আজ- ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  দুপুর ১:৪৩

গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু :: বাবা পুলিশ, স্বামীও পুলিশ

 

দৃষ্টি নিউজ:


টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার আউলটিয়া গ্রামে হালিমাতুজ সাদিয়া(রিক্তা) নামে পুলিশ পরিবারের এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ মঙ্গলবার(১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে বুধবার(১১ অক্টোবর) সকালে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, দেড় বছর আগে কালিহাতী উপজেলার আউলটিয়া গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে পুলিশ কনস্টেবল মাসুদ রানার সাথে একই উপজেলার ধানগড়া গ্রামের বাসিন্দা ও সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত পরিদর্শক আ. হালিম সরকারের মেয়ে হালিমাতুজ সাদিয়া(রিক্তা)’র সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে মরিয়ম নামে তিন মাস বয়সী শিশু কন্যা রয়েছে।
বিয়ের পর থেকে ঢাকায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল মাসুদ রানা ও তার পরিবার যৌতুকের জন্য বিভিন্নভাবে রিক্তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। মেয়ের সুখের কথা ভেবে তার বাবা ৬-৭ মাস আগে স্থানীয় মাতব্বর শাজাহান, লতিফ ও মজনু মিয়ার উপস্থিতিতে মাসুদ ও তার মা, নানা-নানী’র সামনে মাসুদের চাচাত দাদা ইজ্জত আলীর হাতে নগদ দুই লাখ টাকা তুলে দেন। যৌতুকলোভী মাসুদ রানার পরিবার আরো টাকার জন্য চাপ দেওয়ায় গত ৬ অক্টোবর রিক্তা যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকার করেন। ফলে, মাসুদ রানার পরিবার ওই গৃহবধূকে গৃহবন্দি করে রাখে। গত সোমবার(৯ অক্টোবর) রাতে শাশুরি মমিনা খাতুন ও নানা শ্বশুর নুরু মিয়া একত্রে গৃহবধূ রিক্তাকে মারধর করে। পরদিন মঙ্গলবার(১০ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শাশুরি মমিনা খাতুন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে ওই গৃহবধূ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মঙ্গলবার বিকালে নিজ ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দেয়। শাশুরি মমিনা খাতুন গৃহবধূ ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছে কলে চিৎকার করে ওঠেন। আশপাশের লোকজন এসে গৃহবধূ রিক্তাকে মুমুর্ষূ অবস্থায় কালিহাতী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরে মরদেহ হাসপাতালে রেখেই মাসুদ রানার পরিবারের লোকজন চলে যায়। এ ব্যাপারে কালিহাতী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গৃহবধূর বাবা ও সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের অপরাধ বিভাগের পরিদর্শক আ. হালিম সরকার জানান, যৌতুকের কারণেই তার আদরের মেয়েকে খুন করা হয়েছে। তিনি মাসুদ রানাকে ঢাকায় থাকার বাড়ি ভাড়া ও সংসার খরচও দিয়েছেন। মোটরসাইকেল কেনার জন্য কিছুদিন আগে দুই লাখ টাকা নিয়েছে। সম্প্রতি কালিহাতী উপজেলা সদরে তার ক্রয়কৃত ১০ শতাং ভূমির উপর চোখ পড়ে মাসুদ রানার। মাসুদ রানা বাড়ি করার জন্য তার কাছে ওই জমি দাবি করেন। তিনি আক্ষেপ করে জানান, সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তার আশায় পুলিশের পরিদর্শক হয়ে কস্টেবলের কাছে মেয়েকে তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু রক্ষকই যখন ভক্ষক হয় তখন আর সমাজে কিছু থাকেনা। তিনি মেয়ে হত্যাকারীর শাস্তি দাবি করেন।
নিহত গৃহবধূর স্বামী পুলিশ কনস্টেবল মাসুদ রানা জানান, ওই ঘটনার সময় তিনি চাকুরিস্থল ঢাকায় ছিলেন। সংবাদ পেয়ে ছুটি নিয়ে গ্রামে এসেছেন। তিনি জানান, মোটরসাইকেল কেনার জন্য তিনি শ্বশুরের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়েছেন এবং ঢাকায় অবস্থানকালে তার শ্বশুর প্রতি মাসে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু তার বাড়ির পাশে শ্বশুরের জমির প্রতি তার কোন লোভ নেই- তিনি ওই জমি চাননি।
কালিহাতী থানার অফিসার ইনর্চাজ মীর মোশারফ হোসেন বলেন, আমরা পড়েছি ফাঁটাকলে, মেয়ের বাবাও পুলিশ, স্বামীও পুলিশ। প্রাথমিক অবস্থায় জানতে পেরেছি ঘটনাটি আত্মহত্যা কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টের আগে সঠিকভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno