আজ- ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  রাত ২:১৬

টাঙ্গাইল জেলা যুুবদল সভাপতি শাতিলকে হত্যার ব্যর্থতায় যুবলীগের দুই নেতা খুন হন

 

দৃষ্টি নিউজ:

Tangail--shamim & mamun-17.03.2017
টাঙ্গাইলে প্রায় পাঁচ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া আওয়ামী যুবলীগের দুই নেতাকে হত্যা করে মরদেহ গুমের ঘটনার মূলরহস্য উন্মোচিত হয়েছে। টাঙ্গাইল-৩(ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার ঘনিষ্ঠ সহযোগী যুবলীগ নেতা ও তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোর্শেদ তার দল নিয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়ে মরদেহ গুম করেন। জেলা জাতীয়তাবাদী যুব দলের নেতা শহরের বিশ্বাস বেতকার খন্দকার আহমেদুল হক শাতিলকে হত্যা করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদেও দুজনকে খুনের পর মরদেহ গুম করা হয়। ঘটনার দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই তথ্য জানিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃত ওই দুই আসামির মধ্যে শাহাদত হোসেন সাধু (৪৫) বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বিকালে ও খন্দকার জাহিদুল ইসলাম(৩৮) গত শনিবার (১১ মার্চ) বিকালে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের দুই জনের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুপম কান্তি দাস। জাহিদুলকে গত শুক্রবার(১০ মার্চ) এবং শাহাদতকে গত বুধবার(১৫ মার্চ) টাঙ্গাইল শহরের বিশ্বাস বেতকা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। জাহিদুল বিশ্বাস বেতকার খন্দকার নুরুল ইসলামের ছেলে এবং শাহাদত একই এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, জাহিদুল ও শাহাদত জবানবন্দিতে জানান মামুন ও শামীম হত্যার কিছুদিন আগে সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার ভাই জাহিদুর রহমান খান কাকন তার অফিসে মোর্শেদ, স্বপন, জাহিদ, সবুজসহ কয়েকজনকে ডেকে নেন। জাহিদুর তাদের পাঁচ লাখ টাকা ও একটি পিস্তল দিয়ে বিশ্বাস বেতকা কলেজগেট এলাকার জেলা যুবদলের সভাপতি খন্দকার আহমেদুল হক শাতিলকে হত্যার ব্যবস্থা করতে বলেন। হত্যার কাজে প্রয়োজনীয় আরও দুই লাখ টাকা ও অস্ত্র মোর্শেদকে দিতে বলেন। জাহিদুরের কাছ থেকে মোর্শেদ দায়িত্ব পেয়ে শাতিলকে হত্যার জন্য মামুন ও শামীমকে ডেকে আনেন। এই হত্যার জন্য দুইটি মোটরসাইকেল, সাত লাখ টাকা ও দুইটি রিভলবার (একটি জাহিদুরের দেওয়া) মামুন ও শামীমকে দেন।
তারা আরো বলেন, ২০১২ সালের ১৬ জুলাই বিশ্বাস বেতকায় মোর্শেদ তাঁর কার্যালয়ে শামীম ও মামুনকে ডাকেন। সে সময় তাঁরা(মামুন ও শামীম) বলেন, শাতিলকে তাঁরা হত্যা করতে পারবেন না। টাকা ও অস্ত্র ফেরত চাইলে তাঁরা বলেন, টাকা খরচ হয়ে গেছে এবং মোটরসাইকেল ও অস্ত্র ফেরত দেবেন না। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে কার্যালয়ের মধ্যেই কুপিয়ে ও পিটিয়ে শামীম ও মামুনকে হত্যা করা হয়। মরদেহ বস্তায় ভরে বাসাইল উপজেলার নথখোলায় নিয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় মরদেহ দুটির মাথা বিচ্ছিন্ন করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। জবানবন্দিতে তাঁরা বলেন, রাতে মোর্শেদ ও তাঁর সহযোগিরা সাংসদ আমানুর রহমান খান রানার সঙ্গে দেখা করেন। সাংসদ রানা তাদের কিছুদিনের জন্য আত্মগোপনে থাকতে বলেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ১৬ জুলাই সকালে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ শামীম (২৮) ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন মিয়া (২৫) বাড়ি থেকে টাঙ্গাইল শহরের উদ্দেশ্যে বের হয়ে তারা নিখোঁজ হন। এ ব্যাপারে শামীমের মা আছিয়া খাতুন বাদি হয়ে পরদিন ১৭ জুলাই টাঙ্গাইল মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
নিখোঁজের এক বছর পর মামুনের বাবা আব্দুল আজিজ বাদি হয়ে ২০১৩ সালের ৯ জুলাই টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন। মামলায় মোর্শেদসহ তাঁর বাহামভুক্ত ১৩ জনকে আসামি করা হয়। পরবর্তীতে মামলার তদন্তের দায়িত্ব জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দেওয়া হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ অশোক কুমার সিংহ বলেন, এ মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি খন্দকার জাহিদুল ইসলাম ও শাহাদত হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে দু’জনেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
নিহত দুজনের পারিবার জানায়, ঘটনার পর তারা মামলা করার সাহস পাননি। ২০১৩ সালের জুন মাসে টাঙ্গাইল শহরে তুহিন নামে এক যুবককে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর বিশ্বাস বেতকার কথিত যুবলীগ নেতা মো. মোর্শেদ আত্মগোপন করেন। তখন ছেলে নিখোঁজ হওয়ার প্রায় এক বছর পর মামুন মিয়ার বাবা আব্দুল আজিজ আদালতে মোর্শেদসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামুন ও শামীমকে হত্যা এবং তাদের মরদেহ গুম করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, নিহত শামীমের বাবা হাবিবুর রহমান জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে তার ছেলে নিখোঁজ হন। তিনি আশায় ছিলেন, যে কোন সময় শামীম ফিরে আসবে। কিন্তু আসামীদের জবানবন্দির পর জানতে পারেন, আগেই তাকে খুন করা হয়েছে। তিনি খুনীদের ফাঁসি চান। নিহত শামীমের মা আছিয়া খাতুন ছেলের এ পরিণতির সংবাদে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, যারা তার সোনার টুকরা ছেলেকে খুন করেছে তাদের ফাঁসি চাই। নিহত মামুনের বাবা আবদুল আজিজ বর্তমানে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। মামুনের মা জোবেদা বেগম বলেন, ‘যারা আমার পোলারে টাউনে ডাইকা নিয়া খুন করছে আমি তাগোর ফাঁসি চাই’।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno