আজ- ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  রাত ৪:১৩

শঙ্কা উড়িয়ে শান্তির ভোট :: ইতিহাস গড়লেন আইভী

 

দৃষ্টি নিউজ:

dristy-pic-89সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে শান্তির ভোট হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে। প্রচারের শুরু থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার(২২ ডিসেম্বর) ভোট গ্রহণ পর্যন্ত ছিল আস্থা ও স্বস্তির পরিবেশ। এখানকার ভোটার, স্থানীয় রাজনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন চাইলে যে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন সম্ভব, সেটা এখানে প্রমাণিত হয়েছে, যা নিকট অতীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রকটভাবে অনুপস্থিত ছিল। এ জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাও কৃতিত্বের দাবিদার বলে তাঁরা মনে করেন। এ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে এক অনন্য ইতিহাস গড়লেন আইভী।
ডা. সেলিনা হায়াত্ আইভী। এটা বাংলাদেশে এখন নতুন এক ইতিহাসের নাম। দেশে কোনো সিটি করপোরেশনের প্রথম নারী মেয়র হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর। পাঁচ বছর পর এসে টানা দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত। দেশে প্রথমবারের মত দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে হওয়া সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার অর্জনও তার ভা্লারে। ইতিহাস এখানেই শেষ নয়। বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান (পরবর্তীতে মেয়র) এবং এরপর সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে সব মিলিয়ে টানা প্রায় ১৩ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এখন এরসঙ্গে যুক্ত হল বিরতিহীন আরও পাঁচ বছর। ফলে আগামী পাঁচ বছরের মাথায় নারায়ণগঞ্জ সিটির ‘অভিভাবক’ হিসেবে আইভীর মেয়াদ হবে একটানা ১৮ বছর। আইভীর বাবা মরহুম আলী আহমদ চুনকাও ছিলেন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান।
সব ধরনের অজানা শঙ্কা, আশঙ্কা কাটিয়ে অবশেষে অত্যন্ত সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবেই গতকাল বৃহস্পতিবার(২২ ডিসেম্বর) সম্পন্ন হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন। সকল জল্পনা-কল্পনা আর জাতীয় রাজনীতির হিসাব-নিকাষকে ছুড়ে ফেলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন ‘নারায়ণগঞ্জের মমতা’ খ্যাত সেলিনা হায়াত্ আইভী। ব্যালট বিপ্লব ঘটিয়ে বিজয়ের মুকুট আবারও তার মাথায়, ধারাবাহিকতা বজায় থাকলো আইভীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রার। নাসিকের মোট ১৭৪টি কেন্দ্রের ভোটে বেসরকারি ফলাফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত আইভীর সেলিনা হায়াৎ আইভী পেয়েছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১১ ভোট। আর সাখাওয়াত হোসেন খান পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৪৪ ভোট। সব ধরনের হিসাব-নিকাশ, রাজনৈতিক সমীকরণ ও অঙ্কের সমাধান স্বরূপ ‘আইভীই আবার জয়ী’-এই ফলাফলের মধ্য দিয়ে থামলো শীতলক্ষা পাড়ের ভোটযুদ্ধের দামামা, থেমেছে কোলাহল।
সকাল আটটায় শুরু হয়ে বিকাল চারটায় ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যার পরপরই আসতে থাকে বিভিন্ন কেন্দ্রের ফল। যখন যে কেন্দ্রের ফল আসছিল, সঙ্গেসঙ্গে নাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে মাইকে তা ঘোষণা করা হচ্ছিল। ফল দেখানো হচ্ছিল বিশাল আকারের পর্দায়। প্রাপ্ত বেসরকারি ফলাফলে শুরু থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্রে এগিয়ে ছিলেন আইভী। এর ধারাবাহিকতা দেখে আইভী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা উল্লাস আর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকেন। রাত সাড়ে আটটার মধ্যে যখন বিজয় নিশ্চিত হয়ে যায়, তখন শুরু হয় খ্ল খ্ল বিজয় মিছিল। ততক্ষণে আইভীর পশ্চিম দেওভোগের বাড়ির সামনে কর্মী-সমর্থকদের প্রচন্ড ভিড় জমে যায়। তার বাড়ির সামনের সড়ক ‘চুনকা সড়ক’-এ প্রায় আধা কিলোমিটার জুড়ে এই ভিড় লাগে, এসময় তাদেরকে বিজয় স্লোগান দিতেও দেখা যায়। নারায়ণগঞ্জ শহরের কয়েকটি স্থানে আতশবাজি ফাটিয়েও উল্লাস প্রকাশ করেন কর্মী-সমর্থকরা।
বিজয় নিশ্চিত এবং নির্বাচন কমিশন তা ঘোষণা দেয়ার পর রাত সাড়ে নয়টার দিকে আইভী নেতা-কর্মীদের নিয়ে দুই নম্বর রেলগেইটে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্প অর্পন করেন।dristy-pic-85
নাসিকের দ্বিতীয় এই নির্বাচনে মোট ২০১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মেয়র পদে লড়াই করেন সাতজন। যদিও ২০ দল শরিক এলডিপি’র কামাল প্রধান ও কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে শেষ মুহূর্তে সরে যান। অন্য তিন মেয়র প্রার্থী ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহবুবুর রহমান ইসমাইল (কোদাল), ইসলামী আন্দোলনের মাসুম বিল্লাহ (হাতপাখা) ও ইসলামী ঐক্যজোটের ইজহারুল হক (মিনার)। ২৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৫৬ এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ৯টি পদে ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বািত করেন। এই নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। এরমধ্যে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬২ জন পুরুষ; ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৯ জন নারী।
রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, বিকাল ৪টায় নির্ধারিত সময়েই ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এর পরপরই শুরু হয়েছে ভোট গণনা। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়নি। নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় সাধারণ ছুটি ছিল। সেলিনা হায়াত্ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পশ্চিম দেওভোগস্থ শিশুবাগ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন। আর বিএনপির সাখাওয়াত পৌনে নয়টার দিকে ভোট দেন মাসদাইর আদর্শ স্কুলে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বিদায় নিতে যাওয়া বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্যও নারায়ণগঞ্জের এই নির্বাচন ছিল এসিড টেস্ট।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম ভোট হয় ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর। নির্দলীয় ওই নির্বাচনে সেলিনা হায়াত্ আইভী ১ লাখ ৮০ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ও বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমান পেয়েছিলেন ৭৮ হাজার ভোট। ওই নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার ভোটের সাত ঘণ্টা আগে দলীয় সিদ্ধান্তে সরে দাঁড়ান।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno