আজ- ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  বিকাল ৩:৪৫

যমুনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের হিড়িক!

 

বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর ও গোপালপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের হিড়িক চলছে।

বালু ব্যবসায়ীরা স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় গত তিন মাস ধরে দিনরাত শ’ শ’ ট্রাক বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। অবৈধ বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

জানাগেছে, ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের পশ্চিম পাশে ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের জগৎপুরা এলাকার গুলিপোঁচায় ভূঞাপুরের ছাত্রলীগ নেতা হৃদয় মন্ডল ও স্থানীয় সোহেল খান ২টি, লেংড়া বাজারে আ’লীগ নেতা তপন খান একটি, আনন্দ বাজারে

আ’লীগ নেতা মো. ইকো খান ও ছাত্রলীগ নেতা আমান উল্লাহ ২টি এবং গোপালপুর উপজেলার নলিন বাজারের পাশে স্থানীয় যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম ও অর্জুনা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রাসেল খানের নেতৃত্বে ২টি সহ মোট ৭টি স্পটে যমুনা নদীতে ভেকু দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

প্রতিদিন শ’ শ’ ড্রাম ট্রাক দিয়ে উত্তোলিত বালু টাঙ্গাইল ও গাজিপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে স্থানীয়রা জানায়, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড যমুনা নদীতে তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেছে। বাঁধের উপর মাটি ফেলে রাস্তা তৈরি করে ব্যবসায়ীরা যমুনার বাম তীরের পাশ থেকে দিনরাত বালু উত্তোলন করছে।

এতে তীররক্ষা বাঁধের স্থায়িত্ব বিনষ্ট হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে আবারও ভাঙনের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে। বালু ব্যবসায়ীরা স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী ও সরকার দলীয় হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়না।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বালুর স্পটগুলো ভূঞাপুর ও গোপালপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছেনা।

এছাড়া কোন কোন সময় ভূঞাপুর উপজেলা প্রশাসনের লোকজন পুলিশ ফোর্স সাথে নিয়ে বালুর স্পটে আসেন। প্রশাসনের লোকজন আসার খবর পেয়ে বালু ব্যবসার সাথে জড়িতরা পালিয়ে যান। প্রশাসনের টিম চলে যাওয়ার পর আবার বালু উত্তোলন শুরু করে থাকেন।

স্থানীয়রা আরও জানান, বালু ব্যবসার ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে আনন্দ বাজারে মো. ইকো খানের স্পট ও গুলিপোঁচায় সোহেল খানের স্পট সম্প্রতি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে ইতোপূর্বে বালু ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

বালু ব্যবসার সাথে জড়িত কয়েক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বালু ব্যবসা মূলত: একজনের নামে থাকলেও প্রত্যেক স্পটের ১০-২০জন করে পার্টনার রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে বালু ব্যবসার লভ্যাংশের ৩০ শতাংশ হারে টাকা দিয়ে তারা ব্যবসা করারও অভিযোগ করেন তারা। তারপরও এলাকাবাসীর মনোতুষ্টির জন্য মাঝে মাঝে প্রশাসনের লোকজন এলে তারা সাময়িকভাবে আত্মগোপন করেন।

হেমনগর ইউনিয়ন আ’লীগের সদস্য হবিবুর রহমান হবু জানান, গুলিপোঁচা পয়েন্টে যমুনা থেকে বালু উত্তোলন পূর্বক ট্রাক আনা-নেওয়া করার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার শর্তে তার জমির উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়।

ওই রাস্তা দিয়ে গত দুই মাসে চার হাজার ২০০ গাড়ি বালু বিক্রি করে তাকে কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। তিনি আরও জানান, বালু ব্যবসায়ীরা প্রশাসনকে লভ্যাংশের ৩০% দিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে।

এ বিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. ইসরাত জাহান জানান, খবর পেয়ে তিনি মাঝে মাঝেই ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে থাকেন। কিন্তু গিয়ে কাউকে পাওয়া না যাওয়ায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়না।

স্থানীয় প্রশাসনকে টাকা দেওয়ার কথা সত্য নয়, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। কে টাকা নেয় তা সুনির্দিষ্টভাবে জানানো হলে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno