আজ- ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  দুপুর ২:২৯

গ্যাস সঙ্কটে চমচমের উৎপাদন ব্যাহত

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলে গ্যাস সঙ্কটের কারণে ঐতিহ্যবাহী চমচমের উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পোড়াবাড়ীর চমচমের নাম-ডাক ও ঐতিহ্য রয়েছে। তবে ওই পোড়াবাড়ীর চমচমের জন্য এখন টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনী বাজার বিখ্যাত।


ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গ্যাসের সঙ্কট থাকলেও তাদের আগের মতোই পুরো গ্যাস বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে ঠিকমতো তারা গ্যাস পাচ্ছেন না। তাই জ্বালানি হিসেবে কাঠের লাকড়ি পুড়িয়ে চমচম তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে কারিগররা চাহিদার চার ভাগের এক ভাগ চমচমও উৎপাদন করতে পারছেন না। ফলে কয়েক গুণ বেশি খরচ করেও চাহিদানুযায়ী চমচম উৎপাদন করতে না পারায় তারা ব্যবসায়কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।


জানাগেছে, টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনী বাজার মূলত মিষ্টি বিক্রির তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। সেখানে অন্তত ১৬টি মিষ্টির দোকানের চমচম তৈরি হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন হাজারো মানুষ পাঁচআনী বাজারে বিখ্যাত চমচমের স্বাদ নিতে ও মিষ্টি কিনতে আসেন। গত ৩-৪ মাস ধরে গ্যাস সঙ্কটের কারণে টাঙ্গাইলের বিখ্যাত সেই চমচম উৎপাদনে ভাটা পড়েছে।


সরেজমিনে চমচমের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যেকটি চমচম দোকানের আলাদা আলাদা কারখানা রয়েছে। প্রত্যেকটি কারখানায় ৪ থেকে ৮টি করে গ্যাসের চুলা বসানো আছে। কিন্তু গ্যাস না পাওয়ায় কারিগররা কাঠের লাকড়ি পুড়িয়ে প্রথম দুধ জ্বাল দিচ্ছেন। পরে দুধ থেকে ছানা বের করে চিনি এবং আংশিক ময়দা মিশিয়ে চমচম তৈরি করছেন।

ঐতিহ্যবাহী চমচমের ভেতরটা অংশিক ফাপা নরম ভাব হয় যেমন- তেমন এর ঘ্রানও অনন্য। দুধ জ্বাল দিয়ে শুকিয়ে তৈরি করা গুঁড়া মাওয়া ছিটিয়ে দেওয়া হয়- যা টমটমের স্বাদে অন্যরকম বৈচিত্র্য আনে।


গাজীপুর থেকে চমচম কিনতে আসা রাকিব হাসান জানান, টাঙ্গাইলের চমচমের সুখ্যাতি বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে বলে পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। বিষয়টি জানার পর টাঙ্গাইলে এসে চমচম কিনে খাওয়ার ইচ্ছা ছিল। সে কারণে এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে টাঙ্গাইল এসেছেন। দুই কেজি চমচম ৬০০ টাকা দিয়ে কিনেছেন।


গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডারের কারিগর আব্দুর রহমান জানান, বর্তমান গ্যাস খুবই কম। লাকড়ি দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিদিন ২০ মণের বেশি লাকড়ি লাগে। তবে উৎপাদন আগের মতো না হওয়ায় এক বেলা দোকানে মিষ্টি থাকে- অন্যবেলা থাকে না। এতে বেচাকিনিও খুব কম হয়।


পোড়াবাড়ী মুসলিম মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক আবু সাইদ জানান, গ্যাস সরবরাহ ঠিক থাকা অবস্থায় ৩০ থেকে ৩৫ মণ করে চমচম উৎপাদন করা যেত। বর্তমানে কাঠের লাখড়ি দিয়ে চার ভাগের এক ভাগও উৎপাদন করা যাচ্ছে না। বর্তমানে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ মণ উৎপাদন করা যায়। এতে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে তারা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তবে এখনও তা কার্যকর করেননি।


তিনি আরও জানান, গ্যাস কম সরবরাহ থাকলেও বিল আগের মতোই আসছে। আগে মাসে ৫০-৬০ হাজার টাকা বিল আসতো এখনও ৫০-৬০ হাজার টাকারই বিল আসছে।


টাঙ্গাইল জেলা রেঁস্তোরা ও মিষ্টি ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি এবং জয়কালী মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক স্বপন ঘোষ জানান, বর্তমানে চার ভাগের এক ভাগ টাঙ্গাইলের চমচম উৎপাদন করা যাচ্ছে। প্রতিদিন তার দোকানে ২০-২৫ মণ লাকড়ি ব্যবহার হচ্ছে।

কাঠের লাকড়ি ব্যবহার করায় খরচও বেড়েছে কয়েক গুণ। শহরের প্রত্যেকটি মিষ্টির দোকানের কারখানায় গ্যাসের চুলায় চমচম তেরি করা হয়। গ্যাস অফিসে যোগাযোগ করলে তারা বলেন ঢাকার প্রধান ফিডার থেকে গ্যাস কম সরবরাহ করা হয়। এখানে তাদের কিছু করার নেই।


তিনি আরও জানান, তাদের সমিতির অধীনে ২০০টি মিষ্টির দোকান রয়েছে। ছোট-বড় সবমিলিয়ে টাঙ্গাইল জেলায় এক হাজার টির মতো মিষ্টির দোকান রয়েছে যেখানে চমচম বিক্রি হয়।


টাঙ্গাইল নগরজলফৈ তিতাসের জোনাল মার্কের্টিং অফিসের ম্যানেজার খোরশেদ আলম জানান, ফিডার লাইন থেকে গ্যাস কমে গেছে। আগে প্রতিদিন ৮০ মিলিয়ন গ্যাস পেতাম। বর্তমানে প্রতিদিন ৪০ মিলিয়ন পাওয়া যাচ্ছে।

ভোলায় কিছু গ্যাস আছে। সরকারের পক্ষ থেকে সেই গ্যাস ঢাকায় আনার চেষ্টা চলছে। সেখান থেকে আনতে পারলে গ্যাস সরবরাহ ঠিক হবে বলে আশা করা যায়।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno