আজ- ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  দুপুর ১:২৪

টাঙ্গাইলে শিশু-কিশোরদের মাতৃভাষা প্রীতি ॥ কলা গাছের তৈরি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত এলাকায় শহীদ মিনার না থাকায় স্থানীয় কচিকাঁচা শিশু-কিশোররা রোববার(২১ ফেব্রুয়ারি) কলাগাছের তৈরি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে।

অভিভাবকদের কাছে অমর একুশের ভাষা আন্দোলনের গল্প শুনে ও বই পড়ে মাতৃভাষার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তারা শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা কাগমারা, এনায়েতপুর, সন্তোষ বালুচরা, পিচুরিয়া, ধরেরবাড়ি, দুরিয়াবাড়ি, বানিয়াবাড়ি, কোনাবাড়ি, চিলাবাড়িসহ উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের অধিকাংশ প্রাইমারি স্কুলে শহীদ মিনার নেই।

চরাঞ্চলে সাধারণত এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িগুলোই দূরে দূরে অবস্থিত। এক স্কুল থেকে অন্য স্কুল তো অনেকটাই দূরে অবস্থিত। আবার সব স্কুলে শহীদ মিনার নেই।

তাই স্ব স্ব স্থানীয় শিশুরা বাড়ির উঠানে মাটি দিয়ে উঁচু করে কলাগাছ পুঁতে শহীদ মিনার তৈরি করেছে।

দ্বিতীয় থেকে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী এসব শিশু-কিশোরদের বয়স ৬-১৫ বছর। শহীদ মিনার তৈরিতে তারা প্রথমে কাঁদামাটি, কলাগাছ, বাঁশের কঞ্চি ও রঙিন কাগজের ব্যবহার করেছে। নিজেদের তৈরি শহীদ মিনারে তারা একুশের প্রত্যুষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে।

প্রতিটি মিনারের ওপর অপেক্ষাকৃত ছোট কলাগাছের আরও তিনটি টুকরা তির্যকভাবে আটকে দেওয়া হয়েছে। রঙিন কাগজ ও নানা রঙের ফুল দিয়ে প্রতিটি মিনার মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

চারপাশে সুতা টানিয়ে তাতে রঙিন কাগজ ও বেলুন দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। শহীদ বেদিতে বুনোফুল ছাড়াও কিছু গাঁদা ও গোলাপফুলও দিয়েছে। পাশেই সাউন্ড সিস্টেমে দেশাত্মবোধক গান বাঁজানো হচ্ছে।

কয়েকটি জায়গায় আবার ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে শিশুরা খাবারের আয়োজনও করেছে।

এসব শিশু-কিশোররা জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ। অভিভাবকদের কাছ থেকে অমর একুশের ভাষা আন্দোলনের গল্প শুনে ও বই পড়ে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে জানতে পেরেছে।

তাছাড়া প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারিতে প্রভাত ফেরি নিয়ে অভিভাবকদের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে দেখে তারা উদ্বুদ্ধ হয়েছে।

ইটের তৈরি শহীদ মিনারে বড়দের শ্রদ্ধা জানাতে দেখে তারা বাড়ির আঙিনা বা পতিত জমিতে কলাগাছের প্রতীকী শহীদ মিনার তৈরি করে নিজেরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছে।

কেউ বাড়ির গাছের ফুল দিয়ে আবার কেউ মা-বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফুল কিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে।

শিশু শিক্ষার্থী মারুফ মিয়া, রকিবুল, ফরিদ, বেল্লাল, সায়মা, রাতুল সহ অনেকেই উৎসাহের সঙ্গে জানায়, ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় এলেই তারা অভিভাবকদের কাছ থেকে শহীদ দিবসের কথা শুনতে থাকেন।

বই পড়ে তারা ২১ ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে শিক্ষকদের কাছ থেকে দিবসটির তাৎপর্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পরিকল্পনা করে।

তারা কয়েকজন মিলে কীভাবে শহীদ মিনার বানানো যায়, কোথায় ফুল পাওয়া যাবে, কে কে তাদের কাজে সহযোগিতা করবেন- এসব বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত ও বড়দের সহযোগিতা নেয়।

২০ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা কাজ শুরু করে। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে পাড়ার ছেলে- মেয়েরা মিলে মিশে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম জানায়, বাবা-মা ও স্কুলের বড় ভাইদের কাছ থেকে সে একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে জেনেছে। কীভাবে শহীদ মিনার তৈরি করা যায় ও শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হয় সেটাও তাদের জানা থাকায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

মো. কবির মিয়া জানায়, তাদের মধ্যে কেউ নিজের বাড়ির ফুল আবার অনেকেই শহর থেকে ফুল কিনে এনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাদের ভালোই লাগে।

সায়মা আক্তার জানায়, সে জানতে পেরেছে বাংলা ভাষার জন্য রফিক, শফিক, জব্বার, বরকত সহ অনেকেই শহীদ হয়েছেন। তাদের সম্মানে সকালে ফুল দিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে ও তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছে।

একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাকিব মিয়া জানান, তাদের গ্রামে কোন স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় সকালে শিশু-কিশোরদের নিজেদের তৈরি কলা গাছের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে দেখে তিনি আপ্লুত হয়েছেন।

গ্রামে যে ফুল পাওয়া সেই ফুল দিয়েই তারা শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। কেউ কেউ শহর থেকে ফুল কিনে এনেছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজনের) টাঙ্গাইল জেলা শাখার সহ-সভাপতি বাদল মাহমুদ বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি ভাল দিক। প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের শিশু-কিলোররা অন্তত এটা বুঝতে পেরেছে ২১ ফেব্রুয়ারি কিছু একটা হয়েছিল।

সেজন্য বড়দের অনুকরণে কোমলমতি শিশুরা কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। এটাকে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতে নিয়ে তাদের কাছে অমর একুশের মূল তাৎপর্যটা তুলে ধরতে পারি।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno