আজ- ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  দুপুর ১:২৬

প্রাণ ফিরে পাচ্ছে টাঙ্গাইলের লৌহজং ॥ বৃহস্পতিবার পরিদর্শনে আসছেন মন্ত্রী

 

বুলবুল মল্লিক:

dristy-36
টাঙ্গাইলে দখল-দুষনে সরু খালে পরিণত ঐতিহ্যবাহী লৌহজং নদী অবশেষে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। লৌহজং নদী পুনরুদ্ধার ও দুইপাড়ে সড়ক নির্মাণের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। গত সোয়া দুই মাসে নদীটি তার অবয়ব ফিরে পেতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার(৯ মার্চ) দুপুরে গেল বছরের ২৯ নভেম্বর শুরু হওয়া লৌহজং নদী পুনরুদ্ধার ও পরিস্কার-পরিচ্ছনতার কাজ পরিদর্শনে আসছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি। এ এ সময় মন্ত্রী টাঙ্গাইল সফর করবেন এবং শহরের স্টেডিয়াম ব্রিজ সংলগ্ন লৌহজং নদী পরিদর্শন করবেন।
মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে বুধবার(৮ মার্চ) সকালে লৌহজং নদীর কার্যক্রম পরিদর্শন ও স্বেচ্ছাসেবকদের দিকনির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন। তিনি মীরের বেতকায় লৌহজং নদীর মধ্যে নির্মাণাধীন ভবনটি অপসারণে জড়িপকারীদের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মুনিরা সুলতানা, সদও উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) আব্দুর রহিম সুজন, সাংবাদিক, টাঙ্গাইল সিটিজের জার্নালিস্ট গ্রুপ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, জনপ্রতিনিধি সহ নদী তীরবর্তী সাধারণ মানুষ।


সরেজমিনে দেখা যায়, লৌহজং নদীর টাঙ্গাইল শহরাংশে ১০ কিলোমিটার এলাকায় নদী পুনরুদ্ধার ও দুইপাড়ে সড়ক নির্মাণের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে ২ কিলোমিটার এলাকা দখল মুক্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। নদীর দুপাড় দিয়ে চলাচলের রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। খননের মাধ্যমে আরও গভীর করা হবে লৌহজং নদী। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে লৌহজং পুনরুদ্ধার ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করার এই উদ্যেগকে ‘শুভ’ হিসেবে দেখছেন শহরবাসী। শহরবাসীর মাঝে এ নিয়ে উৎফুল্লতা লক্ষ করা গেছে। লৌহজং নদীর দুই পাড়ের জায়গা দখলকারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজ উদ্যোগে স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রশাসনের নির্দেশে কর্তব্যরত সেচ্ছাসেবকরা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে পুনরুদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন।
জেলা সদরের হাজরা ঘাট থেকে শুরু করে স্টেডিয়াম ব্রিজ পর্যন্ত নদীর দুপাড়ে গড়ে ওঠেছিল দরিদ্র শ্রেণির মানুষের থাকার বস্তি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বস্তিবাসীরা এখানে ছিল না। বস্তিবাসী অনেকেই ছিল লেকের পাড়ে। সেখানে ‘ডিসি লেক’ নামে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে সেখান থেকেও তাদের উচ্ছেদ করা হয়। পরে তারা এখানে এসে বস্তি স্থাপন করে।
বস্তির বাসিন্দা আম্বিয়া বেগম, কুলসুম, নায়েব আলী সহ অনেকেই জানান, তাদের যাওয়ার কোন জায়গা নাই, তাদের বাড়ি ছিল যমুনার পাড়ে। প্রমত্তা যমুনা যৌবনের থাবায় তাদের বাড়ি-ঘর গ্রাস করেছে। তারপর থেকে শহরের বিভিন্ন বস্তিই তাদের বাসস্থান। লৌহজং পুনরুদ্ধাওে তারাও শরিক হয়েছেন, নিজেদের ঘর সরিয়ে অন্যত্র রেখেছেন। এখন কোথায় যাবেন তা তারা জানেন না।
বস্তিবাসীদের নিয়ে গঠিত বাস্তুহারা সমিতির আহ্বায়ক নায়েব আলী জানান, নদীর দুপাড়ে প্রায় ৩০০ ঘর রয়েছে। এর মাঝে অধিকাংশ মানুষের কোনো জায়গা-জমি নাই। দুই চারজনের গ্রামে বসতবাড়ি আছে। তাদের ভাগ্যে কি হবে তা তারা এখনও কিছুই জানেন না। তবে জেলা প্রশাসক আশ্বাস দিয়েছেন, তাই তারা বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিয়েছেন।
নদীর পাড়ে নতুন বাসা করেছেন সেনাবাহিনী থেকে অবসরে আসা আব্দুস ছাত্তার। তিনি বলেন, ‘আমি ১৯৬২ সালের আরওআর দেখেই এই জায়গা কিনেছি। এখন কি হবে জানি না। নদীর খাস জায়গা থাকলে ছেড়ে দিতে হবে। ২৫ লাখ টাকার মতো খরচ করে এই বাসা করেছি। সবটুক চলে গেলে একদম পথে বসতে হবে। আমাদের দিকও যেন কর্তৃপক্ষ দেখেন সেই অনুরোধ রইল।’
কুমুদিনী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জেলা প্রশাসন লৌহজং নদী পুনরুদ্ধার ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা খুবই প্রশংসনীয়। এ উদ্যোগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো জনগনকে সম্পৃক্ত করা। নদীর দুই পাড়ে যে রাস্তার নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে শহরের যানজট অনেকটাই কমে যাবে। অনেক উন্নত দেশেই এ ধরনের ব্যবস্থা আছে। এটির বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে বাংলাদেশে একটি মডেল হবে।
জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন জানান, লৌহজং নদী পুনরুদ্ধার, খনন ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। তখন লৌহজং নদী পুরোমাত্রায় তার অবয়ব ফিরে পাবে, টাঙ্গাইলবাসীও এর সুফল ভোগ করবে। তিনি আরো জানান, কোন স্থাপনা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রধান, সাংবাদিক, প্রতিটি পেশার প্রতিনিধি ও সরকারের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঢালান-শিবপুর থেকে মির্জাপুরের বংশাই নদী পর্যন্ত প্রায় ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই লৌহজং নদী। নদীর অবয়ব পুনরুদ্ধারের প্রথম ধাপে কাজ চলছে- এটা চলমান থাকবে। তবে, যেসব ভূমিহীন পরিবার পুনরুদ্ধার অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাদের পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, উচ্ছেদের পরে ওই স্থানগুলোতে পুনরায় কেউ যাতে আসতে না পারে তাও দেখা হবে।
প্রকাশ, টাঙ্গাইল শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীটি দখল আর দূষণের ফলে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দীর্ঘ ৫০ বছর পর গত বছরের ২৯ নভেম্বর সকাল থেকে সমন্বিত উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ অভিযানে অংশ নিচ্ছে পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, সিটিজেন জার্নালিস্ট গ্রুপসহ কয়েক হাজার সদস্য।
এরআগে কয়েক মাস যাবত লৌহজং নদী দখলমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরে মাইকিং, নদীর ধারে মানববন্ধনসহ ফেসবুকে জনমত গঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ‘লৌহজং নদী রক্ষা করি- পরিবেশ বান্ধব টাঙ্গাইল গড়ি’ স্লোগানে সেচ্ছাসেবকরা পুনরুদ্ধার অভিযানে স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশ নিচ্ছে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno