দৃষ্টি বিনোদন:
দেশীয় চলচ্চিত্রে দূত্যি ছড়ানো গুণী অভিনেতা প্রবীর মিত্র ওরফে হাসান ইমাম মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সংকটাপন্ন অবস্থায় তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। রোববার(৫ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন অভিনেতা মিশা সওদাগর। প্রবীর মিত্র ছিলেন ধর্মান্তরিত মুসলিম। তার পরিবর্তিত নাম ছিল হাসান ইমাম।
তিনি জানান, রোববার রাতে গোসল শেষে ফ্রিজার গাড়িতে প্রবীর মিত্রের লাশ ধানমন্ডির বাসায় রাখা হয়। সোমবার(৬ জানুয়ারি) জোহরের নামাজের পর এফডিসিতে প্রথম জানাজা হয়। এরপর চ্যানেল আইতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
বেশ ক’বছর ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন সিনেমার দাপুটে এই অভিনেতা। শরীরে অক্সিজেন স্বল্পতাসহ বেশ কিছু কারণে গেল ২২ ডিসেম্বর এই অভিনেতাকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। নেওয়া হয় হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। গণমাধ্যমকে খবরটি জানিয়েছিলেন প্রবীর মিত্রের ছোট ছেলে সিফাত ইসলাম।
বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র পর্দায় নায়ক হিসেবে যেমন সফল হয়েছেন তেমনি সিনিয়র চরিত্রেও তিনি আলো ছড়িয়েছেন সমানভাবে। অভিনয় নৈপুণ্যে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনন্য উচ্চতায়। তার সাবলীল অভিনয়, ভরাট কণ্ঠের সংলাপ দর্শকদের হৃদয়ে নিখাদ মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়।
বরেণ্য এই ১৯৪০ সালের ১৮ আগস্ট চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকায়। পড়াশোনা করেছেন সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে। এরপর স্নাতক সম্পন্ন করেছেন জগন্নাথ কলেজ থেকে। এক সাক্ষাৎকারে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন প্রবীর মিত্র নিজেই। সেই সাক্ষাৎকারে প্রবীর মিত্রকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তো কনভার্ট হয়েই ওর মাকে (স্ত্রী) বিয়ে করেছিলাম। তখন মুসলমান হয়েছিলাম। তখন প্রয়োজন হয়েছিল মুসলমান হওয়া, এখনও সে ধর্মেই আছি।’
প্রবীর মিত্রের স্ত্রীর নাম অজন্তা। ২০০০ সালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এই দম্পতির তিন ছেলে ও এক মেয়ে। তারা হলেন- মিঠুন মিত্র, ফেরদৌস পারভীন, সিফাত ইসলাম ও সামিউল ইসলাম। ছোট ছেলে সামিউল ২০১২ সালে ৭ মে মৃত্যুবরণ করেন।
থিয়েটারে অভিনয়ের মাধ্যমে সংস্কৃতির ভুবনে আসেন প্রবীর মিত্র। ‘লালকুটি’ থিয়েটারে কাজ করেছেন অনেক দিন। এরপর পরিচালক এইচ আকবরের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন তিনি।
প্রবীর মিত্রের প্রথম সিনেমার নাম ‘জলছবি’। ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রবীর মিত্র। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘চাবুক’-এর মতো সিনেমায় তিনি ছিলেন নায়ক। এছাড়া ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমাতেও তিনি ছিলেন মূখ্য চরিত্রে।
এরপর ধীরে ধীরে প্রবীর মিত্র মনোযোগী হন চরিত্রভিত্তিক অভিনয়ে। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে- ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সীমার’, ‘তীর ভাঙা ঢেউ’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘অঙ্গার’, ‘পুত্রবধূ’, ‘নয়নের আলো’, ‘জয় পরাজয়’, ‘চাষীর মেয়ে’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘আবদার’, ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়ান’, ‘দেহরক্ষী’, ‘অনেক সাধনার পরে’, ‘জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘মাই নেম ইজ সুলতান’, ‘জিদ্দি বউ’, ‘কুসুম কুসুম প্রেম’, ‘বস নাম্বার ওয়ান’, ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ ইত্যাদি।
নান্দনিক অভিনয়ের জন্য বরাবরই প্রশংসিত প্রবীর মিত্র। কিন্তু দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার পুরস্কার ভাগ্য প্রসন্ন নয়। কেবল ‘বড় ভালো লোক ছিল’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।