আজ- বৃহস্পতিবার | ৩ জুলাই, ২০২৫
১৯ আষাঢ়, ১৪৩২ | রাত ১১:৩২
৩ জুলাই, ২০২৫
১৯ আষাঢ়, ১৪৩২
৩ জুলাই, ২০২৫, ১৯ আষাঢ়, ১৪৩২

গাছ বোঝাই কাঁঠাল মুচি দেখে গোঁফে তেল দিচ্ছে কৃষক!

টাঙ্গাইলে জাতীয় ফল কাঁঠালের ফলন বাড়ছে

বুলবুল মল্লিক:

‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক’ ঋতুরাজ বসন্তের হওয়া লেগেছে সর্বত্র। মাঘ পেরিয়ে বসন্তে প্রকৃতির রূপ সজ্জায়ও এসেছে পরিবর্তন। পরিবেশ ও প্রকৃতি অনিন্দ্য সৌন্দর্য ধারণ করেছে। টাঙ্গাইলের জনজীবনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফলদবৃক্ষেও লেগেছে তার ছোঁয়া। বাদ যায়নি জাতীয় ফল কাঁঠালও।

টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন কাঁঠাল বাগান, রাস্তার আশ-পাশ, বাড়ির আঙিনা ও পরিত্যক্ত জায়গায় রোপন করা কাঁঠাল গাছে গোড়া থেকে মগডাল পর্যন্ত থোকা থোকা মুচি ধরেছে। গাছের শিশু কাঁঠাল বা কাঁঠালের প্রাথমিক অবস্থা বা ফুলকে গ্রামীণ ভাষায় মুচি বা মোচা বলা হয়। এসব কাঁঠাল মুচির মৌ মৌ সুভাস চারপাশ সুগন্ধে ভরিয়ে তুলছে। মৌ-মাছিরা মনের আনন্দে গুণগুণিয়ে গান গেয়ে মুচি থেকে মধু আহরণ করছে।


সরেজমিনে মধুপুর, ঘাটাইল, সখীপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গত বছরের মত চলতি মৌসুমেও প্রতিটি এলাকার কাঁঠাল গাছে প্রচুর মুচি বা ফুল ধরেছে। কাঁঠাল বাগান, বসতবাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত স্থান ও রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাঁঠাল গাছে প্রচুর মুচি শোভা পাচ্ছে। ছোট-বড় প্রায় প্রতিটি কাঁঠাল গাছের গোড়া থেকে মগডাল পর্যন্ত থোকা থোকা কাঁঠাল মুচি ঝুলছে। ওইসব মুচি বা ফুল থেকে মৌ মৌ সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছে। মৌ-মাছিরা মনের আনন্দে গুণ গুণ করে গানের সাথে মুচি থেকে মধু সংগ্রহ করছে।


কাঁঠাল বাগানের মালিক আঞ্জুমান মাসুম, রাশিদুল ইসলাম, মো. মুছা মিয়া সহ অনেকেই জানান, জাতীয় ফল কাঁঠালের বাগান করে তারা প্রতি বছরই লাভবান হচ্ছেন। কাঁঠাল গাছ সাধারণত মূল্যবান কাঠ জাতীয় গাছ। এর রসালো ফল নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর। কাঁঠাল গাছ থেকে প্রতি বছর আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। এটা সম্পূর্ণ লাভজনক গাছ। এ ফলের রোয়া, বীচি ও ছাল বা খোলস সবই মানুষের ব্যবহার যোগ্য সম্ভবত: এজন্যই কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। একটি কাঁঠালগাছ রোপনের ৩-৪ বছর পর থেকে ফল দেওয়া শুরু করে। প্রতি বছর ফল দিয়ে এ গাছ শতবর্ষী হয়েও বেঁচে থাকে। এ গাছের কাঠ অত্যন্ত মূল্যবান। কাঁঠাল গাছের আসবাবপত্র সর্বজনের পছন্দ।


তারা জানান, কাঁঠাল গাছ বড় হলে তা কাঠ হিসেবে বিক্রি করা হয় এবং ওই স্থানে নতুন করে চারা রোপন করা হয়ে থাকে।


মধুপুর উপজেলার মহর আলী, আবুল কালাম, আব্দুছ ছবুর, কামাল হোসেন সহ অনেকেই জানান, বাড়ির আঙিনা ও লাল মাটির জমিতে রোপন করা কাঁঠাল গাছগুলোতে গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে অনেক বেশি মুচি মুচি ধরেছে। প্রতিটি গাছে ১০০-১২০টি বা আরও অধিক হবে মুচি দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে এ বছর প্রতিটি গাছে শতাধিক কাঁঠাল থাকবে বলে তারা ধারণা করছেন। কাঁঠাল মুচি বা ফুল পরিপক্ক বা পূর্ণাঙ্গ কাঁঠালে রূপ নিতে আরও ৩৫-৪৫ দিন সময় লাগতে পারে। এরপরই কাঁঠালগুলো বাজারে উঠানো যাবে।


বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদুল হক টুকু জানান, ১৮-২০ বছর আগে রাস্তার পাশে ও বাড়ির আশ-পাশে তিনি ২০-২২টি কাঁঠাল চারা রোপন করেছিলেন। অন্য বছরের তুলনায় এ মৌসুমে গাছগুলোতে সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল মুচি ধরেছে। প্রতিদিন সকালে তিনি গাছে পানি দিচ্ছেন। কাঁঠাল গাছে সাধারণত রোগ-বালাই কম হয়। তারপরও রো-বালাইয়ের আশঙ্কায় বালাইনাশক স্প্রে করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গাছে আসা মুচি বা শিশু কাঁঠালের তিনভাগের দুই ভাগ মুচির কাঁঠাল পরিপক্ক হতে পারে।


এদিকে, টাঙ্গাইলে দিন দিন জাতীয় ফল কাঁঠাল গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে এলাকার কাঁঠাল বাগানের মালিক ও লাল মাটি এলাকার প্রতিটি কৃষক বাড়ির আঙিনায় কাঁঠাল বা কাঠ জাতীয় গাছের চারা রোপনে ঝুঁকছে। সখীপুরের নলুয়া গ্রামের নার্সারী মালিক হাসমত আলী জানান, কয়েক বছর কাঁঠাল গাছের চারা বিক্রি হয়নি। এ কারণে নার্সারীতে কাঁঠালের চারা উৎপাদন কমিয়ে দেন তিনি।

গত বছর হঠাৎ করে কাঁঠাল গাছের চারার চাহিদা বেড়ে গেছে। এজন্য এ বছর তিনি অধিক পরিমাণে কাঁঠাল চারা উৎপাদন করেছেন। বর্ষা মৌসুমে কাঁঠালের চারা অধিক বিক্রি হবে বলে আশাপ্রকাশ করছেন। তবে তিনি মনে করেন- কৃষি বিভাগের তৎপরতা বৃদ্ধি ও কৃষকদের উৎসাহিত করলে জাতীয় ফলের গাছ রোপনে মানুষ আগ্রহ পাবে।


টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. দুলাল উদ্দিন জানান, জেলার ১২টি উপজেলায় চার হাজার ৮৮ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল গাছ রয়েছে। এরমধ্যে মধুপুর, ঘাটাইল, সখীপুর ও ধনবাড়ী উপজেলায় বেশি কাঁঠাল উৎপাদিত হয়ে থাকে। কৃষি বিভাগ চলতি মৌসুমে জেলায় কাঁঠাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৭৪ হাজার ৯৮৪ মেট্রিক টন। কাঁঠালের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়