আজ- শুক্রবার | ১৪ নভেম্বর, ২০২৫
২৯ কার্তিক, ১৪৩২ | সকাল ৭:৩৩
১৪ নভেম্বর, ২০২৫
২৯ কার্তিক, ১৪৩২
১৪ নভেম্বর, ২০২৫, ২৯ কার্তিক, ১৪৩২

টাঙ্গাইলের চার উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি

:: পানি বেড়ে বিপৎসীমার উপরে :: নিম্নাঞ্চল প্লাবিত :: তিন উপজেলার ভাঙন

বুলবুল মল্লিক:

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে টাঙ্গাইলের সবগুলো নদীর পানি বেড়ে শুক্রবার(৫ জুলাই) সকালে চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। জেলার যমুনা ও ঝিনাই নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২০ ও ৭৮ সেণ্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে তিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।


টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় শুক্রবার সকাল ৯টায় যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েণ্টে বিপৎসীমার ২০ সেণ্টিমিটার এবং ঝিনাই নদীর(নিউ ধলেশ্বরী) পানি জোকারচর পয়েণ্টে বিপৎসীমার ৭৮ সেণ্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েণ্টে ৪১ সেণ্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২১ সেণ্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইভাবে ফটিকজানি নদীর পানি নলছোপা পয়েণ্টে ৩০ সেণ্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১.৭১ মিটার, বংশাই নদীর পানি কাউলজানী পয়েণ্টে ১০ সেণ্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২.৩৯ মিটার, মির্জাপুর পয়েণ্টে ১৩ সেণ্টিমিটার বেড়ে ১.০৫ মিটার এবং মধুপুর পয়েণ্টে ২৫ সেণ্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪.২৯ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।


জেলার অভ্যন্তরীণ নদীগুলোর পানি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূঞাপুর, গোপালপুর, কালিহাতী ও সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া ভূঞাপুর, কালিহাতী ও সদর উপজেলার কয়েকটি এলাকায় নদীভাঙনে ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। লোকালয়ে পানি ওঠায় সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছেন। একই সঙ্গে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের মধ্যে সাপের আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে বেশি আতঙ্ক রয়েছে।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দিনগত রাতে ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী বাজার, অর্জুণা বাজার, গোপালপুর উপজেলার সোনামুই বাজার ও কালিহাতীর আলিপুর ও বেরীপটল বাজারে পানি ঢুকে পড়েছে।

ভূঞাপুর উপজেলার কষ্টাপাড়া, অর্জুণা, পাটিতাপাড়া, চিতুলিয়া; গোপালপুর উপজেলার চরভরুয়া, বীরভরুয়া, সোনামুই, চাতুটিয়া; কালিহাতী উপজেলার আলিপুর, বেরীপটল, ভৈরববাড়ী গ্রামে যমুনার পানি ঢুকে পড়েছে। কালিহাতী উপজেলার সল্লা, হাতিয়া, আনালিয়াবাড়ী, দশকিয়ার একাংশে নিউ ধলেশ্বরী নদীর পানি ঢুকেছে।


নদীতে পানি বেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করায় জেলার চার উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। জেলার পাঁচটি বাজারে পানি ওঠায় ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় পড়েছেন। কালিহাতী উপজেলার দুর্গাপুর-বেরীপটল সড়কের কুবুদ্ধির মোড় এলাকায় পাকা সড়ক ভেঙে পানি ঢুকছে।

দুর্গাপুরের রামদেবপুর উত্তরপাড়া হালিম মন্ডলের বাড়ি থেকে দক্ষিণপাড়া সোলেমান সিকদারের বাড়ি পর্যন্ত কাঁচা সড়কের চার স্থানে ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া, কাতুলী ও মাহমুদনগর এলাকায় যমুনা নদীর পানি ঢুকে পড়েছে।


বন্যা কবলিত বাজারগুলোর ব্যবসায়ীরা জানান, শুক্রবার সকালে বাজারগুলোর কোনো কোনো অংশে পানি ঢুকে। পরে বাজারগুলোর একাধিক সড়কে পানি ঢুকে পড়ে। নদীর পানি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার নতুন নতুন গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পরেছে। প্রবল স্রোতে নদীর পানি এসব এলাকার বাড়ি-ঘর ও ফসলী জমিতে প্রবেশ করছে। ফলে ওইসব এলাকার লোকজন বিপাকে পড়েছেন। পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার ভূঞাপুর, কালিহাতী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।


টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে যমুনা, ঝিনাই, ধলেশ্বরীসহ জেলার সবকটি নদীর পানি বেড়েছে। আরও কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।


তিনি জানান, নদী ভাঙন এলাকায় আপৎকালীন(জরুরি) পরিষেবা হিসেবে জিওব্যাগ ডাম্পিং করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেখানেই ভাঙন দেখা দিচ্ছে সেখানেই আপৎকালীন পরিষেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।


টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম জানান, উজানের পানি নেমে আসায় ভাটিতে ধীরে ধীরে পানি বাড়ছে। ভূঞাপুরের অর্জুণা ইউনিয়নের কিছু ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী নিকরাইল ও গাবসারা ইউনিয়নেও পানি ঢুকে পড়তে পারে। ক্রমাগত পানি বৃদ্ধি পেলে আরও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হতে পারে।

বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়