আজ- ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  রাত ৯:৫৪

কালিহাতীতে স্ত্রীকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে যুবক ॥ আদালতে মামলা

 

দৃষ্টি নিউজ:

সন্তান সহ গর্ভবতী গৃহবধূ হাছিনা

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ধলাটেঙ্গর গ্রামে স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন এক যুবক। এ ঘটনায় অসহায় গৃহবধূ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
জানাগেছে, কালিহাতী উপজেলার ধলাটেঙ্গর গ্রামের মো. বেলায়েত হোসেনের ছেলে মো. আবুল কালামের সাথে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বড় বাসালিয়া গ্রামের মো. আবুল হাসেমের মেয়ে মোছা. হাছিনার ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল আড়াই লাখ টাকা দেনমোহরে সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে কাইয়ুম নামে এক ছেলের জন্ম হয়, বর্তমানে তার বয়স পাঁচ বছর। এরপর মো. আবুল কালাম শ্বশুরের তত্ত্বাবধানে কাজ করতে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমায়। স্বামী প্রবাসে যাওয়ার পর গৃহবধূ হাছিনার উপর মেনে আসে শ্বশুর বেলায়েত হোসেন ও শাশুড়ি কহিনুর বেগমের নির্যাতনের খর্গ। তারা হাছিনাকে স্বামী আবুল কালামের সাথে মোবাইলে কথা বলাও বন্ধ করে দেয়। শ্বশুর-শাশুড়ির নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কয়েক দফায় হাছিনা রাগ করে বাবার বাড়িতে চলে যায়। এ নিয়ে কয়েকবার গ্রাম্য সালিশও হয়েছে। আবুল কালাম চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রবাস থেকে দেশে ফেরার সময়ও শ্বশুর আবুল হাসেমের কাছ থেকে এক হাজার সিঙ্গাপুরী ডলার হাওলাত হিসেবে নেয়। বাড়ির লোকজনদের জন্য এ সময় আবুল হাসেম কিছু জিনিসপত্রও আবুল কালামের কাছে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু আবুল কালাম দেশে এসে তিনদিন অন্যত্র অবস্থান করে বাড়িতে আসেন। এ সময় হাছিনা ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে অবস্থান করলেও তাকে সংবাদ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে বাবার বাড়ি থেকে হাছিনা ধলাটেঙ্গর স্বামীর বাড়িতে যান। সেখানে বসবাসকালে শ্বশুর-শাশুড়ি আবারও অত্যাচার শুরু করে, স্বামী আবুল কালামও স্ত্রী হাছিনাকে মারধর করে এবং পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। এরই মধ্যে হাছিনা আবার গর্ভবতী হয়। যৌতুকের পাঁচ লাখ টাকা দিতে অস্বীকার করায় হাছিনার উপর অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা সহ্যের সীমা অতিক্রম করে। যৌতুক দিতে না পারায় আবুল কালাম গত ২১ মে হাছিনাকে মারপিট করে সন্তান সহ বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এ নিয়ে গত ১৮ জুন আবুল হাসেমের বাড়িতে এক সালিশি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে আবুল কালাম ব্যবসা করার জন্য পাঁচ লাখ টাকা ব্যবসা করার জন্য চেয়েছেন বলে দাবি করেন এবং টাকা না দিলে অন্যত্র যৌতুক নিয়ে বিয়ে করবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়। এমতাবস্থায় গত ২ জুলাই মোছা. হাছিনা বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেন।
অপরদিকে, স্ত্রী-সন্তানকে শ্বশুরবাড়ি রেখে এসে গত ৩১ জুলাই(সোমবার) রাতে আবুল কালাম তাঁর খালাত বোন ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী কষ্টাপাড়া গ্রামের মো. ইব্রাহিম বেপারীর মেয়ে মো. রোকেয়া বেগমকে(২০) আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেন। ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে স্থানীয় মুইচা বেপারী ও হোসেন বেপারী সহ আরো কয়েকজন ক্রীড়নকের ভূমিকা পালন করেন। খবর পেয়ে স্ত্রী হাছিনা জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসা শেষে হাছিনা বাদী হয়ে স্বামী আবুল কালাম ও তার নবাগত স্ত্রী মোছা. রোকেয়া বেগমকে অভিযুক্ত করে মুসলিম পারিবারিক আইনের ৬(৫) ধারায় গত ২ আগস্ট টাঙ্গাইলের আদালতে প্রতিকার চেয়ে মামলা দায়ের করেন। ধলাটেঙ্গর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানায়, ঘটনাটি আদৌ সঠিক হয়নি। আবুল কালাম দ্বিতীয় বিয়ে করায় মামলা হয়েছে জানতে পেরে আবার বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছে বলে তারা জানায়।
গৃহবধূ মোছা. হাছিনা জানান, ওই মেয়ের সাথে তার স্বামী বিদেশে থাকাকালে পরকীয়া গড়ে ওঠে। এ নিয়ে কথা বলায় তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হয়। সে সুযোগ নিয়ে শ্বশুর-শাশুড়ি তার উপর নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন চালায়। তিনি সাড়ে তিন মাসের গর্ভবতী। তার পাঁচ বছর বয়সী এক পুত্র সন্তান রয়েছে। তিনি আরো জানান, তার আরো দুই জা’ রয়েছেন। শ্বশুর-শাশুড়ির অত্যাচারের কারণে তারাও কেউ ওই বাড়িতে থাকেনা, অন্যত্র বসবাস করেন। তিনি এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।
এ ঘটনায় গৃহবধূ হাছিনার স্বামী আবুল কালামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তার বাবা বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরা হাছিনাকে তালাক দিয়ে ছেলেকে বিয়ে করিয়েছি। গর্ভবতী অবস্থায় তালাক দেওয়ার বিধান আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাছিনা আদালতে দুইটি মামলা দায়ের করেছে, বিষয়টি আদালতেই মোকাবেলা করবেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি সত্যিই দুঃখজনক। এ বিষয়টি নিয়ে একাধিক সালিশ করলেও আবুল কালামদের গোয়ার্তুমির কারণে মিমাংসা হয়নি।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno