আজ- ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার  রাত ১১:২৮

ষোড়শ সংশোধনী :: রায় কে লিখে দিয়েছে জানি, কিন্তু বলব না…..লতিফ সিদ্দিকী

 

দৃষ্টি নিউজ:


মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামীলীগের বহিস্কৃত নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, রাষ্ট্রের প্রধান তিন অঙ্গ আইন বিভাগ বা সংসদ, নির্বাহী বিভাগ বা প্রশাসন এবং বিচার বিভাগে মধ্য ও নিম্নমানের ব্যক্তি দ্বারা পূর্ণ। তিনি বলেন, এটাই আমাদের রাষ্ট্রের প্রধান দুর্বলতা। শনিবার(১৯ আগস্ট) বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ডাকা ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ের পর উদভূত পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীলতা থেকে এই সংবাদ সম্মেলন করার কথা জানান তিনি।
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমাদের রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগই মধ্য ও নিম্নমানের ব্যক্তি দ্বারা পূর্ণ। মেধাবী ও উন্নত নৈতিক চরিত্রবান মানুষরা রাষ্ট্রের এই তিনটি নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশে বাধাগ্রস্ত হয়। আর এ কারণেই রাষ্ট্রব্যবস্থায় অস্থিরতা-সংকট বিদ্যমান।
হজ ও তাবলিগ নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের পর ২০১৪ সালে লতিফ সিদ্দিকীকে সাময়িক বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। পরে চূড়ান্ত বহিষ্কৃত হন তিনি। এর মধ্যে মন্ত্রিত্ব হারানোর পর সংসদ সদস্য পদ থেকে ইস্তফাও দেন তিনি।
বিচারক অপসারণক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে এনে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় কে লিখে দিয়েছে সেটি জানেন বলে দাবি করেন লতিফ সিদ্দিকী। তবে তিনি পরিচয় প্রকাশ করতে চান না। তিনি বলেন, রায় কে লিখে দিয়েছে জানি, কিন্তু বলব না। সব কথা বলা যায় না।
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ষোড়শ সংশোধনী কোনো বিষয় নয়, আমার ধারণা বিষয়টি অন্য কোথাও আড়াল করে রাখা হয়েছে। আমরা দূর থেকে হাত-পা ছুড়ছি, আসল বিষয়টা দেখতে পাচ্ছি না। হত্যা-খুন, নৈরাজ্য করে এবং অসাংবিধানিক পন্থায় শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না। তাই সাংবিধানিক পন্থায় শেখ হাসিনাকে কাত করা। বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে উচ্চ আদালতের কর্মকান্ড ষড়যন্ত্র কি না তা ইতিহাসের গবেষণার বিষয় হলেও এই রায় ষড়যন্ত্রকারীদের একটি বড় অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপারটা আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সঠিক কৌশল নিলেও, অন্যরা ষড়যন্ত্রকে উস্কে দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।
সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের আদেশে যেসব শব্দ চয়ন, বাক্য গঠন, আইনি নজির প্রদানের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার এবং পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্টের সুরের প্রতিধ্বনি। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের প্রতিটি রায়ের মদদদাতা ও শক্তির উৎস জনগণ, সংবিধান কিংবা আইন নয়- এর মদদদাতা সেনানিবাস।
‘তাহলে এই রায়ের মদদদাতা কে?’
-‘আমি জানি, বলব না। কে লিখেছেন তাও আমি জানি, কিন্তু বলব না।’
-তাহলে কি প্রধান বিচারপতি এ রায় লেখেননি?
-‘তাও আমি বলব না।’
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, উচ্চ আদালত সংসদ সম্পর্কে অপমানকর মন্তব্য করেছেন। তাদের আক্রমণের লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার সংসদ সদস্য পদ নিয়ে নির্বাচন কমিশন যখন তার এখতিয়ার বহির্ভূত নোটিশ দেয় তখন উচ্চ আদালত কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান বহির্ভূত কাজে বিরত রাখতে কোনো পদক্ষেপ পর্যন্ত গ্রহণ করেননি। আমার আবেদন না নিয়ে সরাসরি খারিজ করে দেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের সংগঠক আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, সংসদ সদস্যদের অপরিপক্ব বলে গণমানুষের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়েছে। সংবিধান রাষ্ট্রের বেতনভোগী কাউকে এমন অবজ্ঞা প্রদর্শনের অধিকার দেয়নি। সংসদ জনগণের দ্বারা নির্বাচিত। সর্বোচ্চ আদালাত ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত, সংবিধান স্থগিত, সামরিক আইনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর বিচক্ষণতা পালন করেনি। এ দ্বারা উচ্চ আদালত তার অভিভাকত্বের অধিকার ও মর্যাদা নিজেদের সুবিধাবাদী আচরণ ও ভীরুতা দ্বারা খুইয়েছেন।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি তার পর্যবেক্ষণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের যৌক্তিকতা হিসেবে বলেছেন, কাউন্সিল না হলে অধস্তনরা তার কর্তৃত্ব মানবে না। ফলে অনিয়ম-শৃঙ্খলায় ব্যাঘাত ঘটবে। প্রধান বিচারপতি ছোট্ট পরিধি নিয়ে যদি শঙ্কায় থাকেন তখন তিনিই কেন বিবেচনা করেন না সমগ্র রাষ্ট্র যাকে চালাতে হয় সেই রাষ্ট্র নেতারও কর্তৃত্ব থাকা প্রয়োজন। দ্বিচারিতা কেন- বোধগম্য নয়।
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত নেতৃত্বের চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এখানে কোনো দাবিদার নেই। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অপ্রাসঙ্গিক ও অযাচিতভাবে বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্ব নিয়ে অসঙ্গত ইঙ্গিত দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ১২ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লতিফ সিদ্দিকী। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই তিনি সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন। এ সময় লতিফ সিদ্দিকীর স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকীও উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno