প্রথম পাতা / অপরাধ /
করোনায় টাঙ্গাইলে পাঁচ হাজার ছাত্রী বাল্য বিয়ের শিকার
By দৃষ্টি টিভি on ৯ অক্টোবর, ২০২১ ২:২৮ অপরাহ্ন / no comments
দৃষ্টি নিউজ:
বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় টাঙ্গাইল জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। সরেজমিনে নানা সূত্রে এ তথ্য ওঠে এলেও জেলা শিক্ষা অফিস কাগজ-কলমে জেলায় বাল্যবিয়ের সংখ্যা নির্ধারণ করেছে এক হাজার ২৪২ জন।
তাদের মধ্যে অনেকেই বিয়ের পরও নিয়মিত ক্লাস করছে। স্কুলের সমস্যা হতে পারে মনে করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাল্য বিয়ের সংখ্যা কাগজ-কলমে কমিয়ে দিয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলায় ৭৯৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসা এবং কলেজ রয়েছে। জেলার ১২টি উপজেলায় করোনাকালে এক হাজার ২৪২ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইল সদরে ৮৮, সখীপুরে ১৪৩, ঘাটাইলে ৪৯, গোপালপুরে ৫৬, ভূঞাপুরে ১৪, কালিহাতীতে ২২৯, দেলদুয়ারে ২২৮, বাসাইলে ৪৪, নাগরপুরে ১১৪, মির্জাপুরে ৬, মধুপুরে ১১৮ ও ধনবাড়ী উপজেলায় ১৫৩ জন।
শিক্ষা অফিস টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ৮৮ জন বাল্য বিয়ের শিকার দেখালেও এ উপজেলার চরাঞ্চলের হুগড়া হাবিব কাদের উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬০ জন ছাত্রী, মগড়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ৩০ জন, পাকুল্যা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২২ জন, চৌধুরী মালঞ্চ উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৫ জন, খাস কাকুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৩ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। এছাড়াও টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় আরও অর্ধশত স্কুল রয়েছে।
সূত্রমতে, ভূঞাপুর উপজেলায় বাল্যবিয়ের শিকার ১৪ জন দেখানো হলেও চরাঞ্চল গাবসারা ইউনিয়নের রায়ের বাসালিয়ার কুলসুম জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৮ জন, চরগাবসারা দাখিল মাদরাসার ৩০ জন, টেপিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৫ জন, গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৫ জন ও রুহুলী উচ্চ বিদ্যালয়ে অন্তত ৪০ জন ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। উপজেলার অন্য স্কুলগুলোর চিত্রও একই রকম। জেলার অন্য উপজেলাগুলোর প্রতিটি স্কুলের চিত্রই তথৈবচ।
শিক্ষকরা জানায়, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। এর মধ্যে ভালো ছেলে পেয়ে অনেকেই তাদের মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়নি। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার ভয়ে তারা শিক্ষকদের কিছু জানায়নি।
তবে বাল্যবিয়ের শিকার অনেক শিক্ষার্থীই বিদ্যালয়ে নিয়মিত অ্যাসাইনমেণ্ট জমা দিয়েছে এবং পড়াশোনা করছে। বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রশাসনের জোড়ালো পদক্ষেপ এবং এর কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে বাল্যবিয়ের সংখ্যা কমে যাবে বলে মনে করেন শিক্ষকরা।
হুগড়া হাবিব কাদের উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম আল-মামুন জানান, গত বছর মার্চে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল না। গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার পর অষ্টম-দশম শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। স্কুলটি চরাঞ্চলে হওয়ায় এলাকায় বাল্যবিয়ের প্রবণতা আগে থেকেই ছিল।
বিদ্যালয় খোলা থাকলে ছাত্রীদের বিয়ের উদ্যোগ শিক্ষকরা বন্ধ করতেন। অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৮ বছরের আগে মেয়েকে বিয়ে না দিতে উদ্বুদ্ধও করতেন। কিন্তু করোনার পরিস্থিতির কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বাল্যবিয়ে ঠেকানো যায়নি।
ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মেহেদী হাসানের বাবা আব্দুল লতিফ জানান, করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলে লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। এ কারণে বাধ্য হয়ে তাকে ব্যবসায় বসিয়ে দেন এবং পরে ছেলেকে বিয়ে করান।
কয়েকজন অভিভাবকের সাথে কথা বলে জানাগেছে, সমাজে তারা দরিদ্র মানুষ। আগে বা পরে বিয়ে তো দিতেই হবে। ভালো পাত্র পেয়েছেন- তাই তাদের মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন।
সিরাজকান্দি দাখিল মাদরাসা সুপার মো. আব্দুল কুদ্দুস জানান, করোনার বন্ধে অনেক ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তবে মোট কতজনের বিয়ে হয়েছে সে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
একই উপজেলার রুহুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারা খাতুন জানান, তার স্কুলের ছাত্রীর সংখ্যা ১৫৪ জন। এর মধ্যে ৩৫ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খন্দকার মোহাম্মদ আলী জানান, করোনাকালে শুধুমাত্র ছাত্রীরাই নয় ছাত্ররাও বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। তার স্কুলের বাল্য বিয়ের তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে এ স্কুলের ২৬ জন ছাত্র-ছাত্রীর বিয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
গোবিন্দাসী ইউনিয়ন নিকাহ্ রেজিস্ট্রার কাজী বদিউজ্জামান জানান, করোনার বন্ধে বেশ কয়েকটি স্কুলের ছাত্রীদের বিয়ে দেওয়ার সংবাদ তিনি পেয়েছেন। ওই বিয়েগুলো তিনি রেজিস্ট্রি করেননি। বিয়েগুলো স্থানীয় মুন্সী-মওলানারা পড়িয়েছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
মানব প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকার কর্মী মাহমুদা শেলী জানান, শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী জেলায় বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে এক হাজারের বেশি ছাত্রী। বাল্যবিয়ের শিকার এসব ছাত্রীদের চিহ্নিত করে স্কুলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া কম বয়সী মেয়েদের যারা বিয়ের রেজিস্ট্রি করিয়েছেন- সেসব নিকাহ রেজিস্ট্রারদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা দরকার।
জেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম জানান, বাল্যবিয়ের শিকার শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কক্ষে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে বাল্যবিয়ের গড়মিল হিসাবের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ তার জানা নেই।
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ডক্টর মো. আতাউল গনি জানান, বৈশ্বিক মহামারী করোনা প্রতিরোধে সবাই ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। এ সুযোগে চরাঞ্চলের অসচেতন অভিভাবকরা তাদের স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন- যা দুঃখজনক।
তবে ওইসব শিক্ষার্থী যাতে আবার ক্লাসে আসতে পারে- সে ব্যবস্থা করা হবে। বাল্যবিয়ের কুফলসহ প্রতিরোধে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জনসচেতনামূলক সভাও করা হবে।
মন্তব্য করুন
সর্বশেষ আপডেট
-
ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়ার তালিকা
-
যমুনার বুকে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর পৌনে চার কিমি দৃশ্যমান
-
টাঙ্গাইলে ৯৬৬ বোতল ফেনসিডিল সহ আটক ৪
-
টাঙ্গাইলে ভিডিপি সদস্যদের মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন
-
টাঙ্গাইলে ইমাম ও মোয়াজ্জেমদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ
-
টাঙ্গাইলে দুই দফা দাবিতে ইণ্টার্ন চিকিৎসকদের মানববন্ধন
-
কালিহাতীতে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন
-
মহাসড়কে ছিনতাইকালে দুই পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার
-
সাপ্তাহিক সমাজচিত্র পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন