আজ- ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  রাত ১০:৫১

মধুপুরে আনারস পাতা ও কলাগাছের বাঁকল থেকে সুতা-কাপড় তৈরি হচ্ছে

 

বুলবুল মল্লিক:

dristy-d-6
‘উত্তর থিকা আইল ফল/ রসে টস্ টস, আনা আনা বিকোয়/ নাম আনারস’- ছড়াটি পুরনো হলেও এখনো মুখে মুখে ফেরে টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসী আনারস চাষীদের মাঝে। ওই আনারস ও কলাগাছের বাঁকল  থেকে মধুপুরে সুতা-কাপড় তৈরি হচ্ছে।
রসালো আনারস ফলটি উত্তরের মেঘালয় থেকে মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসীদের মাধ্যমে প্রথম চাষাবাদ শুরু হয়। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের ফল এটি। ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে আদিনিবাস। বৈজ্ঞানিক নাম এনান্যাস সেটাইভ্যাস। পর্তুগীজ এনান্যাস থেকে আনারস শব্দের উৎপত্তি। অর্থ চমৎকার ফল। রাসায়নিক বিচারে ব্রোমাইল এ্যালকোহলের জন্য আনারস স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। রসালো আনারস রেড ইন্ডিয়ানদের ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম উপকরণ। তৈরি হয় উন্নত মানের মদ। খৃস্টোফার কলম্বাস ১৪৯৩ সালের নভেম্বরে আমেরিকা আবিস্কার করেন। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে যেসব অ™ু¢ত জিনিষের সাথে তিনি পরিচিত হন তার অন্যতম আনারস। তিনি আমেরিকা থেকে আনারস চারা ইউরোপে নিয়ে আসেন। ব্রিটেনে আনারস রাজকীয় খাবারের মর্যাদা পায়। আবহাওয়া জনিত কারণে ইউরোপে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষাবাদ সম্প্র্রসারণ করা যায়নি। পর্তুগীজ নাবিকরা ১৫৪৮ সালে প্রথম ভারতের কেরালা রাজ্যে আনারস নিয়ে আসেন।

ভারতের আবহাওয়া আনারসকে চমৎকারভাবে মানিয়ে নেয়। খ্রিস্টান মিশনারীরা সপ্তদশ শতাব্দীতে কেরালা থেকে মেঘালয়ে আনারস নিয়ে যান। গারোপাহাড়ের ভাজে ভাজে শুরু হয় সফল আবাদ। গারোরা জুম চাষে আনারসকে সম্পৃক্ত করে। ১৯৪২ সালে মধুপুর গড়াঞ্চলের মধুপুর উপজেলার ইদিলপুরের আদিবাসী গারো সনাতন মৃ মেঘালয়ের গাছোয়া থেকে প্রথম আনারস চারা নিয়ে আসেন। এভাবে ইদিলপুরের পাহাড়ি টিলায় আনারস আবাদ শুরু হয়। বর্তমানে মধুপুর ছাড়াও গড় এলাকার মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া ও ঘাটাইল উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার একরে আনারস আবাদ হয়। বাগান হতে ফল সংগ্রহের পর বিপুল পরিমান আনারস পাতা ও কান্ড বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেয়া হয়। বস্তুত এটি কোনো কাজেই আসেনা। তবে এ ফলজাত বর্জ্যকে এখন আর ফেলনা মনে করা হয়না। প্রযুক্তিগত ব্যবহারের মাধ্যমে এ বর্জ্য এখন সম্পদে পরিণত হয়েছে। এর প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে নতুন পণ্যের উদ্ভাবন ও বিকাশ ঘটিয়ে দারিদ্র বিমোচন করা হচ্ছে। dristy-d-7
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ‘বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ’ সম্প্রতি ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন’ ও ‘শিল্প মন্ত্রণালয়’ এর আর্থিক সহায়তায় ‘বাংলাদেশ ইন্সস্পায়ার্ড’ নামক প্রকল্প তৃণমূল পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে। মধুপুর উপজেলার পাহাড়ি এলাকাকে এর ফোকাস পয়েন্ট হিসাবে বাছাই করা হয়েছে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ হলো, আনারসের পাতা থেকে সংগৃহিত আঁশ প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাহারি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে নারীদের আর্থ-সামাজিক মতায়ন। মধুপুর উপজেলার জলছত্র প্রকল্প কার্যালয়ের উৎপাদন কেন্দ্রের আওতায় ব্যুরো বাংলাদেশকে পার্টনার মর্যাদা দিয়ে পাঁচ শতাধিক বিত্তহীন নারীকে প্রশিণ দিয়ে কর্মম করা হয়েছে। এসব নারীরা বাহারি হাত ব্যাগ, ভ্যানিটি ব্যাগ, গহনার বাক্স, ওয়াল ম্যাট, টিস্যু বক্স, কলমদানী, হ্যাটসহ বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় অলঙ্কার তৈরি করছেন। আনারস বর্জ্যরে প্রাকৃতিক আঁশ ও সূতা থেকে পরিবেশ সম্মত পোষাক ও হস্তশিল্প উৎপাদনের মাধ্যমে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় এ ধরনের প্রাকৃতিক আঁশ থেকে হস্তজাত শিল্প পণ্য উৎপাদনের নজির রয়েছে।
প্রকল্প সংশিষ্ট সূত্র জানায়, আনারসের পাশাপাশি কলা গাছের বাকলও প্রকল্পের কাঁচাপণ্য হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কারণ মধুপুর গড়ে আনারসের পাশাপাশি প্রায় ১৫ হাজার একরে কলার বাণিজ্যিক আবাদ হয়। আনারস ও কলার বর্জ্য থেকে সুতা ও কাপড় তৈরির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি সম্ভব। আঁশ উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে করা গেলে বিদেশ থেকে সুতা আমদানী হ্রাস পাবে। গামের্ন্টস খাতে নতুন পোষাক তৈরিতে অনুসঙ্গ হিসাবে কাজ করবে। এমনকি এসব বর্জ্য থেকে জৈবিক সার তৈরি করে রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস করা যাবে।
প্রকল্পের মধুপুর ইউনিট ম্যানেজার এসএম আজাদ রহমান জানান, এটি শীঘ্রই সফল প্রকল্প হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। মধুপুর ছাড়াও নরসিংদী ও গাইবান্ধায় প্রায় দুই হাজার নারীকে প্রশিণের মাধ্যমে উৎপাদণ ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু হস্তশিল্প সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত ও বিপনণ সহজতর হলে পিছিয়ে পড়া নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মতায়ন নিশ্চিত করা যাবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno