আজ- ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  সকাল ৬:৩০

স্কুল-কলেজ খুলছে ১২ সেপ্টেম্বর

 

দৃষ্টি নিউজ:

অবশেষে খুলতে যাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ায় দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হচ্ছে।

তবে সব শ্রেণির ক্লাস একসঙ্গে শুরু হবে না। ধাপে ধাপে ক্লাসগুলো শুরু হবে। আগের ঘোষণা অনুযায়ীই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা যথাক্রমে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। এ কারণে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ক্লাসে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার পাবে।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়। এরপর ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়। এখন পর্যন্ত গত ১৭ মাসে দফায় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি বাড়ানো হয়। করোনা সংক্রমণ অব্যাহত থাকায় সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান সাধারণ ছুটি আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বন্ধ কপাট শিগগিরই খুলতে যাচ্ছে, এমন আভাস পাওয়া গিয়েছিল গত বৃহস্পতিবার(২ সেপ্টম্বর) সংসদে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য থেকেই। এরপর ওই রাতেই বৈঠক করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পক্ষে মত দেয় করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা জানান, করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ পজিটিভ হার থেকে ৭ শতাংশ কমে যাওয়া এবং ধীরে ধীরে করোনার টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং জনস্বাস্থ্যবিষয়ক বেশ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া সাপেক্ষে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যায়।

একই দিন রাতে হয়তো ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে- একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে এমন ইঙ্গিত দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

অবশেষে বন্ধ ঘরের দুয়ার খোলার চূড়ান্ত ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী। শুক্রবার(৩ সেপ্টেম্বর) চাঁদপুর সদরের মহামায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন শেষে তিনি জানান, প্রথমে হয়তো এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং আগামী বছরের পরীক্ষার্থী প্রতিদিনই ক্লাস করবে।

বাকি শ্রেণির ক্লাস হয়তো গোড়াতে এক দিন করে হবে। পরে অবস্থা বুঝে ধীরে ধীরে তা বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে অনলাইন ও টেলিভিশনের ক্লাসও চলবে।

দীপু মনি বলেন, সংক্রমণের হার ক্রমেই নিচে নেমে আসছে- এটা আমাদের জন্য সুখবর। এই নিম্নগতি থাকলে শিগগিরই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারব।

এ সময় ধাপে ধাপে খোলার কথা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পৃথিবীর যে কোনো দেশের তুলনায় বেশি। এ অসুখে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সবাই শুরু থেকেই সপ্তাহে ছয় দিন হয়তো ক্লাস করার সুযোগ পাবে না। একটু সময় নিয়ে সেটা হবে। তবে এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং আগামী বছরের পরীক্ষার্থীরা প্রতিদিনই ক্লাস করবে বলেও জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বৈশ্বিক সংকটের শুরু থেকে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত না করে, স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে যেন কাজ করি। আমরা এখন পর্যন্ত সেটাই করছি। তারা যেন পড়াশোনায় পিছিয়ে না পড়ে, এজন্য নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেছি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগে বলেছিলেন ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের টিকা দেয়া শুরু করতে। এখন তিনি বলেছেন, ১২ বছর বয়সিদেরও টিকার আওতায় আনতে। যদিও সব টিকা তাদেরকে দেয়া যায় না। যে টিকাগুলো দেয়া যায়, সেগুলো পর্যায়ক্রমে আমরা দেব।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে আমরা আবারো বসব। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত তাদের সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিল নেয়। আমরা উপাচার্যদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারা চেয়েছিলেন, অন্ততপক্ষে সব শিক্ষার্থী যদি প্রথম ডোজ টিকা নিয়ে নিতে পারে, তাহলে ভালো হয়। তাদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার তারিখ নির্ধারণ করেছিলাম অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে।

এখন তাদের সঙ্গে আবার কথা বলব। তারা যদি অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে, একই সঙ্গে খুলতে রাজি হন, খুলবেন কিংবা যদি ভিন্ন কোনো তারিখ নির্ধারণ করেন, সেটি তাদের বিষয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সরকারের সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই শুরু হয় প্রস্তুতির পালা। কয়েক দিন ধরে ঢিমেতালে হলেও সে প্রস্তুতি চলছিল। গতকাল শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পর তা আরো জোরালো হয়েছে। শ্রেণীকক্ষের ধুলোময়লা ঝেড়েমুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে। আঙিনায় ঘাসের জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করা হচ্ছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিউনরমাল পরিস্থিতিতে পাঠদানের পরিকল্পনা সাজাতে নিজেদের মধ্যে বৈঠক সেরে নিচ্ছে। শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও স্কুল-কলেজ পরিদর্শন করে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পৌঁছে দিচ্ছেন এবং সে নির্দেশনা অনুযায়ী সবকিছু চলছে কিনা, তা দেখভাল করছেন।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৬ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক সভায় পরিকল্পনা করা হয়েছিল, টিকা দেয়া সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগামী ১৫ অক্টোবরের পর থেকে খুলতে পারবে।

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, ১৫ অক্টোবরের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেটি আলোচনা সাপেক্ষে পরিবর্তন হতে পারে। অর্থাৎ এগিয়ে আসতে পারে। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা বিষয়ে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয়।

২৬ আগস্টের ওই সভায় উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায় কিনা, সে বিষয়ে করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শ চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠকে বসে কারিগরি কমিটি। সেখানেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পক্ষ মত উঠে আসে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno