আজ- ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার  রাত ৯:৩৮

যুক্তরাষ্ট্রে কাল ভোট :: সব জরিপে হিলারি এগিয়ে

 

দৃষ্টি ডেস্ক:

dristy-pic-fol-50
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগামীকাল মঙ্গলবার। মিলছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস। টান টান উত্তেজনা নিয়ে প্রহর গুনছে মার্কিনরা—কে হচ্ছেন দেশের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট? ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন, নাকি রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প? এই উত্তরের অপেক্ষা শুধু মার্কিনদেরই নয়, সারা বিশ্বের মানুষের। এই নির্বাচনে জয় পেতে দুই শিবিরই এখন মরিয়া। সব জরিপেই কিছুটা এগিয়ে আছেন হিলারি। তবে সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো জয়ের সম্ভাবনা দেখাচ্ছে ট্রাম্পকে।
গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ‘ব্যাটেল গ্রাউন্ড’খ্যাত এ রকম গুটিকয়েক অঙ্গরাজ্যই চষে বেড়িয়েছে দুই পক্ষ। নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল নির্ধারণে এসব অঙ্গরাজ্যের দোদুল্যমান ভোটই বড় ভূমিকা রাখবে। প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য লাগবে কমপক্ষে ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। দুই সপ্তাহ আগেও সব জরিপ বলছিল, ডেমোক্র্যাটদের দুর্গের বাইরে এসব অঙ্গরাজ্যের ভোটও হিলারির দিকেই আসবে। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর এফবিআই হিলারির পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময়ের ই-মেইল বিতর্ক নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করেছে। জনসমর্থন বাড়তে শুরু করে ট্রাম্পের। সর্বশেষ জনমত জরিপগুলো বলছে, জাতীয় গড় হিসেবে হিলারি এগিয়ে থাকলেও দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর কোনো কোনোটিতে ট্রাম্প এগিয়ে অথবা কোনো কোনোটিতে হিলারির সঙ্গে ব্যবধান খুবই সামান্য।dristy-pic-fol-51
কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটির সর্বশেষ জরিপ মতে, দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর মধ্যে ২৯ ইলেকটোরাল ভোটের ফ্লোরিডায় হিলারির সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যবধান মাত্র ১ পয়েন্টের; হিলারি ৪৬ শতাংশ, ট্রাম্প ৪৫ শতাংশ। রয়টার্স/ইপসোসের জরিপ মতে, ১৮ ইলেকটোরাল ভোটের ওহাইওতে হিলারির চেয়ে ৫ পয়েন্ট এগিয়ে ট্রাম্প; হিলারি ৪১ শতাংশ, ট্রাম্প ৪৬ শতাংশ। ১৫ ইলেকটোরাল ভোটের নর্থ ক্যারোলাইনায় হিলারি মাত্র ২ পয়েন্টে এগিয়ে; হিলারি ৪৮ শতাংশ, ট্রাম্প ৪৬ শতাংশ। অ্যারিজোনাতে (১১ ইলেকটোরাল ভোট) হিলারির চেয়ে ৫ পয়েন্ট এগিয়ে ট্রাম্প। হিলারি ৪০ শতাংশ, ট্রাম্প ৪৫ শতাংশ। নিউ হ্যাম্পশায়ার (৪ ইলেকটোরাল ভোট) ও আইওয়াতে (৬ ইলেকটোরাল ভোট) হিলারি ও ট্রাম্প সমান সমান অবস্থানে, দুজনের পক্ষেই ৪৪ শতাংশ। ডেমোক্র্যাটদের আধিপত্যে থাকা পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও মিনেসোটায় জয় পেতে রিপাবলিকানরা জোর প্রচারণা চালাচ্ছে। ৩৬ ইলেকটোরাল ভোট থাকা এই তিন রাজ্যে ১৯৭২ সালের পর জয় পায়নি রিপাবলিকানরা। তবে পেনসিলভানিয়া ও মিশিগানে এবার প্রধান দুই প্রার্থীর মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের গতকালের জরিপ অনুযায়ী, হিলারি ২৭৫টি ও ট্রাম্প ২৬৩টি ইলেকটোরাল ভোট জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এক দিন আগে সিএনএন ইলেকটোরাল ভোটের যে ম্যাপ প্রকাশ করেছে, তাতে এই মুহৃর্তে হিলারির পক্ষে ২৬৪টি ও ট্রাম্পের পক্ষে ২০৪টি ভোট থাকার সম্ভাবনা দেখানো হয়েছে। দেশটিতে তিন কোটি ৭০ লাখ মানুষ ইতিমধ্যে আগাম ভোট দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী পলিটিকো ও মর্নিং কনসাল্টের জাতীয় জনমত জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি ৩ পয়েন্ট এগিয়ে আছেন। এ জরিপ মতে, হিলারি ৪৫ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪২ শতাংশ সম্ভাব্য ভোটারের সমর্থন পেয়েছেন। শুক্র ও শনিবার এ জরিপে আরো বলা হয়েছে, নারী ভোটারদের মধ্যে হিলারির পক্ষে ৪৭ শতাংশ, ট্রাম্পের পক্ষে ৪১ শতাংশ; কিন্তু পুরুষ ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের পক্ষে ৪৪ শতাংশ, হিলারির পক্ষে ৪৩ শতাংশ। এবিসি নিউজ ও ওয়াশিংটন পোস্টের গতকাল প্রকাশিত জরিপে হিলারি ৫ পয়েন্টে এগিয়ে। এ জরিপ মতে, হিলারি ৪৮ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪৩ শতাংশ সমর্থন পাচ্ছেন। এনবিসি/ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের