আজ- ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার  রাত ১১:০৪

গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি!

 

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরী এবং ঢাকার আশপাশের পাঁচ জেলায় গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এতে জনগণের ভোগান্তি কতটা বাড়বে, এটাই এখন দেখার বিষয়। সম্প্রতি বিদ্যুৎ ও বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে নিত্যপণ্যের দামেও। এছাড়া সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। এরও প্রভাব পড়বে বাজারে। এভাবে জীবনযাত্রার সামগ্রিক ব্যয় বাড়তে থাকলে সাধারণ মানুষ তা কতটা সইতে পারবে, তা ভেবে দেখা দরকার। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষ এসব বাড়তি ব্যয়ের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অপ্রয়োজনীয় খাতের ভর্তুকি ও ব্যয় না কমানোর কারণেই এমন গণবিরোধী পদক্ষেপ সরকারকে নিতে হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব এড়াতে সরকারের উচিত ছিল মূল্যস্ফীতি আরো একটু কমে এলে তারপর এই জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির হিসাব কষা।
জানা গেছে, বাসভাড়া যাত্রীপ্রতি প্রতি কিলোমিটারে ১০ পয়সা করে বাড়ছে। এখন বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারে এক টাকা ৬০ পয়সা, নতুন হারে ১০ পয়সা বেড়ে তা হবে এক টাকা ৭০ পয়সা। মিনিবাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে এক টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে হবে এক টাকা ৬০ পয়সা। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে অটোরিকশার ভাড়া। অটোরিকশায় প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ২৫ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৪০ টাকা। এরপর প্রতি কিলোমিটারে সাত টাকা ৬৪ পয়সার জায়গায় দিতে হবে ১২ টাকা। ১ অক্টোবর থেকে বাস-মিনিবাসের এবং ১ নভেম্বর অটোরিকশার নতুন ভাড়া কার্যকর হবে। গত ১০ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। তবে বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া আগের মতোই সাত টাকা এবং মিনিবাসের ভাড়া পাঁচ টাকাই রাখা হয়েছে। সময়ের আগে নতুন ভাড়া কেউ নেবে না- এ নিশ্চয়তা কি আছে? নিয়মভঙ্গ করলে শাস্তি পেতে হবে- কর্তৃপক্ষের ওপর এই ভরসাটিও কি যাত্রীসাধারণ রাখতে পারে? আইন প্রতিপালনের এই স্থানটিতে আমরা উত্তীর্ণ হতে চাই। শুধু ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করার যে প্রবণতা বছরের পর বছর ধরে চলছে তার আশু অবসান হওয়া উচিত।
ভাড়া বেশি আদায় আগে থেকেই চলছিল। আমরা জানি, সব বাস সিএনজিতে চলে না- এরপরও সম্প্রতি সিএনজির দাম বাড়ানোর পর ভাড়ার হার বৃদ্ধির দাবিটি তুলতে পরিবহন মালিকরা কালক্ষেপণ করেননি। সরকারও এটি কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে। মালিক-যাত্রী সব পক্ষেরই স্বার্থের সুরক্ষা সরকারকে দিতে হবে। এই সুরক্ষাদানের বিষয়টিও হতে হয় ভারসাম্যপূর্ণ ও টেকসই। কিন্তু আমরা দেখি, বর্ধিত ভাড়ার লাইসেন্স বাস মালিকদের হাতে দিয়ে পরবর্তী সময়ে আর নজর রাখা হয় না। যাত্রীসাধারণ যেখানে অসংগঠিত, অসহায়, সেখানে মালিক শ্রেণি প্রভাবশালী। ঢাকা ও চট্টগ্রামে দিনে কমপক্ষে পাঁচ হাজার বাস-মিনিবাস চলাচল করে। বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, নতুন হারে বাস, মিনিবাস ও অটোরিকশায় দিনে অতিরিক্ত ভাড়া উঠবে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। বাস ও সিএনজি মিলিয়ে ছয় হাজার মালিকের কাছে জিম্মি রয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রায় দুই কোটি মানুষ। রাজধানীতে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের ৮৮ শতাংশেরই ফিটনেস নেই। ৭০ শতাংশের জীবনকাল ফুরিয়েছে বহু আগেই। দক্ষ চালক সংকট এবং গণপরিবহনের নিম্নমানের সেবার বিষয়টি নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এসব সমস্যার সমাধানেও দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। সেবার মান না বাড়িয়ে বারবার গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হলে কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যায়।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno