দৃষ্টি নিউজ:
টাঙ্গাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার চার্জ গঠনের দিন ধার্য ছিল বুধবার(৯ নভেম্বর)। কিন্তু এ তারিখ পরিবর্তন করে আগামী বছরের ১০ জানুয়ারি চার্জ গঠনের নয়া তারিখ ধার্য করা হয়েছে, একই সাথে জামিনের আবেদনও নামঞ্জুর করা হয়েছে। বুধবার(৯ নভেম্বর) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়া এ আদেশ প্রদান করেন। এ নিয়ে চার বার তাঁর জামিন নামঞ্জুর করা হলো।
মামলার রাষ্ট্রপরে আইনজীবী মনিরুল ইসলাম খান জানান, মামলার প্রধান আসামি টাঙ্গাইল-৩(ঘাটাইল) আসনের এমপি আমানুর রহমান খান রানা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও অন্য ৭ আসামি পলাতক থাকায় চার্জ গঠনের দিন পেছানো হয়েছে।
এদিকে, আদালতে মামলার শুনানীকালে আদালত চত্তরে এমপি রানার ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে জেলা ছাত্রলীগ। জেলা ছাত্রলীগ নেতা মনির সিকদারের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি আদালত চত্তর ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
অপরদিকে, এ মামলার প্রধান আসামী এমপি আমানুর রহমান খান রানা কাশিমপুর কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মঙ্গলবার(৭ ভেম্বর) বিকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়।
এমপি’র পিএস হাসিবুল ইসলাম আসিফ মোবাইল ফোনে জানান, আগে থেকেই সাংসদ আমানুর রহমান খান রানা অসুস্থ। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজ উদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। তিনি হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি হৃদযন্ত্র ও পাইলস রোগে আক্রান্ত, তাঁর সুচিকিৎসা দরকার।
প্রকাশ, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ টাঙ্গাইলে কলেজপাড়া এলাকায় তাঁর বাসার সামনে পাওয়া যায়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। প্রথমে থানার পুলিশ ও পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মামলার তদন্ত শুরু করে। ২০১৪ সালের আগস্টে এই মামলার আসামি আনিসুল ইসলাম ওরফে রাজা ও মোহাম্মদ আলী গ্রেপ্তার হন। আদালতে তাঁদের স্বীকারোক্তিতে সাংসদ আমানুর ও তাঁর তিন ভাইয়ের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। এরপর থেকে সাংসদ ও তাঁর ভাইয়েরা আতœগোপনে চলে যান।
এ বছর ৩ ফেব্রুয়ারি সাংসদ আমানুর, তাঁর তিন ভাইসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। গত ৬ এপ্রিল আদালত মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
আমানুর রহমান খান রানা টাঙ্গাইল-৩ আসনে (ঘাটাইল) আওয়ামী লীগের সাংসদ। তাঁর তিন ভাই হলেন, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান (মুক্তি), ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান (কাকন) ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সানিয়াত খান (বাপ্পা)।
বিগত ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ মতায় আসার পর এই খান পরিবার টাঙ্গাইল শহরে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। তাদের দাপটের মুখে এলাকায় ও দলে কেউই মুখ খুলতে সাহস পেতেন না। ফলে চার ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অর্ধশত মামলা হলেও বাদী ও সাী আদালতে উপস্থিত হননি। এ কারণে অনেক মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আবার কিছু মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকার প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে।