আজ- ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  বিকাল ৩:৪৮

গোবিন্দাসী হাটে খাজনা বেশি, গরু নেই

 

দৃষ্টি নিউজ:

গোবিন্দাসী গরুর হাট। ২৮ আগস্ট দুপুরে তোলা ছবি

আর মাত্র ক’দিন পরই কোরবানির ঈদ, পবিত্র ঈদুল আজহা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী গরু হাটে এ সময় প্রচুর গরু থাকার কথা। কিন্তু হাটে খাজনা বেশি থাকায় গরু বেপারিরা অন্যত্র চলে গেছে। হাটে গরু নেই বললেই চলে।
জানাগেছে, টাঙ্গাইল শহর থেকে বঙ্গবন্ধুসেতু হয়ে ৩১ কি.মি., ভূঞাপুর উপজেলা সদর থেকে ৬ কি.মি. এবং বঙ্গবন্ধুসেতু থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে যমুনার কোল ঘেষে ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসীতে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর গরুর হাট অবস্থিত। গোবিন্দাসীতে সপ্তাহের রোব ও বৃহস্পতিবার এই দুই দিন হাট বসে। তবে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের এক মাস আগে থেকে প্রতিদিনই গরু কেনা-বেচা হয়। সিলেট, রাজশাহী, রংপুর বিভাগ ছাড়াও ভারত থেকে হাজার হাজার গরুর সমাগম ঘটে এবং গরুর ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় পুরো গোবিন্দাসী মুখরিত হয়ে ওঠে। গরু ভর্তি শ’ শ’ ট্রাকে হাটের তিনদিকে জট লেগে থাকে। এ সুবাধে হাট এলাকায় দোকানপাট গড়ে ওঠার পাশাপাশি কেউ হোটেল করে জীবিকা নির্বাহ করছে, কেউ চা-পান বিক্রি করছে, কেউ গরুর গোয়াল ভাড়া দিচ্ছে, কেউ গরুর খাবার খর বিক্রি করছে। মোদ্দা কথা, গরুর হাটকে কেন্দ্র করেই অত্রাঞ্চলের রাজনীতি-অর্থনীতি আবর্তিত হচ্ছে। গোবিন্দাসীসহ অত্রাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান দিচ্ছে এই হাট। এই হাটকে ঘিরে এতদাঞ্চলের অনেকেই নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ১৯৯০ সালের আগে গোবিন্দাসী একটি ছোট বাজার ছিল। চরাঞ্চলের মানুষ প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতো। ১৯৯১ সালের পর সপ্তাহে দুইদিন রোববার ও বৃহস্পতিবার হাট বসানো হয়। সে সময় সাধারণত বিকালে হাট বসতো। সন্ধ্যার পর ‘মশাল’ বাতি জ্বালিয়ে রাত ৭-৮টা পর্যন্ত দোকানপাট চালানো হতো। তখন স্থানীয়রা ৮-১০টা করে করে গরু হাটে তুলে বিক্রি করার চেষ্টা করে। কখনো বিক্রি হয়, আবার কখনো হয়না। ১৯৯৫ সালে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ইকরাম উদ্দিন তারা মৃধা গোবিন্দাসী হাটটি মাত্র ৩২ হাজার টাকায় ইজারা নেন। গোবিন্দাসী হাটটিতে নদী ও স্থল পথে যাতায়াতের সুবিধা বিবেচনা করে দেশের সিলেট, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের গরু ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করেন। তাদেরকে হাটে আনতে নানা রকম প্রণোদনা চালু করেন। যেমন রংপুর, রাজশাহী বিভাগ ও ভারত থেকে গোবিন্দাসী হাটে গরু আনলে যমুনা নদীর পাড়াপাড়ের জন্য ফেরি ফ্রি, হাটে গরুর পাহারা ফ্রি এ রকম হরেক রকম প্রণোদনা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাটমুখো করতে ট্রাক নিয়ে বিভিন্ন জেলায় মাইকিং করা হয়। ধীরে ধীরে গোবিন্দাসী গরুর হাটের প্রসারতা বাড়ে, জমে ওঠে গোবিন্দাসী গরুর হাট। বর্তমানে হাটটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর গরুর হাট হিসেবে বিবেচিত।
বর্তমানে এ গরুর হাট নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
গত ২৪ ও ২৭ আগস্ট(বৃহস্পতি ও রবিবার) খোলা ডাকের মাধ্যমে প্রশাসন থেকে ১৬ লাখ টাকায় স্থানীয় জাহিদুল ইসলাম খোকাকে খাজনা আদায়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু ইজারাদার খোকা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের কাছ থেকে গরু প্রতি ৭০০ টাকা খাজনা আদায় করায় গরুর ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। এছাড়া বিক্রেতাদের কাছ থেকেও ১০০-২০০ টাকা খাজনা নেয়ায় ক্রেতা ও বিক্রেতারা ক্ষুব্ধ হয়। তারা গরু অন্যত্র বিকিকিনি করার প্রয়াস পান। ফলে এক-দুদিনের মধ্যে গরু শূন্য হয়ে পড়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর গোবিন্দাসী হাট।

গোবিন্দাসী গরুর হাটের একটি গরু-মহিষের আবাসিক হোটেল

ভূঞাপুর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে প্রকাশ, খাস কালেকশনের জন্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বাংলা ২৫/১০/১৪১৪ ইংরেজি ০৭/০২/২০০৮ নীতিমালা মোতাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতি, সহকারি কমিশনার (ভূমি) সদস্য সচিব, সংশ্লিষ্ট হাটের নিকটবর্তী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের পুরুষ ও মহিলা ইউপি সদস্য, ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা কমিটির সদস্য থাকার কথা। কিন্তু কমিটির সদস্যদের অবহিত না করে উপজেলা প্রশাসন এক তরফাভাবে খাস কালেকশনের কার্যক্রম পরিচালনা করেন বলে অভিযোগ হাট সংশ্লিষ্টদের।
শুধুমাত্র উপজেলা প্রশাসনের খামখেয়ালীর কারণে হাটটি ঐতিহ্য হারিয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এ হাটকে ঘিরে স্থানীয় পর্যায়ে অর্ধশত গরু-মহিষের আবাসিক হোটেল গড়ে ওঠেছে। গরু-মহিষের আবাসিক হোটেল মালিক মো. শাহীন মিয়া, শহিদ মিয়া, রজব আলী সহ অনেকেই অভিযোগ করেন, প্রতিবছর কোরবানির ঈদ মৌসুমে তারা ভঅল আয়-রোজগার করেন। কিন্তু অব্যবস্থাপনার জন্য এবার হাটে খাজনা বেশি, গরু নেই। সব ক্রেতা-বিক্রেতারা হাট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ঈদের এ সময়টাতে এ এলাকা সরগরম থাকে, কোলাহলে পরিপূর্ণ থাকে হাট। অথচ হাটে গরু নেই, নেই ক্রেতা-বিক্রেতাও। চারদিকে শুনশাণ নিরবতা।
গরু হাটের বিক্রেতারা জানান, গরু নিয়ে আসলে সঠিক মূল্য না পেয়ে ফেরত নিতে গেলে হাট কর্তৃপক্ষ ঝামেলার সৃষ্টি করে। ডগায় গরু বাধলে প্রতি গরু ১০০ টাকা অতিরিক্ত নেয়া হয়েছে- যা কোনভাবেই তাদের কাছে প্রত্যাশিত নয়।
গোবিন্দাসী গরু হাট পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু, গোবিন্দাসী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী, মহিলা মেম্বার জান্নাতুল ফেরদৌস, ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, খাস কালেকশনের ইজারা দেয়া ও প্রশাসন কর্তৃক খাজনা আদায়ের ব্যাপারে আমাদের কখনো কোন দিনই বিষয়টি জানানো হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানান, খাজনা বেশি আদায়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাটের ইজারা প্রক্রিয়া এভাবেই প্রায় ত্রিশ বছর যাবৎ পরিচালিত হয়ে আসছে। অতিরিক্ত খাজনা আদায় অব্যাহত থাকলে ধীরে ধীরে হাটটির অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে পড়বে। এছাড়া সরকার হাট থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno