আজ- বুধবার | ২৬ মার্চ, ২০২৫
১২ চৈত্র, ১৪৩১ | সন্ধ্যা ৬:০২
২৬ মার্চ, ২০২৫
১২ চৈত্র, ১৪৩১
২৬ মার্চ, ২০২৫, ১২ চৈত্র, ১৪৩১

অপরিচিত কাউকে দেখলেই কেঁদে ওঠছে শিশুটি

দৃষ্টি নিউজ:

image-sটাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা চাঁনপুর গ্রামের হতদরিদ্র এক পরিবারের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ঘটনার পর অপরিচিত কাউকে দেখলেই ভয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠছে শিশুটি।
জানা যায়, তৃতীয় শ্রেণির প্রতিবন্ধী ওই ছাত্রীর ধর্ষণের বিচার হিসেবে ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে রায় দিয়েছেন স্থানীয় সমাজপতিরা। গত ২৪ সেপ্টেম্বর স্থানীয় হারুন মেকার (৫০) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওই প্রতিবন্ধী ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় প্রভাবশালীদের চাপের মুখে আইনের আশ্রয় নিতে পারেনি অসহায় পরিবার।
স্থানীয়রা জানায়, সমাজপতিদের চাপের মুখে প্রথম দিকে পরিবারটি ধর্ষণের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখলেও পরে ধর্ষণের ঘটনা আর চাপা না থাকায় গত ১৮ অক্টোবর লোক দেখানো একটি গ্রাম্য সালিশ হয়। সালিশে ধর্ষককে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। টাকা পরিশোধে টালবাহানা চললে বিষয়টি আরো আলোচিত হয়। পরে গত ৫ নভেম্বর মেয়েটির পালক বাবাকে ৪০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দিয়ে সাদা কাগজে স্বার নেয় সমাজপতিরা।
ধর্ষিতা শিশুটির মা জানান, ঘটনার পর থেকে অপরিচিত কোনো পুরুষ দেখলেই ভয়ে কেঁদে ওঠছে শিশুটি। বাড়ির অদূরে একটি মাঠ পাড়ি দিয়ে পাশের সাহাপাড়া মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত সে। মানসিক  প্রতিবন্ধী হওয়ায় তৃতীয় শ্রেণির গন্ডি পেরোতে পারেনি শিশুটি। কিন্তু থেমে থাকেনি তার স্কুলে যাওয়া-আসা। অন্যদের তুলনায় বয়সে একটু বড় হলেও স্কুলের সহপাঠী ছোট ছোট শিশুদের সাথেই খেলা করতো। ওই ঘটনার পর থেকে স্কুলে আর যাচ্ছেনা। তবে, স্কুলে না গেলেও অজানা কারণে প্রতিদিনের হাজিরা খাতায় তার উপস্থিতি রয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা ও স্কুলে উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোনো কথাই বলছেন না স্কুল কর্তৃৃপ।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হালিমুজ্জামান তালুকদার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় এ বিষয় ও ঘটনা সম্পর্কে সবাই অবগত হলেও ভয়ে মুখ খুলছেন না কেউ।
ঘটনার বিষয়ে মেয়েটির মা আরো বলেন, মেয়েটি মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় নানাভাবে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। ঘটনার দিন তার বাবা বাড়ি ছিল না। এ খবর জেনে বাড়িতে আসে পূর্বপরিচিত কামাা গ্রামের হারুন মেকার। মেয়েটিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে চান তিনি। প্রথমে তিনি রাজি হননি, পরে মেয়েটির কোন তি হবে না এমন আশ্বাস দিলে স্কুল থেকে এনে তার হাতে তুলে দেন শিশুটিকে।
ডাক্তারের কাছে না নিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে যান শিশুটিকে। বাড়িতে নিয়ে মুখে গামছা বেঁধে অত্যাচার করেন। পরে মেয়েটি বাড়িতে এসে পেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলে শিশুটি তাকে সব খুলে বলে।
এ বিষয়ে মেয়েটির বাবা বলেন, তিনি বাড়ি ছিলেন না। বাড়ি এসে সব শুনে গ্রামের লোকজনদের জানান। আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে তারা বিচারের আশ্বাস দেয়। পরে সালিশে বসে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সবাই মেনে নিতে বললে তিনি বাধ্য হয়ে মেনে নেন।
এ প্রসঙ্গে মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান হালিমুজ্জামান তালুকদার জানান, তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছ থেকে বিষয়টি শুনেছেন। এ নিয়ে ঝামেলা বাধলে ইউপি সদস্য মোনায়েমের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকায় সমাধান করা হয়।
গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল জলিল বলেন, আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। এর মধ্যেই যতটুকু জেনেছি তারা আমাদের অগোচোরে ও ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে ইউপি সদস্য মোনায়ের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে আপোস করেছে। তিনি আরো বলেন, মেয়েটির পরিবার নিরীহ ও হারুন মেকার প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তারা আইনের আশ্রয় নিতে পারেনি। তদন্ত করে সব রকমের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুমূর রহমান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে এইমাত্র অবগত হলাম। ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গোপালপুর থানা পুলিশের ওসি’র মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়