আজ- ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  বিকাল ৫:২৪

রক্তঝরা অশ্রুভেজা ১৫ আগস্ট আজ

 

দৃষ্টি নিউজ:

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন ‘আমার সবচেয়ে বড় গুণ, আমি আমার দেশের মানুষকে ভালোবাসি। আর আমার দোষ, তাদের আমি বেশি ভালোবাসি।’ দেশ আর মানুষের প্রতি যার ছিল এই অগাধ ভালোবাসা; যার হাতে জ্বলেছে বাঙালি জাতির দুয়ারে উদ্দীপনার আলো; তাকেই নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে নিষ্ঠুর ঘাতকরা। অমানিশার অন্ধকারে ঢেকে দেয় গোটা বাংলাদেশ। ভোরের আলো ফোটার আগেই ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে রচিত হয় ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়। আজ সেই রক্তঝরা অশ্রুভেজা ১৫ আগস্ট। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিনে রাষ্ট্র হারায় তার স্রষ্টাকে। জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে। আর আমরা হারিয়েছি আমাদের জনককে।
পঁচাত্তরের এই দিনে শুধু তিনিই নন, স্ত্রী বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন পুত্র- শেখ কামাল, শেখ জামাল ও ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল ও সহোদরসহ আত্মীয়-পরিজন নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন। একাত্তরের পঁচিশে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যা ঘটনার সঙ্গে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতের এই বর্বর হত্যাকান্ডই তুলনীয় হতে পারে। যেখানে নারী-শিশুসহ নির্বিচারে গণহত্যা চালানো হয়। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায় আস্থাহীন দেশীয় কিছু রাজনীতিকের পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বঙ্গবন্ধু নৃশংসভাবে শহীদ হন সেই কালরাতে। তবে প্রবাসে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
১৫ আগস্টের নির্মম সেই হত্যাযজ্ঞে আরও নিহত হন বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, ভগি্নপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, শিশু পৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও কর্মচারী। জাতি আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে এসব শহীদকে।
সেদিন যা ঘটেছিল:
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অতিপ্রত্যুষে ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারের বাসভবনে কাপুরুষোচিত আক্রমণ চালায় ঘাতক দল। সে নারকীয় হামলার পর দেখা গেছে, ভবনটির প্রতিটি তলার দেয়াল, জানালার কাচ, মেঝে ও ছাদে রক্ত, মগজ ও হাড়ের গুঁড়ো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। গুলির আঘাতে দেয়ালগুলোও ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। চারপাশে রক্তের সাগরের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল ঘরের জিনিসপত্র। প্রথম তলার সিঁড়ির মাঝখানে নিথর পড়ে আছেন চেক লুঙ্গি ও সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লাশ। তার তলপেট ও বুক ছিল বুলেটে ঝাঁঝরা। পাশেই পড়ে ছিল তার ভাঙা চশমা ও অতিপ্রিয় তামাকের পাইপটি। অভ্যর্থনা কক্ষে শেখ কামাল, মূল বেডরুমের সামনে বেগম মুজিব, বেডরুমে সুলতানা কামাল, শেখ জামাল, রোজী জামাল, নিচতলার সিঁড়িসংলগ্ন বাথরুমে শেখ নাসের এবং মূল বেডরুমে দুই ভাবির ঠিক মাঝখানে বুলেটে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলের লাশ। লুঙ্গিতে জড়ানো শিশু রাসেলের রক্তভেজা লাশ দেখে খুনিদের প্রতি চরম ঘৃণা-ধিক্কার জানানোর ভাষা খুঁজে পান না মানবতাবাদী বিশ্বের কোনো মানুষ। এভাবেই নারকীয় পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
ইতিহাস বলছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পরপরই স্বাধীনতাবিরোধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালায়। অপপ্রয়াস চালানো হয় বাঙালির বীরত্বগাথা ইতিহাস মুছে ফেলারও। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পরিণত করতে বারবার কাটাছেঁড়া করা হয় সংবিধানকে। যাতে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি-ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ সংবিধানে উপেক্ষিত হয়।
শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার অপসারণ, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতিও চালু হয়। গণতন্ত্রকে পাঠানো হয় নির্বাসনে। চালু হয় সামরিক একনায়কতন্ত্র। সেই সাথে জাতির জনকের আত্মস্বীকৃত খুনি মোশতাক, ফারুক, রশিদচক্রকে হত্যাকান্ডের দায়ভার থেকে মুক্তি দিয়ে কুখ্যাত ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করা হয়। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইন করে খুনিদের আইনের হাত থেকে রক্ষা করা হয়। রুদ্ধ করে দেয়া হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ।
কিন্তু এতসব প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশে-বিদেশে বঙ্গববন্ধু হত্যার বিচারের জোর দাবি ওঠে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দেশের গণতন্ত্রকামী শান্তিপ্রিয় বিবেকবান মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে থাকে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কুখ্যাত ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচারের পথ উন্মুক্ত করে। বিচারে নিম্ন আদালত ঘাতকদের ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। পরবর্তীতে নিম্ন আদালতের এ রায় হাইকোর্টও বহাল রাখেন। কিন্তু ২০০১ সালের পর সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ না দেয়াসহ নানা কারণে বিচারের পথে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। ফলে রায় কার্যকরে বিলম্ব হতে থাকে। কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর উচ্চ আদালতের পর্যায়ের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০১০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ খুনিকে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে রায় কার্যকর করা হয়। এই রায় কার্যকর করার মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়। তবে এখনো দ-প্রাপ্ত ৫ খুনি বিদেশে পালিয়ে আছে। যাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর হত্যায় যারা ষড়যন্ত্র করেছে, সহযোগিতা করেছে তাদের সকলকে বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে আজ সারাদেশে সাধারণ ছুটি থাকবে।
সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে অর্ধনমিত রাখা হবে জাতীয় পতাকা।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno