আজ- ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  রাত ৩:০৭

বাসাইলে দোকানঘরে হাই স্কুলের পাঠদান

 

বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাউলজানী ইউনিয়নের ডুমনিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠদান করা হচ্ছে বাজারের দোকান ঘরে। তিন বছরেও বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ না হওয়ায় চরম অস্বস্তিতে গা ঘেষাঘেষি করে দোকানঘরে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে।


জানা যায়, ২০১৯ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় বাসাইল উপজেলার কাউলজানী ইউনিয়নের ডুমনিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ভবন নির্মাণ শুরু করা হয়। দরপত্রের মাধ্যমে একতলা বিশিষ্ট ভবনটির নির্মাণ কাজ পায় স্থানীয় কাজী ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

ভবনটি ৩০০দিনের মধ্যে নির্মাণের বাধ্য বাধকতা থাকলেও গত তিন বছরেও কাজটি শেষ হয়নি। এই তিন বছরে ভবনটির শুধুমাত্র বেজ ঢালাই করা হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বর্তমানে কাজটি বন্ধ রেখেছে।


এদিকে, ভবন নির্মাণ শুরু হওয়ায় সেখানে থাকা পুরনো টিনসেড ঘরটি ভেঙে ফেলা হয়। বিদ্যালয়ের পাশে একটি ও ডুমনিবাড়ী বাজারের পাশে অপর একটি দোকানঘর ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাময়িকভাবে পাঠদান করানো হয়। ভবন নির্মাণ না হওয়ায় সেই থেকে শিক্ষার্থীদেরকে ওই দুটি দোকান ঘরে পাঠদান করা হচ্ছে।


শিক্ষার্থীরা জানায়, ছোট দুইটি টিনসেডের রুমে গা ঘেঁষাঘেষি করে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা করতে হচ্ছে। রুম দুটির একটির পাশে সিমেন্টের দোকান ও অপরটির পাশে মুদি দোকান ও বাজার। বাজারে সাধারণ মানুষের আসা-যাওয়া ও বিভিন্ন মেশিনের শব্দে পড়ালেখা করতে তাদের ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। তারা দ্রুত ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানায়।


বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির রুমি আক্তার, অষ্টম শ্রেণির আয়শা খাতুন, নবম শ্রেণির সামিয়া আক্তার সহ অনেকেই জানান, নতুন ভবন নির্মাণের জন্য তাদের আগের টিনসেড ঘরটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এরপর থেকে দোকানঘরে তাদের পাঠদান চলছে। পাশেই সিমেণ্টের দোকান রয়েছে। দোকান থেকে সিমেণ্ট বের করার সময় অনেক ধূলা-ময়লা আসে। ঘন ঘন দোকানের সার্টার খুলতে বিকট শব্দ হয়। প্রচণ্ড গরমে একটি রুমে ৪২জন ছাত্র-ছাত্রী গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হচ্ছে। শব্দ ও ধূলা-বালির কারণে পড়ালেখায় তাদের ব্যাঘাত ঘটে।


তারা আরও জানায়, রাস্তা ও বাজার ঘেঁষে তাদের যে রুমটি রয়েছে সেখানে প্রচণ্ড গরম ও শব্দে বসে থাকাই দায়। ক্লাস রুমের পরিবেশ ওখানে নেই। ওখানে শিক্ষার্থীরা মন দিয়ে পড়ালেখা করতে পারেনা।


বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলেয়া আক্তার জানান, বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য তাদের আগের টিনসেড ঘরটি ভেঙে ফেলা হয়। এরপর থেকে দোকানঘর ভাড়া নিয়ে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় অনেক সমস্যা হচ্ছে।


বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজিজুল ইসলাম জানান, তিনি শুনেছেন আগে যিনি ঠিকাদার ছিলেন তিনি কাজটি অন্য একজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। ভবনটির শুধুমাত্র বেজ ঢালাই করা হয়েছে। এরপর থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে। আগের টিনসেড ঘরটি ভেঙে ফেলায় তারা ক্লাস সংকটে পড়েছেন। বিদ্যালয়ের কমিটির সিদ্ধান্তে দুইটি রুম ভাড়া নিয়ে তারা ক্লাস নিচ্ছেন।


বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ভবনটির কাজ শুরু হওয়ার কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায়। এখনও কাজ বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে খুব সমস্যা হচ্ছে। তিনি দ্রুত ভবনটি নির্মাণের দাবি জানান।


ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার কাজী সুমন জানান, সব নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের রেটে কাজ করা কঠিন। একটি বেজ তৈরি করলেও ১৫-২০ লাখ টাকা খরচ হয়। বেজ ঢালাইয়ের পর বিল পেয়েছেন মাত্র দেড় লাখ টাকা। অফিস থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে- পর্যাপ্ত ফান্ড নাই। তাই কাজটি ইচ্ছে থাকলেও তিনি শেষ করতে পারছেন না।


টাঙ্গাইলের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী শাহরিয়ার আলম জানান, দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রাখায় তারা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পেমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

কাজটি ৩০০ দিনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন নতুনভাবে সব কিছু করতে হবে- সে লক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno