দৃষ্টি নিউজ:
বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পুংলী নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে চরম হুমকির মুখে পড়েছে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক ও রেল সেতু। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সড়ক ও রেল সেতুর দুই পাশ থেকে মাটি সড়ে গিয়ে বড় কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া অবৈধ বালু উত্তোলনে আশপাশের এলাকায় বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ভাঙনের কবলে পড়ে দেড় শতাধিক পরিবার ভিটেবাড়ি ছাড়া হয়। তারপরও স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় বালু খেকোরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পুংলী নদীর ওপর কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত সড়ক ও রেল সেতুর অদূরে বিভিন্ন ধরনের ২৫ থেকে ৩০টি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে পুংলী নদীর ওপর পাশাপাশি নির্মিত সড়ক ও রেল সেতু দুইটি হুমকির মুখে রয়েছে। দিনের পর দিন এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে যে কোনো সময় নদীর ওপর সেতু দুটি দেবে যেতে পারে।
এলাকাবাসী জানায়, সরকার দলীয় প্রভাবশালী টাঙ্গাইল শহরের কার্জন ও শাকিল, এলেঙ্গা পৌরসভার পৌলী গ্রামের শফিক, নূর মোহাম্মদ, সুশান্ত ঘোষ, নাজিম, শুকু ঘোষ, মান্নান ও সুজন, রাজাবাড়ী গ্রামের হাসমত আলী নেতা, মহেলা গ্রামের হাবিল, তোফাজ্জল, মনির ও কাদের সহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তেলন ও বিক্রি করছেন। বালু খেকোরা পুংলী নদী থেকে উত্তোলন করা কোটি কোটি টাকার বালু বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। এর একটি ভাগ যাচ্ছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনে।
এদিকে, অতিরিক্ত বালুভর্তি ট্রাক যাতায়াতের কারণে পৌলী ও মহেলা গ্রামের একমাত্র পাকা রাস্তাটি ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে সম্প্রতি দু’বার তিতাস গ্যাসের মূল পাইপলাইন ভেসে উঠে টাঙ্গাইল, গাজিপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে সাধারণ জনগণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় । ওই সময় নদীতে নৌচলাচল ও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরে পাইপ লাইন মেরামত করা হলে আবার অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করে প্রভাবশালীরা। গ্যাসপাইপ তিগ্রস্ত হয়ে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, লোক দেখানোর জন্য মাঝেমধ্যে নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালানো হলেও ভ্রাম্যমান আদালত চলে যাওয়ার পর পরই আবার শুরু হয় বালু উত্তোলনের মহোৎব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা, সরকারদলীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই পুংলী নদী থেকে চলছে বালু উত্তোলন। আর এ কারণে প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয় না। বরং প্রতিবাদ করতে গিয়ে আরও নাজেহাল হতে হয় বালু ব্যবসায়ীদের হাতে।
মহেলা গ্রামের বালু ব্যবসায়ী কাদের ও মনির জানান, তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি নদীতে চলে গেছে। সেখান থেকেই তারা বালু উত্তোলন করে বিক্রি করেন। একটি ড্রেজার মেশিন চালালে নূন্যতম ৪জন লোকের কর্মসংস্থান হয় বলে জানান তারা।
অন্য কয়েক বালু ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে জানান, বালু উত্তোলনে তাদেরকে প্রশাসন কোন অনুমতি দেয়নি সত্য। কিন্তু স্থানীয় সিভিল ও পুলিশ প্রশানকে ম্যানেজ করেই তারা ব্যবসা চালাচ্ছেন, রাজনৈতিক নেতা ও মসজিদ-মাদ্রাসায়ও তারা টাকা দিয়ে থাকেন।
কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু নাসার উদ্দিন জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু অভিযানের পরই আবার বালু উত্তোলন শুরু করা হয়। তিনি জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছেন এবং অচিরেই এ বিষয়ে বড় ধরণের অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাজাহান সিরাজ বলেন, পুংলী নদী থেকে মাটি কাটার জন্য আমরা কাউকে অনুমতি দেইনি। যারা মাটি কেটে বিক্রি করছে তারা তা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে করছে।