জরিপে হিলারি ৪৪ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪০ শতাংশ; ফক্স নিউজের জরিপে হিলারি ৪৫ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪৩ শতাংশ সমর্থন পাচ্ছেন। ম্যাকক্ল্যাচি-ম্যারিস্টের সর্বশেষ মতামত জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, জাতীয়ভাবে ট্রাম্পের চেয়ে এক পয়েন্টে এগিয়ে আছেন হিলারি। একই দিন রয়টার্স/ইপসোসের জরিপে দেখা গেছে, জাতীয়ভাবে হিলারি ৪ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। বিবিসির জরিপে হিলারি ৪৬ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪৬ শতাংশ সম্ভাব্য ভোটারের সমর্থন পেয়েছেন।
নির্বাচনের শুরু থেকেই একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সমালোচিত ট্রাম্প এত দিন প্রচারণার মাঠে ছিলেন অনেকটাই নিঃসঙ্গ। স্ত্রী-কন্যা ছাড়া দলের উল্লেখযোগ্য নেতাদের কাউকেই দেখা যায়নি তাঁর সভা-সমাবেশে। কিন্তু শেষবেলায় তাঁর জয়ের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় দুই দিন ধরে তাঁর দল রিপাবলিকানের অনেক নেতাই মাঠে নামছেন। বিশেষ করে তাঁর পক্ষে দলের নেতা মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার পল রায়ান ভোট চাইতে নেমেছেন। পল রায়ান মাঠে নামায় ট্রাম্প শিবির আরো চাঙ্গা হয়েছে।
অন্যদিকে হিলারির পক্ষে শুরু থেকেই তাঁর দল ডেমোক্রেটিকের অনেক নেতাই মাঠে রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, স্বামী সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা তো ছিলেনই; বৃহস্পতিবার তাঁর পক্ষে মাঠে নেমেছেন দলের ক্লিন ইমেজের নেতা বহু তরুণের পছন্দের বার্নি স্যান্ডার্সও, যিনি এই নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এ ছাড়া একঝাঁক তারকাকে পাশে পেয়েছেন হিলারি। এর মধ্যে রয়েছেন জেনিফার লোপেজ, বিয়ন্সে, কেটি বেরি প্রমুখ।
হঠাৎ মঞ্চ থেকে সরানো হলো ট্রাম্পকে: শনিবার নেভাডার রেনো শহরে নির্বাচনী প্রচারসভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন ট্রাম্প। হঠাৎ ভিড়ের মধ্য থেকে ‘বন্দুক, বন্দুক’ বলে চিৎকার করে উঠলেন কেউ একজন। তাড়াহুড়া করে ট্রাম্পকে অনেকটা জাপটে ধরে মঞ্চের পেছন দিকে নিয়ে গেলেন সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সমর্থকদের মধ্যে থাকা এক শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তির ওপর যেন ঝাঁপিয়ে পড়ল বহু পুলিশ। ওই ব্যক্তির মাথা নিচু করে মেঝের দিকে ধরে রেখে চলে শরীর তল্লাশি। অল্প সময়ের মধ্যেই তাকে পেছনে হাতমোড়া করে বেঁধে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে ওই ব্যক্তিকে ছেড়েও দেওয়া হয়। জানা গেছে, ভয়টা ছিল মিথ্যে; ওই ব্যক্তির কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না।
একটু পরেই আবার মঞ্চে ফিরলেন ট্রাম্প। বক্তব্য দিতে শুরু করলেন। বললেন, ‘নির্বাচনে লড়াই চালিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য সহজ নয়। কিন্তু আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। কেউ আমাদের থামাতে পারবে না।’
এক বিবৃতিতে ট্রাম্প রেনোর সিক্রেট সার্ভিস ও নেভাডার আইন প্রয়োগকারীদের ‘দ্রুত ও পেশাদারি পদক্ষেপের’ জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ওই ব্যক্তিকে ‘হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা শিবিরের’ কেউ একজন বলে বর্ণনা করেছেন ট্রাম্প।
প্রচার-প্রচারণা: শনিবার নেভাডা ছাড়াও ফ্লোরিডা ও নর্থ ক্যারোলাইনায় নির্বাচনী প্রচারণা চালান ট্রাম্প। ফ্লোরিডার টাম্পায় এক সমাবেশে যোগ দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘যেগুলোকে ডেমোক্র্যাটরা নিজেদের ঘাঁটি বলে ডাকতে অভ্যস্ত, সেগুলোয় আমরা যাচ্ছি। এসব এলাকায় এখন আমরা হয় সমান সমান, নয়তো এগিয়ে আছি। আমরা মিনেসোটায় যাচ্ছি, ঐতিহ্যগতভাবে এটি একেবারেই রিপাবলিকান এলাকা নয়।’ এই সমাবেশেও হিলারিকে ‘দুর্নীতিবাজ’ বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
একই দিন ফ্লোরিডায় ও পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন হিলারি। এর অংশ হিসেবে ফিলাডেলফিয়ায় তিনি পপ গানের তারকা কেটি পেরির কনসার্টে যোগ দেন। কেটি পেরি এ সময় হিলারির প্রতি তাঁর সমর্থন প্রকাশ করেন।
এ সময় হিলারি বলেন, ‘যখন আপনার সন্তান ও নাতি-নাতনিরা জিজ্ঞেস করবে, ২০১৬ সালে আপনি কী করেছিলেন? আমি চাই আপনারা যেন বলতে পারেন আমি আরো ভালো ও শক্তিশালী আমেরিকার জন্য ভোট দিয়েছিলাম।’

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno