আজ- ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  সকাল ৯:১৮

ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন

 

দৃষ্টি ডেস্ক:

মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে তৃতীয়বারের মতো বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

করোনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) দুপুর ৩টায় এ বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।

শুরুতে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর দীর্ঘতর প্রভাব এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাইরাসটির দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে সৃষ্ট ক্ষতি পুনরুদ্ধারের কৌশল বিবেচনায় নিয়ে এবং বিশেষভাবে স্বাস্থ্য খাতে উদ্ভূত প্রয়োজন মেটানো এবং ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে।

কোভিড-১৯-এর প্রভাব মোকাবিলায় প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ব্যবস্থা প্রস্তাবিত বাজেটে রাখা হয়েছে।

এর আগে দুপুরে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাজেটের অনুমোদন দেয়া হয়। দুপুর ১২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের পশ্চিম ব্লকের দ্বিতীয় তলায় মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এ বিশেষ বৈঠক হয়। নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এতে অনুমোদন দিয়ে স্বাক্ষর করেন।

পরে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে খয়েরি ব্রিফকেস হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংসদ কক্ষে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এই ব্রিফকেসেই ছিল আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট।

‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামের এবারের বাজেটটি প্রস্তুত করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে কম সংখ্যক সংসদ সদস্যের (এমপি) উপস্থিতিতে দেশের ৫০তম বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। যারা অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন তাদের আসতে হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে।

এর আগে বুধবার (২ জুন) বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের অধিবেশন কক্ষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন বসে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ অধিবেশন চালানো হচ্ছে। গত বছরের মতো এবারের অধিবেশনও সংক্ষিপ্ত হবে।

এবারের বাজেটে প্রাধিকার পেয়েছে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। বাজেটটি করা হয়েছে সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে। বাজেটে সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের বাস্তবায়ন, কৃষিখাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অর্থবছরের পুরো সময় জুড়েই থাকবে সরকারের নানা ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, বাড়ানো হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা।

নতুন বাজেটে মোট ব্যয়ের আকার ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ১৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।

খাতভিত্তিক বরাদ্দ:

বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য, কৃষি ও কর্মসৃজনকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মানবসম্পদ (শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য) খাতে ২৯.৪ শতাংশ, সার্বিক কৃষি খাতে (কৃষি, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান, পানিসম্পদ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য) ২১.৭ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১২.১ শতাংশ, যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে (সড়ক, রেল, সেতু এবং যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য) ২৬.৪ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ১০.৪ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাজেট ঘাটতি:

২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬.২ শতাংশ। এই হার গত বাজেটে ছিল ৬.১ শতাংশ। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক উৎস হতে এক লাখ এক হাজার ২২৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস হতে এক লাখ ১৩ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা হতে সংগৃহীত হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক-বহির্ভূত খাত হতে আসবে ৩৭ হাজার এক কোটি টাকা।

ব্যয় কাঠামো:

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সম্পাদিত কাজের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী কাজগুলোকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো- সামাজিক অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো ও সাধারণ সেবা খাত।

প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক অবকাঠামো খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৮.২৫ শতাংশ; এর মধ্যে মানবসম্পদ খাতে (শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাত) বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা।

ভৌত অবকাঠামো খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বা ২৯.৭৬ শতাংশ; যার মধ্যে সার্বিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৭৪ হাজার ১০২ কোটি; যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ৬৯ হাজার ৪৭৪ কোটি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা।

সাধারণ সেবা খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৪.০৪ শতাংশ।

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), বিভিন্ন শিল্পে আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি, রাষ্ট্রায়ত্ত, বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য ব্যয় বাবদ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৫.৭৪ শতাংশ; সুদ পরিশোধ বাবদ প্রস্তাব করা হয়েছে ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১১.৩৬ শতাংশ; নিট ঋণদান ও অন্যান্য ব্যয় খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে পাঁচ হাজার ১০৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ০.৮৫ শতাংশ।

মধ্যমেয়াদি নীতি-কৌশল:

বিগত এক দশকে বাংলাদেশের ক্রমাগত উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন কোভিড-১৯-এর প্রভাবে সাময়িক বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে করোনাভাইরাসের কারণে তা হ্রাস পেয়ে পাঁচ দশমিক দুই শতাংশে দাঁড়ায়।

তবে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কোভিড-১৯-এর প্রভাব হতে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার হবে ধরে নিয়ে চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল আট দশমিক ২০ শতাংশ।

কিন্তু এ মহামারির প্রভাব দীর্ঘতর হওয়া এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এবং পুনরায় লকডাউন ঘোষণার কারণে অর্থনেতিক কর্মকাণ্ডে শ্লথ অবস্থা বিরাজমান এবং রফতানি ও আমদানির ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত গতি ফিরে পায়নি।

তবে প্রবাসী আয়ে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হওয়া এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকার ঘোষিত বৃহৎ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন সংশোধন করে ছয় দশমিক এক শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

পাশাপাশি কোভিড-১৯ পরবর্তী উত্তরণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৭.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সময়ে মূল্যস্ফীতি ৫.৩ শতাংশ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

মধ্য মেয়াদে প্রবৃদ্ধির প্রধান উৎস হলো- শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা। অন্যদিকে সরবরাহের দিক থেকে শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর মাধ্যমে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ প্রতিষ্ঠার কাজ দ্রুতগতিতে বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ লক্ষ্য অর্জিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে।

এদিকে বাজেটকে অধিকতর অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে বাজেটের সব তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাঠ ও ডাউনলোড করতে পারছেন।

দেশ-বিদেশ থেকে ওই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফিডব্যাক ফরম পূরণ করে বাজেট সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ প্রেরণ করা যাবে। প্রাপ্ত সব মতামত ও সুপারিশ বিবেচনা করা হবে। জাতীয় সংসদ কর্তৃক বাজেট অনুমোদনের সময় এবং পরে তা কার্যকর করা হবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno