দৃষ্টি নিউজ, ঝিনাইদহ:
ঝিনাইদহ শহরের পল্লী বিদ্যুৎ অফিস এলাকার রাউতাইল গ্রামে রুমা খাতুন নামে এক গৃহবধূকে মারধর করে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার নেপথ্যে গৃহবধূর একাধিক যুবকের সাথে পরকীয়া বলে জানাগেছে।
সরেজমিনে গৃহবধু রুমার স্বামীর বাড়ি ঝিনাইদহ সদরের পল্লী বিদ্যুৎ অফিস এলাকার রাউতাইল গ্রামে গিয়ে জানা যায়, প্রায় ৮ বছর আগে সদর উপজেলার ধোপাবিলা গ্রামের নুর ইসলামের মেয়ে রুমা খাতুনের রাউতাইল গ্রামের মোজাম হোসেনের ছেলে ফিরোজ হোসেনের সাথে বিয়ে হয়। ফিরোজ হোসেনের প্রথম স্ত্রী নাজমা খাতুন নি:সন্তান হওয়ার কারণে তার পরিবার দ্বিতীয় করায়। ৭-৮ বছরের দাম্পত্য জীবনে রুমার দুইটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হলেও বিয়ের পর থেকেই শহুরে রুমা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। প্রায়ই রুমা তার বড় মেয়ে অহনাকে মারধর করে শ্বশুর বাড়ির পরিবারের তোয়াক্কা না করে বন্ধুদের সাথে মার্কেট, পার্ক সহ বিভিন্ন স্থানে রাত কাটায় বলে জানিয়েছেন অহনা।
এ ব্যাপারে রুমার শ্বশুরের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, লোক লজ্জার ভয়ে আমরা রুমাকে কিছুই বলতে পারিনা। বললে রুমা তার মস্তান বন্ধুদের নিয়ে আমার বাসায় উগ্রমেজাজে গালি গালাজ করতে থাকে। এরআগে বেশ কয়েকবার রুমা তার মস্তান বন্ধুদের নিয়ে আমার বাসায় এসে ফিরোজকে মারধোর করে অনেক হুমকি ধামকি দিয়েছে। এজন্যে আমরা মানসম্মানের ভয়ে পরিবারের সবাইই রুমার সবকিছু মেনে নিয়েছি। তিনি আরো বলেন, গ্রামবাসী রুমা ও আমাদের নিয়ে সমালোচনা করে, আবার তালাক দিলে দুটি কন্যা সন্তানকে কে দেখবে? অবশ্য দুটি সন্তান জন্মের পর থেকেই ফিরোজের প্রথম স্ত্রী নাজমা খাতুনের তত্ত্বাবধানে মানুষ হচ্ছে।
রাউতাইল গ্রামের তৈয়ব হোসেনের স্ত্রী চায়না খাতুন, সুমন আহাম্মেদের স্ত্রী শাহানাজ বেগম, মসলেম উদ্দিনের ছেলে শরিফুল ইসলাম, মিজানুর রহমানের স্ত্রী আমেনা খাতুন, কহিনুর খাতুনের স্বামী রেজাউল ইসলাম, অহেদ আলী মন্ডলের ছেলে রবিউল ইসলাম, অমেদ আলীর ছেলে রিজাউল ইসলাম সহ প্রতিবেশিরা জানায়, রুমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, স্বামী ফিরোজ সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ। তারা কখনোই রুমার সাথে ঝগড়া-ফ্যাসাদে জড়ান না। এই সরলতার সুযোগ নিয়ে গৃহবধূ রুমা প্রকাশ্যে একাধিক যুবকের সাথে পরকীয়া করে বেড়ায়।
রুমার বড় মেয়ে অহনা(৭) জানায়, তাকে ঘরের বাইরে বের করে দিয়ে তার মা নিজের ঘরের দরজা বন্ধকরে ঘণ্টার পর ঘণ্ট সোনা মিয়া সহ বিভিন্ন ছেলের সাথে মোবাইলে কথা বলেন।
গত মঙ্গলবার(১ নভেম্বর) সকালে রুমা সংসারের কাজ কর্ম ফেলে রেখে সোনা মিয়া সহ বিভিন্ন ছেলের সাথে মোবাইলে কথা বলার সময় ফিরোজ রুমার ট্যাব ও এনড্রুয়েড মোবাইল ফোন নিয়ে আটকে রাখে। এতে রুমা ক্ষিপ্ত হয়ে ছোট মেয়েকে নিয়ে তার মেঝবোন রিনার বাড়িতে গিয়ে মাথায় কেরোসিন তেল ঢেলে জামা কাপড় ছিড়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ‘হত্যা চেষ্টা’র নাটক সাজায়- যা পরে রুমার বোন সাংবাদিকদের ডেকে এনে তাদের সামনে উপস্থাপনা করে। এ বিষয়ে রুমার সাথে বারংবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি।
এদিকে, ওই সাজানো ‘হত্যা চেষ্টা’র অভিযোগে ঝিনাইদহ থানা পুলিশ মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) বিকালে গৃহবধূ রুমার স্বামী ফিরোজ হোসেন, সতীন নাজমা খাতুন, শাশুড়ি মনোয়ারা খাতুন ও এক প্রতিবেশী নারীকে আটক করে।
ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) হরেন্দ্রনাথ সরকার জানান, ঘটনাটি শোনার পর সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে ৪ জনকে আটক করা হয়। পরে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।