয়। মাঝারি নিচু জমিতেও গম চাষ হয়। সহজে পানি নিস্কাশিত হয় এমন ভারী অর্থাৎ এঁটেল ও এঁটেল-দোঁআশ মাটিতেও গমের চাষ করা যায়।

কৃষকদের মতে, হেক্টর প্রতি ১২০ কেজি বীজ ব্যবহার করতে হয়। বীজ গজানোর ক্ষমতা ৮০% এর বেশী হলে ভালো হয়। সারিতে বা ছিটিয়ে গম বীজ বপন করা যায়। সারিতে বপনের জন্য জমি তৈরির পর লাঙলের মাধ্যমে সরু নালা তৈরি করে ২০ সেমি. বা ৮ ইঞ্চি দূরে দূরে সারিতে এবং ৪-৫ সেমি. গভীরে বীজ বপন করতে হয়।

আগাম বপনের জন্য পাওয়ার টিলার চালিত বীজ বপন যন্ত্রের সাহায্যে গম আবাদ করা যায়। যন্ত্রটির সুবিধা হচ্ছে- ধান কাটার পরপর একই সময়ে চাষ, বীজ বপন ও মই দেওয়ার কাজ করা যায়।

যন্ত্রটিতে ২০ কেজি বীজ রাখার মত একটি হপার থাকে এবং ২০ সেমি. দূরে দূরে ৬ সারিতে ৩-৪ সেমি. গভীরে বীজ বোনা যায়। বীজ বোনার সঙ্গে সঙ্গে বীজ ঢেকে দেওয়া হয় বলে পাখি কম ক্ষতি করে এবং শতকরা প্রায় ২০ ভাগ বীজের সাশ্রয় হয়।

কৃষকরা আরও জানায়, সেচ সহ চাষের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ইউরিয়া সারের দুই তৃতীয়াংশ এবং সম্পূর্ণ টিএসপি, এমপি ও জিপসাম শেষ চাষের পূর্বে প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। বাকী এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া চারার তিন পাতা বয়সে প্রথম সেচের পর দুপুরে মাটি ভেজা থাকা অবস্থায় প্রতি হেক্টরে ৬০-৭০ কেজি ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হয়।

সেচ ছাড়া চাষের ক্ষেত্রে সমস্ত ইউরিয়া শেষ চাষের সময় অন্যান্য রাসায়নিক সারের সাথে প্রয়োগ করতে হয়। সেচ ছাড়া চাষের ক্ষেত্রে বৃষ্টিপাত হলে বৃষ্টির পর জমি ভেজা থাকা অবস্থায় উপরি প্রয়োগের জন্য নির্ধারিত ইউরিয়া প্রয়োগ করা ভাল।

তারা জানায়, এক বিঘা জমিতে গম চাষে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি একরে ৩৫ থেকে ৪৫ মণ গম উৎপাদন হয়। গত বছরের ন্যায় এ বছরও গমের দাম মণ প্রতি এক হাজার টাকায় বিক্রি হলে তারা ভালো লাভবান হবেন।

সখীপুর উপজেলার আবুল মিয়া, কালিহাতীর শমসের আলী, ঘাটাইলের আব্দুস সালাম, নাগরপুরের মোহাম্মদ আলী, নুরুল ইসলাম সহ অনেকেই জানান, এ বছর বাজারে গমের দাম আশানুরূপ হওয়ায় বাম্পার ফলনে তারা লাভের আশা করছেন।

এছাড়া কৃষি প্রণোদনার আওতায় কৃষি বিভাগের কাছ থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার পেয়েছেন- এটা তাদের জন্য বাড়তি জোগান।

ঘাটাইলের সাগরদিঘী ইউনিয়নের বেতুয়াপাড়া গ্রামের গমচাষী হাসেম আলী জানান, এ বছর তিনি ১১২ শতাংশ জমিতে গম চাষ করেছেন। এতে মোট খরচ হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। সাগরদিঘী ইউপি চেয়ারম্যান হেকমত সিকদারের মাধ্যমে কৃষি বিভাগ থেকে বীজ ও সার পাওয়ায় উৎপাদন খরচও কম হয়েছে।

অবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তার ১১২ শতাংশ জমিতে ২৫-২৬ মণ গম উৎপাদন হবে এবং ২৮-৩০ হাজার টাকার গম বিক্রি করতে পারবেন।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার জানান, বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গম চাষে কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

প্রণোদনা পেয়ে কৃষকরা আগ্রহ নিয়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের গম চাষ করেছেন। গম চাষীরা উচ্চ ফলনশীল বারি ২৫, বারি ২৬, বারি ২৮, বারি ৩০ ও বারি ৩১ জাতের গম চাষ করছেন।

এবার গমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও বাজার দর গত বছরের সমান থাকলেও কৃষকরা লাভবান হবেন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno