কুমুদিনী কলেজের ক্যাণ্টিন গোপন টেন্ডারে বরাদ্দের অভিযোগ!

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজের ক্যাণ্টিন গোপন টেন্ডারের মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে আহ্বানকৃত নতুন টেন্ডারে এগার বছর যাবৎ ক্যাণ্টিন পরিচালনাকারী ব্যক্তিও অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি।

কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল মান্নানের চাকুরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় অবসরে যাওয়ার আগমুহূর্তে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তিনি ক্যাণ্টিন বরাদ্দ সহ নানা অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর কুমুদিনী সরকারি কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রফেসর মো. আব্দুল মান্নান। আগামি ২৬ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষ হিসেবে তার দায়িত্ব পালনের শেষ কর্মদিবস।

এর মধ্যেই কলেজ প্রাঙ্গণে এক লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ব্যাটমিণ্টন কোর্ট, স্থায়ী ভবনের পাশে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে বাণিজ্য বিভাগের জন্য একটি ছাপড়া, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের জন্য একটি ছাপড়া এবং প্রশাসনিক ভবনের পাশে শিক্ষকদের টেবিল টেনিশ খেলার জন্য একটি ছাপড়াসহ দুই লাখ টাকা ব্যয়ে কলেজ প্রাঙ্গণের ১৭টি বেঞ্চ সরিয়ে নতুন ভাবে স্থাপন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কলেজের একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারীর অভিযোগ, কলেজের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা ছাড়া অধ্যক্ষ তাঁর অনুসারীদের দিয়ে গঠিত কমিটির সহায়তায় উন্নয়ন কর্মকান্ডের নামে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করছেন। কলেজের ইট দিয়ে তৈরি করা ব্যাটমিণ্টন কোর্ট নির্মাণে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা খরচ হলেও এক লাখ ৯৭ হাজার টাকা বিল করা হয়েছে।

পাকা ভবনের পাশে নির্মিত তিনটি ছাপড়ায় খরচ হওয়ার কথা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা, অথচ সেখানে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। কলেজ প্রাঙ্গণে ছাত্রীদের বসার ১৭টি ব্রেঞ্চ সরিয়ে নতুনভাবে স্থাপন করে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ক্যাণ্টিন সম্প্রসারণে বারান্দা নির্মাণ এবং মাস্টার রোলে একজন পিয়ন নিয়োগ চূড়ান্ত করে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

তারা আরও জানায়, কলেজের ফটোস্ট্যাট ও কম্পিউটার কম্পোজ ব্যবসার জন্য ভাড়া নেওয়া স্থানীয় দোকানদার সাইফুলকে এবার ক্যাণ্টিনটিও বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। ওই টেন্ডারের নোটিশ একটি স্থানীয় ও বহুল প্রচারিত একটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টেন্ডার করার নিয়ম রেখে রেজুলেশন করা হলেও- তা অনুসরণ করা হয়নি।

ক্যাণ্টিন বরাদ্দের টেন্ডারে অংশ নিতে আগ্রহী স্থানীয় ঠিকাদার পারভেজ ও রফিকসহ কয়েকজন অভিযোগ করেন, কুমুদিনী সরকারি কলেজের ক্যাণ্টিন বরাদ্দের টেন্ডার আহ্বানের গুঞ্জন চলছিল। তারা ওই টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিলেন।

হঠাৎ তারা জানতে পারেন তিন লাখ টাকা উৎকোচের বিনিময়ে অধ্যক্ষের সরাসরি হস্তক্ষেপে গোপন টেন্ডারের মাধ্যমে কলেজের ফটোস্ট্যাট ও কম্পিউটার কম্পোজের দোকানদার সাইফুলকে ক্যাণ্টিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারি কলেজে এমন অনিয়ম হবে তা তারা কল্পনাও করেন নি।

কুমুদিনী সরকারি কলেজের ক্যাণ্টিন পরিচালনাকারী শেফালী বেগম জানান, তার বাবা মৃত হযরত আলী ও মা জহুরা খাতুন কুমুদিনী কলেজেই কর্মরত ছিলেন। বাবার মৃত্যু ও মায়ের অবসরে যাওয়ার ফলে ২০১০ সালে কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ শামসুল হক ক্যাণ্টিনটি তার মাকে পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন থেকে তার মায়ের নামে বরাদ্দকৃত ওই ক্যাণ্টিনটি তিনি পরিচালনা করছিলেন।

নিয়মানুযায়ী সে সময় থেকে এক ঘর বিশিষ্ট ওই ক্যাণ্টিনের জন্য মাসিক ৩০০ টাকা হারে ভাড়া পরিশোধ করেছেন। তবে ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দুই হাজার ১০০ টাকা হারে তিনি ভাড়া পরিশোধ করেছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, প্রফেসর মো. আব্দুল মান্নান কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ক্যাণ্টিন পরিচালনা বাবদ দুই লাখ টাকা জামানত দেওয়ার জন্য তাকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছিল। করোনার কারণে কলেজ ও ক্যাণ্টিনটি বন্ধ হয়ে যায়। এরমধ্যে ক্যাণ্টিনের ভাড়া বাড়ানোর জন্য তিন দিকে বারান্দা নির্মাণ করা হয়েছে।

ক্যাণ্টিনের নতুন বরাদ্দপ্রাপ্ত সাইফুল জানান, টেন্ডারের মাধ্যমে জামানত হিসেবে তিন হাজার টাকার পে-অর্ডার ও মাসিক দুই হাজার ১০০ টাকা ভাড়ায় তার স্ত্রীর নামে ক্যাণ্টিনটি বরাদ্দ পেয়েছেন।

বিভ্রান্তি নিয়ে টেন্ডার কমিটির সভাপতি ও কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আলিম আল রাজী জানান, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ক্যাণ্টিন বরাদ্দের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। সর্বোচ্চ দরদাতাই ক্যাণ্টিনটি বরাদ্দ পাচ্ছেন। একটি স্থানীয় ও বহুল প্রচারিত একটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টেন্ডার করার নিয়ম রেখে রেজুলেশন করা হয়।

এছাড়াও কলেজে একাধিক ছাপড়াসহ বেঞ্চ পূণস্থাপন প্রসঙ্গে তিনি জানান, অবকাঠামোগত সমস্যায় ছাপড়াগুলো নির্মাণ করা হয়েছে এবং ই-টেন্ডারের মাধ্যমে বেঞ্চগুলো স্থাপন করা হয়।

কুমুদিনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল মান্নান জানান, ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘সোনালী বার্তা’ নামে একটি দৈনিক পত্রিকায় ক্যাণ্টিনের টেন্ডার নোটিশ প্রকাশ করা হয়েছে। টেন্ডারে তিন জন প্রতিযোগী অংশ গ্রহন করেছেন।

কমিটিতে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মূল্যায়ন চলছে। অবসরে যাওয়ার আগমুহূর্তে নানাভাবে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে