আজ- ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  বিকাল ৪:৪২

গোবিন্দাসী ঘাসের বাজার চরাঞ্চলের মানুষের আয়ের উৎস!

 

বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার যমুনার তীর ঘেষে গড়ে ওঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবো) গোবিন্দাসী খেয়া ঘাট। বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর ঘাটটি তার জৌলুশ ও প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশে হারিয়েছে।

ওই ঘাটে গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য ঘাসের বাজার দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঘাস বা তৃণ বিকিকিন হয়। ঘাস চাষ ও বিক্রি যমুনার চরাঞ্চলের অনেকের আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে।

জানাগেছে, প্রমত্ত্বা যমুনার বামতীর তথা টাঙ্গাইল অংশের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল মূলত নানা ফসলাদি উৎপাদনের উর্বরক্ষেত্র। সময়ের চাহিদা পুরণে চরাঞ্চলের কৃষকরা বর্তমানে গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য ঘাস বা তৃণ চাষ করছেন। গ্রামাঞ্চলে ফসলাদি উৎপাদনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাৎসরিক আয়ের অংশ হয়ে ওঠেছে ঘাস চাষ।

গবাদিপশু পালন বাঙালি সংস্কৃতির উপাচার হওয়ায় ঘাস চাষও হয়ে ওঠেছে জীবনাচারের অংশ। চরাঞ্চলের প্রায় কৃষকই চাষ করছেন নেপিয়ার, দূর্বা, গর্বাঘাস সহ আরও নানা জাতের ঘাস।

যমুনার তীর ঘেষা ওই বাজার এক সময় টাটকা মাছের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। সময়ের বিবর্তনে বর্তমানে ঘাসের বাজার হিসেবে গবাদিপশু লালন-পালনকারীদের কাছে পরিচিতি পেয়েছে।

এক সময়ের পরিত্যক্ত জমি, বাড়ির আঙিনা, রাস্তার পাশ ও পতিত জমি হয়ে ওঠেছে অর্থের উৎস। চাষকৃত ঘাস বিকিকিনির জন্য প্রকৃতিগতভাবে জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে গড়ে ওঠেছে গোবিন্দাসী ঘাটের ঘাসের বাজার।

কবে, কখন, কিভাবে এ বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- তার কোন দিন-ক্ষণ নেই। তবে স্থানীয় পর্যায়ে গোয়াল বা খামারে গৃহপালিত পশুখাদ্যের প্রয়োজনে অজান্তেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঘাসের বাজার- যা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে।

সরেজমিনে জানা যায়, গোবিন্দাসী ঘাট ঘাসের বাজারে প্রতি আঁটি ঘাস আকার ভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। এক আঁটি কাঁঠাল পাতা ৩০টাকা, দূর্বাঘাস ৭০-৮০ টাকা, গর্বাঘাস ৭০-৮০ টাকা, নেপিয়ার ঘাস প্রকার ভেদে ৩০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

গাবসারা ইউনিয়নের কালিপুর গ্রামের ঘাসচাষি মিজানুর রহমান ওই বাজারে ঘাস বিক্রি করতে এসেছেন। তিনি জানান, চরাঞ্চলে ঘাস চাষ করে প্রতিদিন এ বাজারে বিক্রি করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। তার এক ছেলেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলছেন। দুটি মেয়ের মধ্যে একটির বিয়ে দিয়েছেন। অপরটি স্কুলে পড়ালেখা করছে।

তিনি আরও জানান, যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তার চাষকৃত ৮০ শতাংশ জমির ঘাস ডুবে যাওয়ায় কিছুটা চিন্তিত। শুধুমাত্র ঘাস বিক্রি করেই তিনি পরিবারের বাৎসরিক চাহিদা পুরণ করে থাকেন।

নিয়মিত ঘাস বিক্রেতা ফজল শেখ জানান, প্রতিদিন ওই বাজারে অনেক মানুষ ঘাস কিনতে আসেন। তারা ঘাস চাষ ও বিক্রি করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন। চরাঞ্চলে ঘাসের উৎপাদন ভালো হয়। ঘাস বিক্রি করে বর্তমানে ভালো আয় হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ঘাস বিক্রি করতে আসা কলেজছাত্র রাব্বি জানান, তারা গরীব মানুষ। ঘাস চাষ ও মাছ ধরে বিক্রির টাকায় তাদের সংসার চলে। তার ও তার ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচও এখান থেকেই আসে।

ঘাস পরিবহনে নিয়োজিত ভ্যান চালক নায়েব আলী জানান, তিনি ভ্যান নিয়ে প্রতিদিন ঘাসের বাজারে আসেন। ঘাস আনা-নেওয়া করে তিনি প্রতিদিন গড়ে ৫০০-৬০০ টাকা উপার্জন করেন।

ঘাসের ক্রেতা জুরান আলী মন্ডল জানান, তিনি প্রায়ই ঘাসের বাজারে আসেন। প্রতিদিন ৩-৪ আঁটি ঘাস ৮০-১২০ টাকায় কিনেন। তিনি প্রতিদিন টাটকা ঘাস কিনে গরু-ছাগলকে খাওয়ান।

মানুষের মতো টাটকা খাবার পাওয়ার অধিকার গবাদিপশুরও রয়েছে বলে জানান তিনি। প্রতিদিন বিভিন্ন উপজেলা থেকে মানুষ এ বাজারে ঘাস কিনতে আসেন।

গোবিন্দাসী ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু জানান, প্রতিদিন সকালে চরাঞ্চলের অসংখ্য কৃষক গোবিন্দাসী ঘাটপাড়ে ঘাস বিকিকিনি করছেন। ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় এখন ওইস্থানটি ঘাসের বাজার হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno