প্রথম পাতা / টপ সংবাদ /
আজ বাঙালির ঐতিহাসিক ৭ মার্চ
By দৃষ্টি টিভি on ৭ মার্চ, ২০১৭ ২:৫১ পূর্বাহ্ন / no comments
দৃষ্টি নিউজ:
বাঙালির ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ(মঙ্গলবার)। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা অবিস্মরণীয় গৌরবের এক অনন্য দিন। সুদীর্ঘকালের আপসহীন আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক উত্তাল জনসমুদ্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বঙ্গবন্ধুর এই তেজোদীপ্ত ঘোষণাই ছিল প্রকৃতপক্ষে আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের শত নিপীড়ন উপেক্ষা করে বীর বাঙালি অস্ত্র ধারণের পূর্বে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে এই দিনই স্বাধীনতার ডাক দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এই ভাষণ থেকেই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।
১৯৬৬ সালের ৬-দফা, ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ‘৭০-এর নির্বাচনের পর যখন বাংলার জনগণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনা শুনতে অধীর আগ্রহে বসেছিল, ঠিক তখনই এই ভাষণে বাংলাদেশকে পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত করার জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেদিন উত্তাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাংলার মুক্তিকামী জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু-আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।’ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে ভাষণে বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, আরো রক্ত দেবো। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
ফিরে দেখা সেই দিন:
সেদিন সকাল থেকেই চারদিক থেকে মানুষের ঢল নামে রেসকোর্স ময়দানে। ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ সস্নোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ময়দান। বঙ্গবন্ধু জনসভায় আসতে একটু বিলম্ব করেন। কারণ স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া হবে কি হবে না এ নিয়ে তখনো রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলছিল নেতৃবৃন্দের মধ্যে। বেলা ঠিক সোয়া ৩টায় সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি ও মুজিব কোট পরিহিত বঙ্গবন্ধু যখন মঞ্চে ওঠেন তখন বাংলার বীর জনতা বজ্রনির্ঘোষে করতালি ও স্লোগানের মধ্যে তাকে স্বাগত জানান।
এরপর বঙ্গবন্ধু ২২ মিনিট তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম এবং ঐতিহাসিক ভাষণ শুরু করেন এভাবে, ‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আজ বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ অধিকার চায়।’ এরপর গত কয়েক দিনের ঘটনাবলী, শাসকশ্রেণির সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়া এবং মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় বাংলাদেশিদের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি ভাষণে বলেন, ‘এরপর যদি একটি গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়-তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। সৈন্যরা তোমরা ব্যারাকে থাক তোমাদের কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু আর তোমরা গুলি করার চেষ্টা কর না। সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।’
আজ থেকে ৪৭ বছর আগে অগ্নিঝরা একাত্তরের এই দিনে বঙ্গবন্ধুই ছিলেন একমাত্র বক্তা। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পূর্বে আসম আব্দুর রব, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ মঞ্চ থেকে মাইকে নানা ধরনের সস্নোগান দিয়ে জনতাকে উজ্জীবিত রাখেন।
বঙ্গবন্ধু যখন এ ভাষণ দিচ্ছিলেন ঠিক ওই দিনই ঢাকায় এসে পৌঁছান জেনারেল টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলী। আলোচনার অন্তরালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সামরিক প্রস্তুতির এই পর্যায়ে এ ভাষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করে। সেদিন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেশের জনগণকে দারুণভাবে আন্দোলিত করে। এই একটি ভাষণেই নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করেন বঙ্গবন্ধু। তাই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে।
বিশ্বের মধ্যে এই একটি মাত্র ভাষণ, যা যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেজে চলেছে কিন্তু ভাষণটির আবেদন এতটুকু কমেনি। বরং যখনই প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই ঐতিহাসিক ভাষণটি শ্রবণ করে, তখনই তাদের মানসপটে ভেসে ওঠে স্বাধীনতার গৌরবগাথা আন্দোলন-সংগ্রামের মুহূর্তগুলো, আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে দেশপ্রেমের আদর্শে। তাই নানা গবেষণার পর বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণটি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
বাণী: দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যার অনন্যসাধারণ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। এ কারণে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এ ভাষণ আমাদের প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ‘ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বে বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলার গণমানুষের প্রাণের দাবি ধ্বনিত হয়। গোটা জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধের দিকে ধাবিত হয়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ভাষণ। অসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অমিত শক্তির উৎস ছিল এ ভাষণ। যার আবেদন আজও অটুট রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, তেমনি আরেকবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে রূপকল্প-২০২১ এবং রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করব। ঐতিহাসিক ৭ মার্চে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’
কর্মসূচি: ৭ মার্চ উপলক্ষে বিভিন্ন দল ও সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ভোর সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন এবং বিকাল ৩টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
মন্তব্য করুন
সর্বশেষ আপডেট
-
ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়ার তালিকা
-
সালমান খানের ডাবল ধামাকা
-
দেশের ১৭ অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস
-
কালিহাতীতে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৪ আহত ২৩
-
টাঙ্গাইলের বনফুল টাওয়ারে চাঁদাবাজির অভিযোগে উন্নয়ন কাজ বন্ধ!
-
মহানবী(সা.) কে কটূক্তিকারীদের ফাঁসির দাবিতে টাঙ্গাইলে বিক্ষোভ-সমাবেশ
-
মির্জাপুরে মাইক্রোবাস সহ দুই ডাকাত গ্রেপ্তার
-
সখীপুরে ট্রাক চাপায় নিরাপত্তাকর্মী নিহত
-
টাঙ্গাইলে সার্ভেয়ারদের কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট