আজ- ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  সন্ধ্যা ৬:৫৯

ডানের পরিবর্তে বাঁ চোখে অপারেশন নিয়ে তোলপাড়!

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালে ডানের পরিবর্তে চিকিৎসক বাঁ চোখে অপারেশন করায় স্থানীয় পর্যায়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে পরবর্তীতে বিনা পয়সায় সমস্যাপীড়িত ডান চোখটিরও অপারেশন করা হয়েছে।

চিকিৎসকের ওই ভুলের দায় হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ানের(টেস্ট রিপোর্ট দাতা) উপর চাপানোর প্রয়াস পেয়েছেন।

ঘটনাটি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলেও প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কার্যত: কোন ব্যবস্থাই নেয়নি।

ভুক্তভোগীর অভিযোগে জানা যায়, গত মার্র্চ মাসে চোখের সমস্যা নিয়ে ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ফারুক হাসানের কাছে যান গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের হরিষা গ্রামের সুফিয়া বেগম(৬৫) নামে এক বৃদ্ধা।

এ সময় টেস্টের মাধ্যমে তার ডান চোখে ব্লক নির্ণয় করা হয়। এ কারণে চিকিৎসক তাঁর চোখ অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। নির্ধারিত তারিখ অনুসারে ৬ মার্চ তাঁর অপারেশন করা হয়। তবে ওইদিন ডান চোখের পরিবর্তে তাঁর বাম চোখের অপারেশন করা হয়।

ভুক্তভোগী রোগী আপত্তি জানালেও ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখের অপারেশন করেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ফারুক হাসান।

রোগীসহ স্বজনরা ভুল চিকিৎসার প্রতিবাদ করায় ওই চিকিৎসক অপারেশনটি ভুল নয়, হাসপাতালের ল্যাব টেস্টের রিপোর্টে ভুলবশত: বাম চোখে ব্লক দেখানো হয়েছে বলে জানান।

এ কারণেই বাম চোখের অপারেশন করা হয়েছে। এতে রোগীর স্বজনরা উত্তেজিত হলে ভুল চিকিৎসার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গত ১৬ মার্চ বিনা পয়সায় সুফিয়া বেগমের ডান চোখের অপারেশন করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রোগী সুফিয়া বেগম জানান, তার ডান চোখে সমস্যা ছিল। কিন্তু ডাক্তার বাম চোখের অপারেশন করেন, তার কোন আপত্তিই চিকিৎসক আমলে নেন নি।

রোগীর ছেলে জজ মিয়া জানান, তিনি তার আম্মার ডান চোখের সমস্যা নিয়ে গত ৬ মার্চ ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালে যান। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডান চোখে ব্লক রয়েছে- যা অপারেশন করতে হবে বলে জানান।

তিনি মায়ের চোখের অপারেশন করার অনুমতি দেন। অপারেশন শেষে তিনি দেখতে পান- তার মায়ের বাম চোখ অপারেশন করা হয়েছে। বিষয়টি চিকিৎসককে জানালে তিনি পরীক্ষায় বাম চোখে ব্লক দেখানো হয়েছে বলে জানান। এটি কেন করা হল- স্বজনদের এমন প্রশ্নের কোন উত্তরই দেননি চিকিৎসক মো. ফারুক হাসান।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনার ১০দিন পর আবার হাসপাতালে চোখের অপারেশনের সেলাই কাটতে তিনি মাকে নিয়ে যান। ওইদিন চিকিৎসক আবার তার মায়ের ডান চোখের অপারেশন করতে হবে বলে জানান। এ সময় তিনি আপত্তি জানালে চিকিৎসক বিনা পয়সায় তার মায়ের ডান চোখের অপারেশনটি করে দেন।

হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ান সাদিয়া আক্তার বলেন, টেস্ট রিপোর্টে ডান চোখেই ব্লক দেখানো হয়েছে। এরপরও ডাক্তার বাম চোখ অপারেশন করেছেন। এখন তাঁর ভুল ধামাচাপা দিতে আমার ও রিপোর্টের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন।

ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ফারুক হাসান বলেন, আমি রোগীর ডান চোখে ব্লক নির্ণয় করি এবং অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হতে বলি। তবে ল্যাব টেকনিশিয়ান ভুলবশত: ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখে ব্লক দেখিয়ে রিপোর্ট করেন। এ কারণে আমি ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখের অপারেশন করে ফেলি।

এরপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর স্বজনদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি মিমাংসা করেছেন। পরে গত ১৬ মার্চ আমার তত্ত্বাবধানেই ওই রোগীর ডান চোখের অপারেশন বিনা পয়সায় করে দেওয়া হয়েছে।

ভুল চিকিৎসার ঘটনার রহস্য উদঘাটনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোন তদন্ত কমিটি করেননি বলেও জানান তিনি।

ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ভুলবশত: ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখ অপারেশন করা হয়েছিল। পরে পরিবারের সাথে কথা বলে রোগীর ডান চোখটিরও অপারেশন করে বিষয়টির মিমাংসা করা হয়েছে।

তবে কি কারণে ও কেন এবং এ ভুলের দায় কার- তা উদঘাটনে এখনও কোন তদন্ত কমিটি গঠন বা অন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. শাহবুদ্দিন খান বলেন, অতিদ্রুত জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে ঘটনাটির রহস্য উদঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno