আজ- ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ মঙ্গলবার  রাত ১০:৪৪

স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগে সহকারী পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে কমান্ড্যান্টের স্টাফ সহকারী পুলিশ সুপার রুবেল হকের বিরুদ্ধে মধ্যযুগীয় কায়দায় স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

থানায় মামলা না নেওয়ায় রুবেল হকসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছেন নির্যাতনের শিকার সায়মা সুলতানা সিমি। অভিযুক্ত রুবেল হক চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার তেররশিয়া গ্রামের জারজিস আলী মধুর ছেলে।


মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩১ মে নওগাঁ জেলার ধামইরহাট থানার চকযাদু গ্রামের আফজাল হোসেনের মেয়ে সায়মা সুলতানা সিমির সাথে সহকারী পুলিশ সুপার রুবেল হকের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে রুবেল যৌতুকের জন্য বিভিন্ন সময় তার স্ত্রীর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। এক পর্যায়ে রুবেল হক ও তার পরিবার সায়মা সুলতানা সিমিকে তার বাবার বাড়ি থেকে ২০ লাখ টাকা এনে দিতে বলে। এর আগে সিমির পরিবার বিয়ের সময় ১০ লাখ নগদ টাকা ও ১২ ভরি স্বর্ণ রুবেলকে দেয়।

এরপরেও রুবেল ও তার পরিবার সিমির উপর অত্যাচার ও নির্যাতন অব্যাহত রাখেন। নারায়নগঞ্জ থাকাকালীন সময়ে ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট শারীরিকভাবে ব্যাপক নির্যাতন করেন রুবেল। এ ঘটনায় সিমিকে নারায়নগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়। তখন বিষয়টি নারায়নগঞ্জের পুলিশ সুপারকেও ঘটনাটি সিমি জানান।

অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে রুবেল তার স্ত্রী সিমিকে আরও মারধর করেন। সিমি ঢাকায় বসবাসরত তার বোনের বাসায় গেলে সেখানে গিয়েও রুবেল তাকে মারধর করেন। এ ঘটনায় গত বছরের ৩১ অক্টোবর সিমি রাজধানীর পল্টন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এর কিছুদিন পর রুবেল টাঙ্গাইলের মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে বদলী হয়ে আসেন। মহেড়া অফির্সাস কোয়ার্টারে থাকাকালে চলতি বছরের ১ মে সামান্য কথা কাটাকাটি জের ধরে ব্যাপক মারধর করেন। তিনি কাউকে যাতে দেখাতে না পারেন সেজন্য শরীরের বিভিন্ন গোপন অংশে মারধর করেন।


বেধরক মারপিট করায় সিমির হাত ভেঙে যায়। এ ঘটনায় সিমি পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চাইলে রুবেল নিষেধ করেন। পরে তিনি টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। রুবেলকে ডিভোর্স (স্বেচ্ছায় তালাক) দিয়ে চলে না যাওয়ায় দিনদিন পাশবিক নির্যাতনের মাত্রা বাড়াতে থাকে রুবেল।


মহেড়া অফির্সাস কোয়ার্টারে রুবেলের বাবা, মা ও তার বোন থাকতেন। তারাও রুবেলের সাথে সিমিকে মারধর করতেন। তাদের নির্যাতনে মারাত্মক আহত হয়ে গত ৯ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিমি চিকিৎসা নেন। এর আগে গত ৩ জুলাই রুবেলের নির্মম নির্যাতনে শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়ে ৯৯৯ কল করেন।

পরে মির্জাপুর থানা থেকে উপ-পরিদর্শক মোশারফ হোসেন গিয়ে ঘটনা তদন্ত করেন। এসব ঘটনা তিনি মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্টকে জানান। তার কাছে থেকে কোন সুবিচার না পেয়ে সিমি গত ৬ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সহকারী পুলিশ সুপার রুবেল হক, তার বাবা জারজিস আলী মধু, মা নাসিমা বেগম ও বোন নাসরিন খাতুনের নামে মামলা দায়ের করেন।


নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ সায়মা সুলতানা সিমি জানান, রুবেল প্রতারণা করে তাকে বিয়ে করেছেন। তিনি এর আগেও একাধিক বিয়ে করেছেন। রুবেল পরকিয়ায় আসক্ত। তার সামনেই রুবেল অন্য মেয়ের সাথে চ্যাটিং করে। বাঁধা দিতে গেলেই মারধর করে। ডির্ভোস দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত মারধর করেন এবং নিজে থেকে চলে না গেলে তাকে মেরে ফেলা হবে বলে ঘোষণা দেয় রুবেল। তিনি জানান, রুবেল ও তার প্রেমিকা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে- যাতে তারা বিয়ে করতে পারে। রুবেল দম্ভ করে বলেন- আমি পুলিশ অফিসার। আমার কিছুই হবে না। এ ঘটনায় তিনি গত ১ সেপ্টেম্বর মির্জাপুর থানায় মামলা করতে যান। ওসি মামলা নিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। পরে আদালতে মামলা দায়ের করেন। তার উপর নির্যাতন ও অত্যাচারের সুষ্ঠ বিচার চান তিনি।


মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম জানান, সায়মা সুলতানা সিমি নামে এক নারী একটি অভিযোগপত্র নিয়ে এসেছিলেন। ঘটনাটি যেহেতু দাম্পত্য কলহের তাই তিনি টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপারকে অবগত করেন। তাকে মামলা গ্রহণের জন্য নিষেধ করা হয়নি- আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের জন্য বলা হয়েছিল।


সায়মা সুলতানা সিমির আইনজীবী মইদুল হোসেন শিশির জানান, হলফনামায় স্বাক্ষর করে সিমি মামলা দায়ের করেছেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শুনানী শেষে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।


এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, থানায় মামলা নেওয়ার আগেই আদালতের মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে ৮ সেপ্টেম্বর ঘরোয়া আলোচনায় বসার তারিখ ছিল কিন্তু সিমি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৬ তারিখ মামলা দায়ের করেছেন। এ কারণে থানায় মামলা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno