আজ- ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  রাত ১২:৫৪

কাল পবিত্র ঈদুল আযহা :: চারদিকে করোনার আতঙ্ক

 

দৃষ্টি নিউজ:

মহামারি করোনার মধ্যেই বছর ঘুরে আবার ফিরে এলো পবিত্র ঈদুল আযহা। আগামিকাল বুধবার(২১ জুলাই) সারাদেশে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে উদযাপিত হবে পবিত্র এই দিনটি।

ত্যাগের মহিমায় চিরভাস্বর পবিত্র ঈদুল আযহা হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে জিলহজ মাসের ১০ তারিখে উদযাপিত হয়। এ কারণে এই দিনক্ষণ আগেই ঠিক হয়ে আছে। ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহায় ঠিক আগের দিনে চাঁদ দেখা নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই।

বিশ্বে মহামারির কারণে ৪১ লাখ মৃত্যু, ১৯ কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশে দেশে অর্থনৈতিক অবস্থাও টালমাটাল। এমন এক কঠিন সময়ে মুসলমানদের দোড়গোড়ায় হাজির হলো পবিত্র ঈদুল আজহা।

দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতির কারণে আতঙ্ক-উদ্বেগের মধ্যেই ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কোরবানির পশু কেনা ও ঈদের নামাজসহ অন্যান্য প্রস্তুতির জন্য সরকার চলমান করোনা বিধিনিষেধ আট দিনের জন্য শিথিল করে।

তবে ঘরমুখী লাখ লাখ মানুষের ঘরে চলাচল, গণপরিবহন ও পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা ও দোকান-শপিংমল ভিড় করে কেনাকাটার কারণে সংক্রমণ আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে, করোনা চলাকালে অনেকে স্বজন হারিয়েছেন বা অসুস্থতায় ভুগছেন, অর্থনৈতিক মন্দা ও লকডাউনের কারণে অসংখ্য মানুষের কাজ হারানো বা আয় কমে যাওয়ার কারণে তাদের ঘরে ঈদের আনন্দ অনুপস্থিত। এই প্রেক্ষাপটে এবারের ঈদুল আযহা শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

ঈদুল আযহা আমাদের দেশে ‘কোরবানির ঈদ’ নামেই বেশি পরিচিত। কেউ কেউ এই ঈদকে বকরি ঈদ হিসেবেও আখ্যায়িত করে থাকেন। সে অনুসারে পশু কেনা থেকে গ্রামের বাড়িতে যাওয়াসহ ঈদের সব পস্তুতি সম্পন্ন করে থাকেন সবাই। কোরবানির পশু কেনার পর্বও শেষ করেছেন অনেকেই।

পশুর যত্ম-পরিচর্যাতেই ঈদের মূল প্রস্তুতি ও আনন্দ। ইতোমধ্যে সারাদেশে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। রাজধানী ঢাকায় ক্যাটল ট্রেন, ট্রলার ও ট্রাকে করে কোরবানির গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট আনা হচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। রাজধানীর কোরবানিদাতারা পছন্দের পশুটি কেনার জন্য গাবতলীর প্রধান হাটসহ সুবিধামতো বিভিন্ন হাটে যাচ্ছেন।

রাজধানীতে অনেকেই কোরবানির পশু কিনে নিজ নিজ বাসভবনের কার পার্কিং ও সামনের ফুটপাতে রেখেছেন। পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে বিকোচ্ছে তাজা কাঁঠালপাতা, খড়-বিচালি-ভুসি ইত্যাদি। গলায় রঙিন কাগজ ও জরির মালা জড়ানো হৃষ্টপুষ্ট ষাঁড় দড়ি ধরে ঘরমুখো চলছেন কোরবানিদাতারা। গবাদিপশুর ডাকও বেশ শোনা যাচ্ছে এখানে ওখানে।

হযরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত অনুসরণ করেই সারা বিশ্বের মুসলমানরা ১০ জিলহজ কোরবানি দিয়ে থাকেন। হযরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানির জন্য মহান আল্লাহতাআলার নির্দেশ পেয়েছিলেন। পরপর দুবার তিনি পশু কোরবানি করেন। তৃতীয়বার একই নির্দেশ পেয়ে তিনি অনুধাবন করেন, পুত্র ইসমাইলের চেয়ে প্রিয় তার কেউ নেই।

আল্লাহপাক তাকেই কোরবানি করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। হযরত ইব্রাহিম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইলকে (আ.) আল্লাহর নির্দেশ জানালেন। শিশু ইসমাইল (আ.) নির্ভয় চিত্তে সম্মতি দিয়ে পিতাকে আল্লাহতাআলার নির্দেশ পালন করতে বলেন।

কোরবানি করতে উদ্যত হযরত ইব্রাহিম (আ.) পুত্রস্নেহে যেন হৃদয় দুর্বল না হয়ে পড়েন, সে জন্য তিনি চোখ বেঁধে পুত্রের গলায় ছুরি চালিয়েছিলেন। আল্লাহতাআলার অপার কুদরতে এ সময় হযরত ইসমাইলের (আ.) পরিবর্তে দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়।

আগামিকাল ঈদের নামাজের জামাতের আগে খুতবায় হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও হযরত ইসমাইলের (আ.) কোরবানির এই কাহিনি তুলে ধরবেন ইমামরা। বিনম্র চিত্তে তাদের স্মরণ করবেন সারা বিশ্বের মুসলমানরা।

কোরবানি দেওয়া আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ওয়াজিব। ১০ জিলহজ পবিত্র ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হলেও পরের দুদিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও কোরবানি করার বিধান রয়েছে।

সাধারণত পশুই কুরবানি করার বিধান রয়েছে। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে সমস্ত লোভ লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ, স্বার্থপরতা তথা ভেতরের পশুত্বকে ত্যাগের মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধি লাভের ভেতরেই রয়েছে কুরবানির প্রকৃত তাৎপর্য।

ঈদের জামাত আদায় করে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন কোরবানির জন্য। ঈদের জামাতে ব্যক্তি, সমাজ, দেশ, মুসলিম উম্মাহ এবং সারা বিশ্বের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করা করা হবে। প্রার্থনা করা হবে করোনা থেকে মুক্তির জন্যও।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno